ইতিহাসের বর্বরোচিত, নিষ্ঠুরতম কালো অধ্যায় জেল হত্যা দিবস। মানবতার ইতিহাসে নজিরবিহীন ‘কলঙ্ক তিলক’ হয়ে থাকা এ দিবসটিতে আজ জাতীয় চার নেতাকে স্মরণ করে আওয়ামী লীগ নানা কর্মসূচি পালন করলেও দেশের প্রধান বিরোধী শক্তি বিএনপি বরাবরেই মতো এবারও নিরবতা দেখিয়েছে। তবে দলটির শীর্ষ নেতারা বলছেন, জাতীয় চার নেতার প্রতি তাদের গভীর শ্রদ্ধা রয়েছে। এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া জাতীয় ঐক্য নিয়ে বক্তব্য দেয়ার পর দলের একটি অংশ জাতীয় কয়েকটি বিষয়ে বিভেদ ভুলে একযোগে কাজ করার আশাবাদ ব্যক্ত করলেও এ বিষয়টি নিয়ে বিপরীত মেরুতে অবস্থান করছে দলটি। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির একটি পক্ষ সবসময় জাতীয় চার নেতা ও তিন নেতাসহ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কর্মসূচি পালন করার পক্ষে। তবে দল থেকে সুস্পষ্ট কোন নির্দেশনা না থাকায় তারাও নিরবতা পালন করছেন। এ বিয়গুলো নিয়ে বিএনপির মধ্যে পক্ষে ও বিপক্ষে দুটি গ্রুপ অবস্থান নিয়েছে। একটি পক্ষ তাদের অবদান স্বীকার করলেও আরেকটি পক্ষ রাজনৈতিক কারণে তা স্বীকার করার বিপক্ষে বলে জানা গেছে। এদিকে সোমবার বিকেলে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত আওয়ামী লীগের সমাবেশে সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী জাতীয় চার নেতা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সম্পৃক্ততার অভিযোগ তুলেছেন। তবে বিএনপি বলছে, রাজনৈতিক কারণে সরকারের মন্ত্রী এমপিরা এসব বক্তব্য দিচ্ছেন। জাতীয় চার নেতাসহ কোন হতাকাণ্ডের সঙ্গেই জিয়াউর রহমান জড়িত নন। জাতীয় চার নেতার বিষয়ে বিএনপির অবস্থান কি এমন প্রশ্নের জবাবে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান জাগো নিউজকে বলেন, জাতীয় চার নেতার প্রতি বিএনপির গভীর শ্রদ্ধা রয়েছে। তবে রাজনৈতিক কারণে হয়তো আনুষ্ঠানিক তারা শ্রদ্ধা জানান না। তারা মুক্তিযুদ্ধের নেতা ছিলেন। অন্যায়ভাবে তাদেরকে জেলখানায় হত্যা করা হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। নজরুল ইসলাম খান বলেন, জাতীয় চার নেতা অন্য দলের নেতা ছিলেন। তাই দেশে প্রচলিত রাজনৈতিক সংস্কৃতির কারণে হয়তো বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে শ্রদ্ধা জানায় না। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ কখনই জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা জানাতে আসে না। আর আমরাও শেখ মুজিব রহমানের কবরে যাই না। তবে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও দলটির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দলেন অনেক নেতাই মুজিব রহমানের কবরে গিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। কিন্তু আ. লীগ এসব করে না। তিনি আরো বলেন, মাওলানা ভাসানীর কবরে আমরাও যাই, আওয়ামী লীগও আসে। রাজনৈতিক কারণে এরকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলেও জানান তিনি।তবে এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি বিএনপির মুখপাত্রের দায়িত্ব থাকা দলটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন। উল্লেখ্য, ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ভোরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে বন্দি অবস্থায় নির্মমভাবে হত্যা করা হয় মহান মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী চার জাতীয় নেতা- বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, মন্ত্রিসভার সদস্য ক্যাপ্টেন এম. মনসুর আলী এবং এএইচএম কামরুজ্জামানকে। দিনটি জাতির ইতিহাসের অন্যতম বেদনাবিধুর দিন। এর আগে একই বছরের ১৫ আগস্ট তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর তার ঘনিষ্ঠ এ চার সহকর্মীকে গ্রেফতার করে কারারুদ্ধ করা হয়। পরবর্তী অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ক্যু-পাল্টা ক্যুর রক্তাক্ত অধ্যায়ে ৩ নভেম্বর সংঘটিত হয় জেল হত্যাকাণ্ড। সেই থেকে প্রতি বছর রক্তক্ষরা এই দিনটি জেলহত্যা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।এমএম/এআরএস/পিআর
Advertisement