সাজেদুর আবেদীন শান্ত
Advertisement
বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার মানুষের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে ‘আলোর প্রদীপ’ নামে একটি সামাজিক সংগঠন। ২০০৮ সালের ১১ অক্টোবর প্রতিষ্ঠিত হয়ে এ অঞ্চলে বিশেষ ভূমিকা পালন করে চলেছে। দীর্ঘ এক দশকের বেশি সময় ধরে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের সহায়তা, পুষ্টি কার্যক্রম, মাদক প্রতিরোধ, বাল্যবিয়ে বন্ধ, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে প্রশংসা কুড়িয়েছে। দরিদ্রদের প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাব্যয় বহন ও পুষ্টি সমস্যা দূর করতে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে চলেছে সংগঠনটি।
সংগঠনের বার্ষিক প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, সংগঠনটি এ পর্যন্ত ১০০ জন অতিদরিদ্র শিক্ষার্থীর সব ধরনের ব্যয় বহন করেছে। বর্তমানে ১৩ জন দরিদ্র শিক্ষার্থীকে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। সংগঠনের সহায়তায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা পরিবারকে সহায়তার পাশাপাশি উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে তাদের অনেকেই কর্মজীবনে প্রবেশ করেছে। অথচ প্রাথমিক শিক্ষা জীবনেই ঝরে পড়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা ছিল।
সংগঠনটি নির্দিষ্ট শিক্ষার্থীর বাইরেও প্রতিবছর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অতিদরিদ্র শিক্ষার্থীদের স্কুলব্যাগ, স্কুলড্রেসসহ প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ দেওয়া অব্যাহত রেখেছে। এখন পর্যন্ত ৩,৫৯০ জন শিক্ষার্থীর মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণের কাজ শেষ করেছে। ২০০৯ সাল থেকে নির্বাচিত মেধাবী শিক্ষার্থীরা ‘আলোর প্রদীপ বৃত্তি প্রকল্প’ থেকে নিয়মিত বৃত্তি পাচ্ছে। এ পর্যন্ত তারা ৩৭৪ জন মেধাবী শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দিয়েছে।
Advertisement
২০১৮ সাল থেকে ‘জামিল আখতার বীনু দরিদ্র শিক্ষার্থী পুষ্টি প্রকল্প’র অধীনে উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পুষ্টিকর খাবারের পাশাপাশি ১৩ জন দরিদ্র শিক্ষার্থীকে শিক্ষা সহায়তা ও নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার দেওয়ার মাধ্যমে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
শিক্ষা সহায়তার পাশাপাশি ৫টি বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ, ২,৩৪৫ জন শিক্ষার্থীকে পুষ্টিকর খাবার প্রদান, বাল্যবিয়ে সম্পর্কে সচেতনতামূলক ২১৩টি উঠান বৈঠকের মাধ্যমে ২,৪৬৬ জন অভিভাবককে সচেতন করা, উপজেলার মাদকচিত্র সম্পর্কে ৫টি প্রতিবেদন প্রকাশ, মাদকবিরোধী ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে ৬৭,৭৩৮ জন মানুষকে সচেতন করা, ৫টি মঞ্চ নাটক, ২০৯ জন দুস্থকে চিকিৎসা সহায়তা, কন্যাদায়গ্রস্ত ৩৪টি পরিবারকে সহায়তা, ৪,২৫৫ জনের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ, ১২,১৩০ জন বন্যাদুর্গতকে সহায়তা, শিক্ষা, মাদক, বাল্যবিয়ে, স্যানিটেশন সম্পর্কে ১২টি জরিপ পরিচালনা করেছে।
সংগঠনটির অন্য কার্যক্রম হচ্ছে- আলোর প্রদীপ মজার স্কুল, দরিদ্র মানুষকে চিকিৎসা সহায়তা, ফটোগ্রাফি, কবিতা, চিত্রাঙ্কন, কারুশিল্প বিষয়ে মেধা অন্বেষণ কার্যক্রম, অনলাইনে ‘আলোর দূত’ প্রকাশ, সুস্থধারার সাংস্কৃতিক কার্যক্রম, গুণীজনদের ‘আলোর প্রদীপ সম্মাননা’।
করোনার সময়ে ভ্যান চালকদের মাঝে সাবান ও স্যানিটাইজার বিতরণ, কর্মহীনদের ত্রাণ সহায়তা, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে স্থানীয় বাজার ও জনবহুল স্থান মনিটরিং, আক্রান্ত মৃত ব্যক্তির দাফনে সহায়তা পরিচালনা করে।
Advertisement
সংগঠনের বর্তমান চেয়ারম্যান মো. আজাদ হোসেন বলেন, ‘উপজেলাটি নানা কারণেই উল্লেখযোগ্য। যমুনা তীরবর্তী এ অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ দরিদ্রসীমার নিচে বাস করে। আমরা দরিদ্র শিক্ষার্থীদের সহায়তার মাধ্যমে প্রাথমিক স্তর থেকে ঝরে পড়া রোধে কাজ করে যাচ্ছি। আলোর প্রদীপ দীর্ঘ ১০ বছর ধরে নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা চাই দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন। এ শিক্ষা সহায়তার খরচ বহনের জন্য সংগঠনের সদস্যরা মাসে ১০ টাকা করে দান করছে।’
তিনি বলেন, ‘সদস্যদের দান-অনুদানেই আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি। বর্তমানে আমরা সোনাতলা ও রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলায় কাজ করছি। সবার সহযোগিতা পেলে আমাদের কার্যক্রম সারাদেশে ছড়িয়ে দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই। ইচ্ছাশক্তি থাকলে মাত্র ১০ টাকা দিয়েও অনেক কিছু করা সম্ভব।’
লেখক: শিক্ষার্থী, বঙ্গবন্ধু কলেজ, ঢাকা।
এসইউ/এএ/পিআর