এম. ফখরুল ইসলাম দেশের প্রতিষ্ঠিত রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠান ইনটেক প্রপার্টিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। পাশাপাশি ‘রাহবার’ নামে আরেকটি হাউজিং কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর। এ ছাড়া বেশ কিছু সামাজিক সেবামূলক সংগঠনের সঙ্গেও যুক্ত রয়েছেন। সম্প্রতি তার ক্যারিয়ার ও সফলতা নিয়ে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সমসাময়িক বিষয়ে সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বেনজির আবরার—
Advertisement
আপনার সম্পর্কে কিছু বলুন—এম. ফখরুল ইসলাম: আমার জন্ম ১৯৮৪ সালে ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলার চরচান্দিয়া গ্রামে। যা এখন ‘লন্ডনি পাড়া’ নামে চেনে এলাকার মানুষ। আমি ৯ ভাই-বোনের মধ্যে ৮ম। তাই ছোটবেলা থেকেই সবার আদরের। ছোটবেলায় প্রায় প্রতিটি পরীক্ষায় প্রথম হতাম। পড়াশোনার যাত্রাটা ভিন্ন, ওলামা বাজার মাদ্রাসায় দাখিল পাস করি। এরপর সেখান থেকেই পর্যায়ক্রমে কামিল (মাস্টার্স) পাস করি। এরপর চট্টগ্রাম দারুল-মা আরিফ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরবি সাহিত্যে স্নাতক পাস করি।
আপনি শিক্ষাজীবন থেকেই নানা ধরনের সামাজিক কাজের সাথে জড়িত। এ ব্যাপারে একটু বিস্তারিত জানতে চাই—এম. ফখরুল ইসলাম: জ্বি, পড়াশোনার সময় নানা ধরনের সামাজিক-সাংস্কৃতিক কাজে জড়িয়ে পড়ি। প্রতিষ্ঠা করি পাঠাগারসহ নানা ধরনের সংগঠন। একটি উদ্যোগ ছিলো- গ্রামের কৃষকদের সাথে নিয়ে নাছির উদ্দিন সেচ অ্যান্ড স্কিম (ইরিগেশন) প্রকল্প নামে। ২০০৭ সালে সোনাগাজী উপজেলার প্রায় ১৫০ হাজার শতক জমি চাষাবাদের আওতায় এনে কয়েক হাজার কৃষকের মুখে হাসি দেখতে পাই।
বর্তমানে ইনটেক প্রপার্টিজ লিমিটেডে কাজ করছি ঢাকায়। এখনো সামাজিক কাজগুলো ধরে রাখার চেষ্টা করছি আমার প্রতিষ্ঠিত এম হাশিম ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে। প্রতিনিয়ত নানা আয়োজনে অসহায় মানুষের পাশে থাকি। এ ছাড়া খিদমাহ ট্রাস্ট, সোনাগাজী বহুমুখী সমবায় সমিতিসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছি ব্যস্ততার মাঝেও। এলাকার নাছির উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি হিসেবেও আছি।
Advertisement
রিয়েল এস্টেস্ট ব্যবসায় যেভাবে এলেন, ইনটেক প্রপার্টিজ লিমিটেড সম্পর্কে বলুন—এম. ফখরুল ইসলাম: পড়াশোনা শেষে আমি যে প্রতিষ্ঠানে জব করতে থাকি, হুট করে একসময় প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যায়। মাথার উপর তখন অনেক চাপ। যেহেতু পরিচিতরা আমার মাধ্যমে এখানে এসেছিলেন। তাদের সঠিকভাবে সব কিছু বুঝিয়ে দিতে পারা আমার প্রথম পরীক্ষা ছিলো। আমি সেটা সফলভাবে পেরেছিলাম, তাতে আমার পরিচিত মহলে সুনাম বৃদ্ধি পায়। একসময় পরিবার সিদ্ধান্ত নেয় আমাকে বিদেশে পাঠাবে, আমি মোটেও রাজি ছিলাম না। এমন অবস্থায় নতুন কিছুর সন্ধানে ঢাকা আসি। আগের চাকরিস্থলে রিয়েল এস্টেস্টের দারুণ অভিজ্ঞতা থাকায় এ সেক্টর নিয়ে ভাবতে শুরু করি। পরিচিত চার জনকে আমার নবযাত্রায় পাশে পাই। এরমধ্যে এনসিসি ব্যাংক লিমিটেডের তৎকালীন শ্যামলী ব্রাঞ্চ ম্যানেজার গিয়াস উদ্দিন ভূঁঞা, বৃহত্তর কল্যাণপুর সমাজকল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক, চাচাতো ভাই আশরাফ উদ্দিন এবং নাসির উদ্দিন।
আমরা ইনটেক প্রপার্টিজের কাজ শুরু করার পরপরই দ্রুত কল্যাণপুরে জনপ্রিয় হয়ে উঠি দ্রুততম সময়ে মানুষকে আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করায়। একই বছর আমি ‘রাহবার’ নামে আরেকটি হাউজিং কোম্পানি শুরু করি, এখন দুটি প্রতিষ্ঠানেরই ম্যানেজিং ডিরেক্টর আমি। ২০১২ সালে গার্মেন্টস সামগ্রী সরবরাহে ‘অলট্রেড’ নামে আরও একটি প্রতিষ্ঠান শুরু করি। বলতে পারেন, ইনটেকের সাফল্য মানুষকে আমার বিভিন্ন কাজে আকৃষ্ট করে। যার মাধ্যমে আজ রিহ্যাবসহ বেশ কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠানে খুব পরিচিত।
এ সেক্টরে নতুন যারা আসতে চান, তাদের জন্য পরামর্শ—এম. ফখরুল ইসলাম: এ সেক্টরের আচরণ হচ্ছে পৃথিবীর সাথে আপনার মানিয়ে নিতে হবে। ২০২০ সালে এসে পৃথিবীর মানুষ যেমন উন্নত সুযোগ চায় তার বসতি এলাকায়, আপনাকে সেই মানসিকতার হতে হবে। নতুনদের অবশ্যই নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা থাকতে হবে। কারণ নতুন প্রতিষ্ঠান কাজ ভালো করলে মানুষের আস্থা বাড়বে। যারা এ সেক্টরে চাকরি করেন মানে সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, প্রজেক্ট ইনচার্জ, বিভিন্ন কাঁচামালের সরবরাহকারী সবার মধ্যে সমন্বয় করাটাও এ ব্যবসার একধরনের চ্যালেঞ্জ। সব কিছু নিয়মমত হলে এ সেক্টরে ভালো না করার কোনো কারণ নেই।
তরুণ যারা চাকরিপ্রার্থী আসেন, তাদের জন্য যদি কিছু বলতেন—এম. ফখরুল ইসলাম: আমরা দেশের জবপোর্টালগুলোর মাধ্যমে সিভি পাই। আমাদের অ্যাডমিন বিভাগ কাজ করে এটা নিয়ে। প্রজেক্ট বাড়লে আমাদের কাজের চাপও বাড়ে। জনবলও বাড়ে। তাই নতুনদের প্রতি অনুরোধ, সব সময় আপডেট থাকবেন; কোথায় কোন সুযোগ আছে। প্রতিষ্ঠানগুলো দেখে, যে স্কিলটি আমরা চাই সেটা আছে কি না। মূলকথা কাজ জানা লোক সবার আগে প্রয়োজন। আমি নিজে প্রথমে বিনা বেতনে এ সেক্টরে কাজ শিখেছি, যা আমার ভিত্তি গড়ে দিয়েছে।
Advertisement
এসইউ/এএ/জেআইএম