ভিআইপি সড়ক বন্ধ করে বগুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথায় ভোর থেকেই শুরু হয় গাছ কাটার মহোৎসব। শহরবাসী টের পায় বেলা ওঠার পর। এরপর থেকেই নানা বয়সের, শ্রেণি, পেশার লোকজনের জিজ্ঞাসা ? কেন কাটা হচ্ছে দুইশ বছরের প্রাচীন এ গাছগুলো। বগুড়া সার্কিট হাউজের মধ্যে উত্তরপাশে ছিলো বিশাল আকৃতির তিনটি গাছ। এর মধ্যে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত দুইটি গাছ কেটে ফেলা হয়েছে।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বগুড়া গণপূর্ত বিভাগের ঠিকাদার আমিনুর রহমান নামের একজন নিলাম করে কিনে নিয়েছেন এই গাছগুলো। কিন্তু এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য গণপূর্ত বিভাগ কিংবা সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের কাছে থেকে পাওয়া যায়নি। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় গাছগুলো প্রায় ছয় মাস আগে নিলাম হয়েছিল বলে জানানো হলেও এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য দিতে পারেনি সংশ্লিষ্ট বিভাগ।এ ব্যাপারে জানতে একাধিক বার বগুড়া গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সালাউদ্দিন আহম্মেদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তার পিএস আইয়ুব আলী জাগো নিউজকে বলেন, স্যার ব্যস্ত আছেন। আপনার কথা বলা হবে। তিনি প্রয়োজন মনে করলে কথা বলবেন। কিন্তু সন্ধ্যা পর্যন্ত নির্বাহী প্রকৌশলী কোনো সাড়া মেলেনি।তবে ঠিকাদারের ভাই আরিফ রেহমান জানান, সর্বশেষ প্রচণ্ড ঝড়ে এই গাছগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলো। আর এ কারণে গণপূর্ত বিভাগ সেগুলো নিলাম করে। এতোদিন কাটা না হলেও এখন সেগুলো কাটা হচ্ছে।বগুড়া সার্কিট হাউজের তত্ত্বাবধায়ক এনডিসি হাবিবুল হাসান রুমি জানান, গাছ কাটা হচ্ছে এটা ঠিক। তবে সেটি নিলাম হয়েছে কিনা তা বলতে পারছি না। বিষয়টি গণপূর্ত বিভাগের আওতাধীন হবার কারণে এ ব্যাপারে তার কিছু নেই।ঠিক কত টাকায়, কি প্রক্রিয়ায় এই নিলাম হয়েছে- তা জানতে দিনভর চেষ্টা করে গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীরা মুখ খোলেনি। তবে মাত্র ৫০ হাজার টাকা মূল্য দেখিয়ে গাছগুলো নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঠিকাদারদের অন্য একটি অংশ।বিষয়টি জানতে কথা বলা হয় রাজশাহী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোল্লা মিজানুর রহমানের সঙ্গে। তিনি জানান, গাছগুলো কাটতে বন ও পরিবেশ রক্ষা কমিটির অনুমোদন নেয়া হয়েছে। তবে কতো টাকা মূল্য নির্ধারণ এবং কয়টি গাছ কাটার অনুমতি মিলেছে তা তিনি জানাতে পারেননি।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কাঠ ব্যবসায়ী জানান, সার্কিট হাউজের ঐতিহ্যবাহী এই কড়ই গাছগুলোর বয়স দুইশ বছরেরও বেশি। মোট তিনটি গাছ রয়েছে সেখানে। যার একেকটির দাম দুই লাখ টাকারও বেশি হবে। কারণ গাছগুলোর আকৃতি এতোটাই বড় যে সেগুলো কাটতে সপ্তাহ পার হয়ে যাবে।বগুড়া নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব তৌফিক হাসান ময়না বলেন, গাছগুলো বগুড়ার ঐহিত্য ছিল। এগুলো কেটে না ফেলে ঝুঁকিমুক্ত করে সংরক্ষণ করা যেত। কিন্তু তা করা হয়নি।দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, ভিআইপি সড়কের পোস্ট অফিসের সামনে থেকে কারুপল্লির গেট পর্যন্ত অংশটি বেরিকেড দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সেখানে বসানো হয়েছে পুলিশি প্রহরা। শহরগামী লোকজন রিকশা থেকে নেমে হেঁটে পার হচ্ছেন। এছাড়া অন্যান্য যানবাহনগুলো ঘুরে অন্য সড়ক দিয়ে চলাচল করছে। স্বাভাবিক কারণে সারাদিন এই সড়কে ছিল যানজটের প্রচণ্ড চাপ।লিমন বাসার/এআরএ/পিআর
Advertisement