অর্থনীতি

সব ব্যাংকে ট্রেজারি কার্যক্রম চালুর উদ্যোগ

>> ৮ অক্টোবর থেকে ছয় ব্যাংকে ট্রেজারি কার্যক্রম >> জনগণের সময় ও খরচ কমবে, বাড়বে সেবার মান>> ট্রেজারি কার্যক্রমের জন্য ব্যাংক পাবে কমিশন

Advertisement

কেউ পাসপোর্ট করতে চাইলে তাকে সরকার নির্ধারিত ফি জমা দিতে হয়। এই ফি শুধু সোনালী ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, প্রিমিয়ার ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক ও ট্রাস্ট ব্যাংকের মাধ্যমে জমা দেয়া যায়। কারও এলাকায় এসব ব্যাংকের শাখা না থাকলে তাকে অন্য এলাকায় গিয়ে টাকা জমা দিতে হয়।

এতে সেবাগ্রহীতার ভোগান্তির পাশাপাশি অনেক বেশি সময় অপচয় হয়। তাই সরকার এসব সেবা আরও সহজ করতে দেশের সব বাণিজ্যিক ব্যাংকে ট্রেজারি কার্যক্রম চালু করতে যাচ্ছে। ফলে যেকোনো ব্যাংকের যেকোনো শাখায় ট্রেজারি চালান, সরকারি চালান, ব্যাংক ড্রাফট ও পে-অর্ডারের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে টাকা জমা দেয়া যাবে। এ কাজের জন্য ব্যাংকগুলো পাবে নির্দিষ্ট হারে কমিশন। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে, বিভিন্ন ধরনের ট্রেজারি চালান ও সরকারি চালান বাংলাদেশ ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে অর্থ জমা দেয়া যায়। তাই দেশের সকল সরকারি-বেসরকারি ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ট্রেজারি কার্যক্রম চালুর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এটি করা গেলে সরকারি লেনদেন সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন, চালান জমাদানকারীদের সময় ও খরচ কমার পাশাপাশি ব্যাংকের সেবার মান আরও উন্নত হবে।

Advertisement

মন্ত্রণালয় থেকে আরও বলা হয়, সোনালী ব্যাংকের পাশাপাশি অন্যান্য ব্যাংকে ট্রেজারি কার্যক্রম পরিচালনা এবং এ কাজের জন্য নির্দিষ্ট হারে কমিশন প্রদানের জন্য আইনগত বিষয়াদি পর্যালোচনার জন্য ইতোমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. হাবিবুর রহমানকে সভাপতি করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির সুপারিশের পর অর্থ সচিব আরও দুটি বিষয় সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন। এগুলো হচ্ছে- সোনালী ব্যাংকের পাশাপাশি অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংককে ট্রেজারি কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি ও ফি প্রদান সংক্রান্ত সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বিদ্যমান ট্রেজারি রুল : ২ (বি) এবং ট্রেজারি রুল : ৪- এর অধীন প্রণীত সাবসিডিয়ারি রুল : ২৭২ সাংঘর্ষিক বিধায় তাসহ উক্ত সিদ্ধান্তের সঙ্গে আরও কোনো রুল সাংঘর্ষিক হলে তা সংশোধন করতে হবে। এ কাজ সম্পন্নে অর্থ বিভাগের প্রবিধি অনুবিভাগকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

সেখানে আরও উল্লেখ করা হয়, সকল বাণিজ্যিক ব্যাংককে ট্রেজারি কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি এবং ফি প্রদান সংক্রান্ত সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ব্যাংক মনোনীত প্রতিটি ব্যাংকের সঙ্গে পৃথক পৃথক চুক্তি করবে। ট্রেজারি কার্যক্রমের জন্য ব্যাংকগুলোকে প্রদত্ত ফি ক্রমহ্রাসমান হারে নির্ধারণ করতে হবে এবং বাংলাদেশ ব্যাংক এ সংক্রান্ত প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য অর্থ বিভাগে পাঠাবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত সচিব মো. হাবিবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘বর্তমানে সোনালী ব্যাংকসহ আরও পাঁচটি বেসরকারি ব্যাংক পাসপোর্টের ফি জমা নেয়। আমরা ইতোমধ্যে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের সঙ্গে বৈঠক করেছি। প্রথমে ছয়টা ব্যাংক দিয়ে আমরা পাইলট প্রোগ্রাম শুরু করব। তারপর সব ব্যাংকে তা উন্মুক্ত করে দেব।’

এ উদ্যোগ সম্পন্ন হলে সরকার ও জনগণের সুবিধা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এর ফলে দেশের অনেক লাভ হবে। যেমন- মফস্বল এলাকার কোনো নাগরিক যদি পাসপোর্ট করতে চান তাহলে নির্ধারিত ছয়টা ব্যাংকের মাধ্যমে তাকে টাকা জমা দিতে হবে। যদি ওই লোকের আশেপাশে ছয় ব্যাংকের কোনো শাখা না থাকে তাহলে তাকে অন্য এলাকায় গিয়ে টাকা জমা দিতে আসতে হবে। এ কার্যক্রম সম্পন্ন হলে তিনি তার বাড়ির পাশের যেকোনো ব্যাংকে টাকা জমা দিতে পারবেন।’

Advertisement

তিনি আরও বলেন, ‘শহরে এ সমস্যা তেমন দেখা যায় না। কিন্তু গ্রামাঞ্চলে এ সমস্যা বেশি। কারণ গ্রামে ব্যাংকের তেমন কোনো শাখা নেই। তখন তাদের ভোগান্তি বেড়ে যায়।’এছাড়া এ উদ্যোগ সম্পন্ন হলে সরকারি লেনদেন সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন, চালান জমাদানকারীদের সময় ও খরচ কমবে বলে মনে করেন তিনি।

সোনালী ব্যাংকের পাশাপাশি ঢাকা ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, প্রিমিয়ার ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক ও ট্রাস্ট ব্যাংকের মাধ্যমে ট্রেজারি কার্যক্রমের উদ্বোধন আগামী ৮ অক্টোবর করা হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। এই ছয় ব্যাংকে পাইলট বেসিসে এ কার্যক্রম চালানোর পর সব ব্যাংকে এটি চালুর উদ্যোগ নেয়া হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশাপাশি সোনালী ব্যাংক ট্রেজারি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে ৫৮ চেস্ট শাখা ও ৮ সাব-চেস্ট শাখাসহ সারাদেশের ৬০৩ শাখায় এটি পরিচালিত হচ্ছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সরকারের কর্মকাণ্ড বেড়ে যাওয়ায় সম্প্রতি ট্রেজারি কার্যক্রমও অনেক বেড়েছে। এতে সোনালী ব্যাংকের যেসব শাখায় ট্রেজারি কার্যক্রমের অনুমোদন আছে, সেখানে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। পাশাপাশি অনেক গ্রাহককে ট্রেজারি কাজের জন্য দূর থেকে আসতে হচ্ছে। সবমিলিয়ে এতে গ্রাহকের সময় যেমন বেশি লাগছে, তেমনি শাখাগুলোতে অতিরিক্ত চাপের কারণে সেবার মান ধরে রাখা যাচ্ছে না। এতে সরকারি লেনদেন সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনে ব্যাঘাত ঘটছে। তাই দেশের সব ব্যাংকের মাধ্যমে ট্রেজারি কার্যক্রম চালুর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

এমইউএইচ/এমএআর/পিআর