৪০ বছর বয়সী হাসনা বেগম দুই বছর আগে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। এতে বন্ধ হয়ে যায় তার হাঁটা-চলা, কথা বলা ও খাওয়া-দাওয়া। পুরোপুরি শয্যাশায়ী তিনি।
Advertisement
স্ত্রীর করুণ এ অবস্থা থেকে গ্রাফিক্স ডিজাইনার স্বামী ফারুক আহমেদ হাসনা বেগমকে রাজধানীর কদমতলী এলাকার স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে বেশকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো হয়। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনো রোগ নির্ণয় করতে পারেনি। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার পর হাসনা বেগমকে বাসায় নিয়ে আসা হয়।
এর কিছুদিন পর আবারও অসুস্থ হয়ে পড়েন হাসনা বেগম। এবার নিয়ে যাওয়া হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে। আগের পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেখে সেখানে আবারও বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। তাতেও ধরা পড়েনি কোনো রোগ।
এরপর নিয়ে যাওয়া হয় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে (জাতীয় স্নায়ুবিজ্ঞান গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল)।
Advertisement
সেখানে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা যায় তিনি মোটর নিউরন রোগে (Motor neurone disease (MND) আক্রান্ত। (মস্তিষ্ক ও স্পাইনাল কর্ডের মধ্যে মোটর নিউরন নামে বিশেষ স্নায়ুকোষ থাকে, যা শরীরের মাংসপেশির কাজগুলো নিয়ন্ত্রণ করে। যেমন- চলাফেরা, কথা বলা, খাদ্যবস্তু গেলা, হাঁটা, শ্বাস-প্রশ্বাস, কোনো কিছু মুঠ করে ধরার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ নিয়ন্ত্রিত হয় এই নিউরনের মাধ্যমে। মোটর নিউরন স্নায়ুতন্ত্রের একটি অস্বাভাবিক অবস্থা, যা মাংসপেশির স্বাভাবিক কাজগুলো ব্যাহত করে এবং মাংসপেশি ক্রমান্বয়ে দুর্বল করে তোলে।)
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালের এক ডাক্তার জানিয়েছেন, এ রোগের চিকিৎসা সম্ভব ভারতের মুম্বাইয়ে। সেখানে চিকিৎসা করালে বাংলাদেশি টাকায় দুই লাখের মতো খরচ হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এর মাঝে চার মাস আগে যা ঘটেছে তা আরও মর্মান্তিক। হাসনা বেগম শয্যাসায়ী হয়ে পড়ায় তিন সন্তানকে নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েন স্বামী ফারুক আহমেদ। স্ত্রীকে ২য় বিয়ের প্রস্তাব দেন তিনি। এতে হাসনা বেগম রাজি না হওয়ায় গোপনে ২য় বিয়ে করে মেজ ছেলে ও ছোট মেয়েকে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যান তিনি। বর্তমানে তিনি আলাদা সংসার করছেন।
এ ঘটনার পর মাকে নিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছে বড় মেয়ে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাহমিনা আক্তার। বিছানায় পড়ে থাকা মায়ের চিকিৎসা ও সংসারের দায়িত্ব এখন তার ওপর। কোনো উপায় না পেয়ে মাকে নিয়ে রাজধানীর কদমতলী থানার জুরাইন মুরাদপুর এলাকার হাজি লাল মিয়া সরকার রোডে ১৫৯/২ নম্বর নানার ভাড়া বাসায় উঠেছে তাহমিনা। বৃদ্ধ নানা-নানির সংসারে নিজেদের বোঝা মনে করছে তারা।
Advertisement
এ সময়ের মধ্যে তার বাবা একবারের জন্য মায়ের খোঁজখবর নেয়নি বলে অভিযোগ তার। শুধু তাই নয়, মায়ের চিকিৎসার গুরুত্বপূর্ণ কাগজও নিয়ে চলে গেছে তার বাবা। তার ভাই ও বোন মাকে ছেড়ে বাবার সঙ্গে চলে গেলেও বিবেক আটকে দিয়েছে তাহমিনাকে। এখন মাকে সুস্থ করতে রীতিমতো যুদ্ধে নেমেছে এই কিশোরী।
তাহমিনা জুরাইন এলাকায় তালিমুল মিল্লাত মাদরাসায় দশম শ্রেণিতে পড়ে। বাবা তাকে রেখে চলে যাওয়ায় জীবন এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
এ বয়সে মায়ের চিকিৎসা ও সংসারের দায়িত্ব পড়েছে তার ওপর। মাকে সুস্থ করতে যে দুই লাখ টাকা প্রয়োজন সেই টাকার সন্ধানে ছুটছে তাহমিনা এদিক সেদিক।
সম্প্রতি তাহমিনা মায়ের চিকিৎসার সহযোগিতার আবদার নিয়ে হাজির হয় জাগো নিউজ কার্যালয়ে। অনুরোধ করে তার মাকে নিয়ে একটি মানবিক স্টোরি করার।
তাহমিনা জানায়, ডাক্তার বলেছে এ রোগের চিকিৎসা ভারতে সম্ভব। সেখানে চিকিৎসা করালে তার মা পুরোপুরি আগের মতো সুস্থ হয়ে উঠবে। কিন্তু কোনো টাকা নেই তার নানা-নানির। তারা বৃদ্ধ মানুষ। মামাদের আয় রোজগারে চলে তাদের জীবন। এর মাঝে সেখানে সে ও তার মা গিয়ে নতুন যন্ত্রণা সৃষ্টি করেছে।
এ বয়সে কি করবে তাহমিনা ভেবে পাচ্ছে না? করুণ কণ্ঠে সে বলল, ছোট ভাই ও বোনকে নিয়ে বাবা চলে গেছে। আমি মাকে ছেড়ে যেতে পারিনি। বিবেক যেতে দেয়নি। পড়ালেখা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। অতি প্রয়োজনীয় জিনিসটা কেনারও টাকা নেই মা ও আমার। মামাদের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়। তার পরও শুকরিয়া তারা আমাদের ঠাঁই দিয়েছে।
সে বলল, কেউ সহযোগিতা করলে আমার মায়ের চিকিৎসা করাতে পারবো। বেঁচে যাবে মা। আমি আবারও পড়ালেখা শুরু করতে পারবো। মা সুস্থ হলে অন্যের বাড়িতে কাজ করে হলেও আমাকে পড়াতে পারবে মা। কেউ কি পাশে দাঁড়াবে আমার, বলেই কান্নায় ভেঙে পড়ে তাহমিনা।
তাহমিনা ও তার মায়ের করুণ এ জীবন কাহিনি কারও হৃদয় স্পর্শ করলে পাশে দাঁড়াতে পারেন। যোগাযোগ নম্বর ০১৯৮৫-৬৩৮১১৯ (বিকাশ)।
এমএএস/এমকেএইচ