বাংলাদেশে অনেক ভালো কিছু হচ্ছে। কিন্তু এক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে অন্য মন্ত্রণালয়ের ভালো যোগাযোগ না থাকায় তা সঠিকভাবে প্রচার হচ্ছে না। আন্তঃমন্ত্রণালয়ের এই সমন্বয়ের অভাব সীমান্ত বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বড় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
Advertisement
মঙ্গলবার (২২ সেপ্টেম্বর) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘লজিস্টিকস ইস্যুস অ্যান্ড চ্যালেঞ্জ ইন ক্রস-বর্ডার ট্রেড অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন ব্যবসায়ীরা।
ডিসিসিআই সভাপতি শামস মাহমুদের সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য রাখেন বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) চেয়ারম্যান ড. জাহিদী সাত্তার, এনবিআরের প্রথম সচিব (শুল্ক গোয়েন্দা ও নিরীক্ষা) মোহাম্মদ আকবর হোসেন, চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম, ডিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম খান প্রমুখ।
আলোচনা সভার মূল প্রবন্ধ তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক সেলিম রায়হান। এতে বিশ্বব্যাংকের লজিস্টিক পারফরম্যান্স ইনডেক্সসহ (এলপিআই) বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশের পিছিয়ে থাকার তথ্য তুলে ধরা হয়।
Advertisement
আলোচনায় অংশ নিয়ে বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক বলেন, ‘বিশ্বব্যাংকের ডুইং বিজনেসটা ধারণা-নির্ভর। আমরা হয়তো আমাদের জায়গাটাকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে পারি না। কাজেই আমাদের অভ্যন্তরীণ অবস্থানটা একটু শক্তিশালী করা দরকার। আমাদের নিজেদেরও একটি ইনডেক্স থাকা উচিত।’
তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরে ক্যাপিসিটি হলো ৪৯ হাজার ১৮টি কন্টেইনার। সেখানে ৩৩ হাজার ১৭টি হচ্ছে। সুতরাং অতিরিক্ত ক্যাপিসিটি আছে। কিন্তু আমরা বলছি স্বল্পতা। আমরা শুধু বিশ্বব্যাংককে দোষ দেয় কেন? আমরা নিজেরাই তো পারসেপশনের দোষে দোষী। প্রত্যেকটি কথায় আমরা নেগেটিভ খুঁজি। নেগেটিভ হওয়ার কোনো কারণ নেই।’
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, বহু ভালো কিছু হচ্ছে। কিন্তু সেটার কোনো প্রচার নেই। আমরা আত্মসমালোচনায় সারাক্ষণ এতবেশি জড়িয়ে থাকি যে, নিজেদের ভালোটা আমরা ঠিকমতো দেখি না।
তিনি বলেন, ‘কাজ কিন্তু হচ্ছে। কাজটাকে গুছিয়ে বলার মতো সেই মুখপাত্রটি নেই। অথবা আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় নেই বলে আসলে এক মন্ত্রণালয় অন্য মন্ত্রণালয়ের কথা অত গুছিয়ে বলছে না। একসঙ্গে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা এবং কমিটি করা খুব জরুরি।’
Advertisement
পিআরআইয়ের চেয়ারম্যান ড. জাহিদী সাত্তার বলেন, ‘প্রতিবছর রফতানিতে ১০০টির মতো নতুন পণ্য যুক্ত হচ্ছে। কিন্তু পরবর্তীতে এর ৮০ শতাংশই হারিয়ে যাচ্ছে। মাত্র ২০ শতাংশের মতো টিকে থাকছে। এর কারণ হলো রফতানির ক্ষেত্রে যে ধরনের নীতি সহায়তা দরকার এগুলো পাচ্ছে না।’
এনবিআরের প্রথম সচিব (শুল্ক গোয়েন্দা ও নিরীক্ষা) মোহাম্মদ আকবর হোসেন বলেন, ‘চট্টগ্রামে ৭-৮ কিলোমিটারের একটি বন্দর সংযোগ রাস্তা করতে ৩-৪ বছর লেগে যাচ্ছে। একটা রাস্তা করতে এত সময় লাগছে তাহলে আমাদের ট্রেড ফ্যাসিলিটি কী হবে?’
চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘আমাদের সব থেকে বড় সমস্যা সমন্বয়ের অভাব। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যে মন্ত্রণালয়গুলো সম্পৃক্ত তার একটার সঙ্গে আর একটার সমন্বয় নেই। মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয় অত্যন্ত জরুরি।’
চট্টগ্রাম বন্ধরের সক্ষমতা অনেক বেড়েছে, কিন্তু লজিস্টিক সাপোর্ট অত্যন্ত কম জানিয়ে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্ধরে দ্রুত বে-টার্মিটাল চালু করতে হবে।
‘সারাদেশ থেকে প্রতিদিন চট্টগ্রামে ৮-১০ হাজার ট্রাক আসে। অথচ চট্টগ্রামে একটিও ট্রাক টার্মিনাল নেই। ফলে ট্রাকগুলো যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকে। এতে চট্টগ্রামে যানজট সৃষ্টি হয়, পণ্য নিয়ে ট্রাক বের হতে অনেক সময় লেগে যায়।’
এমএএস/এসআর/পিআর