প্রাচীন রামমন্দিরের ওপর নির্মিত হওয়ার দাবিকে কেন্দ্র করে ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদী ‘করসেবকেরা’ ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর অযোধ্যার ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ গুঁড়িয়ে দেয়। দেশটির সুপ্রিম কোর্টের দেয়া রায় অনুযায়ী অযোধ্যায় নবনির্মিত মসজিদটির নাম আগের মতো সম্রাট বাবরের নামে নির্মিত হচ্ছে না। থাকছে না আগের অবকাঠামোও। প্রশ্ন থেকে যায়, তাহলে কী নাম এবং কেমন আকৃতিতে তৈরি হবে নতুন এ মসজিদ?
Advertisement
২০ আগস্ট (রোববার) ভারতীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এমনই তথ্য জানিয়েছেন নতুন মসজিদ নির্মাণের দায়িত্ব পাওয়া মুখপাত্র ও ইন্দো-ইসলামিক কালচারাল ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক আতহার হুসেইন। তিনি জানান, নতুন মসজিদটি কোনও সম্রাট বা বাদশাহর নামে নামকরণ করা হবে না।
আদালতের রায় অনুযায়ী, ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদের স্থানে গত আগস্টে রামমন্দিরের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। এ স্থান থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে ধন্নিপুর গ্রামে মসজিদ নির্মাণের জন্য ৫ একর জায়গা বরাদ্দ দিয়েছে দেশটির সরকার। ইতিমধ্যে সে স্থানে মসজিদ নির্মাণের কাজও কিছুটা এগিয়েছে।
ধন্নিপুর গ্রামে মসজিদ নির্মাণে ইন্দো-ইসলামিক কালচারাল ফাউন্ডেশন (আইআইসিএফ) নামে একটি ট্রাস্ট গঠন করেছে দেশটির উত্তর প্রদেশ সুন্নি সেন্ট্রাল ওয়াকফ বোর্ড। ট্রাস্টের সাধারণ সম্পাদক আতাহার হুসেইন জানান, ভিন্ন নামে নির্মিত হবে এ মসজিদ। ইতিমধ্যে মসজিদটির লোগো প্রকাশ করা হয়েছে। অবকাঠামোতেও আনা হচ্ছে পরিবর্তন। এটির নকশা তৈরিতে স্থপতিদের দেয়া হয়েছে পূর্ণ স্বাধীনতা।
Advertisement
ট্রাস্টের মুখপাত্র আরও জানান, ধন্নিপুর গ্রামে নির্ধারিত ৫ একর জায়গার মধ্যে ১৫ হাজার বর্গফুট আয়তনে এ মসজিদ নির্মাণ করা হবে। অবকাঠামো পরিবর্তন হলে মসজিদটি দেখতে কেমন হবে? এমন এক প্রশ্নে জবাবে তিনি জানান, ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ থেকে ভিন্ন। মিনার ও গম্বুজবিহীন চতুরভূজ আকৃতিতে তৈরি হবে এর অবকাঠামো। অনেকটা কাবা শরিফের আদলে তৈরি হতে পারে।
কি নামে মসজিদটি পরিচিত হবে এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মসজিদটির নাম বাবরি মসজিদ হবে না। কোনও বাদশাহ বা সম্রাটের নামেও এটির নামকরণ করা হবে না। তবে আমার ব্যক্তিগত মত হলো- এটিকে ধন্নিপুর মসজিদ নাম দেয়া উচিত হবে।’
ট্রাস্টের সাধারণ সম্পাদক আতাহার হুসেইন জানান, ধন্নিপুরে নির্ধারিত ৫ একর জায়গায় নির্মিত হবে ১৫ হাজার বর্গমিটারের এ মসজিদ। নবনির্মিত এ মসজিদ কমপ্লেক্সের অভ্যন্তরে থাকবে-- জাদুঘর- হাসপাতাল ও গবেষণা কেন্দ্র।- নিজস্ব ওয়েবসাইট।মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মাণে অনুদান সংগ্রহে ইতিমধ্যে এ ওয়েবসাইট নির্মাণের কাজ চলছে। এ ওয়েবসাইটে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ইসলামিক বিশেষজ্ঞদের লেখাও প্রকাশ করা হবে বলে জানান আতহার হুসেইন। ওয়েবসাইটটি নির্মাণাধীন। পোর্টাল তৈরি হলে মসজিদ নির্মাণে অনুদান সংগ্রহ শুরু হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর বাবরি মসজিদ মামলার রায় ঘোষণা করে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। দেশটির সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে বলা হয়, অযোধ্যার বিতর্কিত ওই ২ দশমিক ৭৭ একর জমিতে গড়ে উঠবে রামমন্দির। অন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মসজিদের জন্য বরাদ্দ করা হবে পাঁচ একর জমি। মন্দির ও মসজিদ নির্মাণে হিন্দু ও মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের আলাদা দুটি সংস্থাকেও দায়িত্ব দেন আদালত।
Advertisement
এমএমএস/পিআর