অর্থনীতি

কাঁচাপাট রফতানি বন্ধ ঘোষণায় হতবাক ব্যবসায়ীরা, আন্দোলনের হুঁশিয়ারি

দেশের সোনালি আশ খ্যাত কাঁচাপাট রফতানি এক মাসের জন্য বন্ধ ঘোষণার সিদ্ধান্তে হতবাক প্রাচ্যের ডান্ডিখ্যাত নারায়ণগঞ্জের রফতানিকারকরা। সরকারের আকস্মিক এ সিদ্ধান্তের কারণে কাঁচাপাট রফতানিতে ধস নামার পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জের কয়েক হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বে। ঋণে জর্জরিত হয়ে পড়বেন রফতানিকারকরা। হারাবেন রফতানি আদেশ।জানা গেছে, সোমবার দুপুরে জারি করা বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব বেবী পারভীন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এতে বলা হয়েছে, পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন-২০১০ এর সঠিক বাস্তবায়ন করতে কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে ৩ নভেম্বর থেকে এক মাস পর্যন্ত সব ধরনের কাঁচাপাট রফতানি বন্ধ রাখা হলো। জনস্বার্থে এ আদেশ জারি করা হলো। এদিকে সরকারের আকস্মিক এই সিদ্ধান্তে হতবাক এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত নারায়ণগঞ্জের রফতানিকারক ও শ্রমিকরা।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সারাদেশে অন্তত দেড় শতাধিক রফতানিকারক রয়েছেন। যার মধ্যে প্রাচ্যের ডান্ডি নারায়ণগঞ্জেই রয়েছে অন্তত ২৫ জন। এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত রয়েছে অন্তত ১০ হাজার শ্রমিক।বাংলাদেশ জুট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান আরজু রহমান ভূঁইয়া জাগো নিউজকে জানান, আমরা এ ধরনের সিদ্ধান্তে হতবাক। প্রতিটি সময়েই ক্রাইসিসের কথা বলে স্পিনিং মিল ও বিজেএমসি এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা জারি করায়। এর আগে ১৯৮৪ সালে ও বিগত সরকারের আমলে পাটমন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীর সময়ে এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা জারি করানো হয়েছিল। এর কুফল পড়েছিল কাঁচাপাট রফতানির সেক্টরে।রফতানিকারকরা ঋণগ্রস্ত হয়েছিল। যার ভর্তুকি এখন সরকারকে দিতে হচ্ছে। বর্তমানে যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে সেটা রফতানিকারকদের কারো সঙ্গেই আলোচনা না করে নেয়া হয়েছে। বর্তমানে অনেকেরই মাল শিপমেন্টের জন্য পোর্টে পড়ে রয়েছে। অনেকের এলসি প্রক্রিয়াধীন। ব্যাংক সুদ বাড়বে। রফতানিকারকরা রফতানির আদেশ হারাবে। শুধুমাত্র নারায়ণগঞ্জেই অন্তত ২৫ জন রফতানিকারক ও অন্তত ১০ হাজার শ্রমিক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সিদ্ধান্তটি প্রত্যাহারের জন্য আমরা বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি।টানা দশমবারের মতো দেশে কাঁচাপাট রফতানিতে শীর্ষস্থান ধরে রাখা নারায়ণগঞ্জের পপুলার জুট এক্সচেঞ্জের কর্মকর্তা স্বপন রায় জানান, আমরা সম্পূর্ণরূপেই ক্ষতির সম্মুখীন। বর্তমানে চোখে মুখে অন্ধকার দেখছি। বর্তমানে কাঁচাপাট রফতানির মৌসুম। অনেক মাল শিপমেন্টের অপেক্ষায় রয়েছে। এ অবস্থায় এ ধরনের সিদ্ধান্তে আমরা কি করবো সেটা বুঝে উঠতে পারছিনা।কুমিল্লা জুট ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী শহীদুল্লাহ সরকার জাগো নিউজকে জানান, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় রফতানিকারক ও ব্যবসায়ী কারো সঙ্গে আলোচনা না করেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নভেম্বর-ডিসেম্বর কাঁচাপাট রফতানিকারকদের রফতানির মৌসুম। এ সময়টাতে পাট ক্রয় থেকে প্রস্তুত ও গুদামজাত করতে হয়। এ সিদ্ধান্ত কাঁচাপাট রফতানিকারকদের উপর ভীষণ আঘাত। এতে করে অনেকে বায়ার হারাবে। মঙ্গলবার আমার একটি শিপমেন্ট ছিল। কিন্তু এখন সব কিছুই বন্ধ। ব্যাংকও তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। রফতানিকারকদের পাশাপাশি শ্রমিকরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।নারায়ণগঞ্জ পাট শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সালাম মৃধা জাগো নিউজকে জানান, পাট শ্রমিকরা দিনে আনে দিনে খায়। অর্থাৎ কাজ থাকলে তাদের পয়সা আর না থাকলে তাদের কোনো পয়সা নেই। সরকারের এ সিদ্ধান্তে আমরাও হতবাক। আমরা বাংলাদেশ জুট অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করেছি। তারা জানিয়েছে তারা এ বিষয়ে মিনিস্ট্রিতে ডেপুটেশন দিয়েছেন। যদি সিদ্ধান্তের পরিবর্তন না হয় তাহলে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনে নামবো।জানা গেছে, গত অর্থ বছরে (জুলাই ২০১৪ থেকে জুন ২০১৫ পর্যন্ত) ২৮টি দেশে ১০৪ জন রফতানিকারক ৯ লাখ ২৪ হাজার ২১৫ বেল কাঁচাপাট রফতানি করে ৭৩৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা সমপরিমাণের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করেছে। এর আগের অর্থবছরে (জুলাই ২০১৩ থেকে জুন ২০১৪ পর্যন্ত) ২০টি দেশে ৯২ জন রফতানিকারক ৯ লাখ ৮৪ হাজার ৪ বেল কাঁচাপাট রফতানি করে ৭০৬ কোটি ৫ লাখ টাকা সমপরিমাণের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করেছে।অর্থাৎ গত অর্থবছরে কাঁচাপাট রফতানির ক্ষেত্রে যেমন সৃষ্টি হয়েছে নতুন বাজার তেমনি রফতানি আয়ও কিছুটা বেড়েছে। সেখানে সকল প্রকার কাঁচাপাট রফতানি বন্ধ রফতানি আয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে।এমএএস/বিএ

Advertisement