বর্ষা মৌসুমের পরে আরেক দফা ভাঙছে মধুমতি নদী। পানি কমছে আর ভাঙন বাড়ছে। নড়াইলের লোহাগড়ায় তিনটি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা মধুমতি নদীর ভাঙনে শতাধিক পরিবারের বসত বাড়ি ও বাজার নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।শালনগর ইউনিয়নের শিয়েরবর, নওখোলা, চাষিপুর ও আজমপুর অংশে এ বছর তীব্র ভাঙনে দুই কিলোমিটার এলাকার নারায়ন চৌধুরী, কার্তিক চৌধুরী, বাসুদেব চৌধুরী, কুতুব মোল্লা, আতিয়ার শেখ ,তারা আলী, আতর আলী সহ অন্তত ৮০টি পরিবারের বসত ভিটা বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের মুখে রয়েছে এ চারটি গ্রামের ৫০টি পরিবার। পার্শ্ববর্তী কোটাকোল ইউনিয়নের ঘাঘা বাজারের কয়েকটি চান্দি, দোকান,বসতবাড়ি তেলকাড়া ও করগাতি গ্রামের ২০টি ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এছাড়া ঘাঘা বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। এছাড়া মল্লিকপুর ইউনিয়নের মহিষাপাড়া,মঙ্গলহাটা ও ভাঙ্গা গ্রামের সাতটি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। গত দুই বছরে ব্রিটিশ আমলের শিয়েরবর বাজারের তিনটি চান্দি, অন্তত ৩৫টি দোকান, শতাধিক বসতবাড়ি, একটি রেস্ট হাউস, পাঠাগার, মসজিদ ও একমাত্র সরকারী প্রাইমারি স্কুলটি মধুমতি নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে।মধুমতি নদী ঘাঘা গ্রামের ইঞ্জিল মোল্লার সর্বস্ব কেড়ে নিয়েছে। গত তিন মাস আগে তার ঘরবাড়ি বসতভিটা সব গিলে খেয়েছে মধুমতি নদী। দুটি হালের গরু আর একটি দুধেল গাই বিক্রি করে দিয়েছেন পানির দামে। এবার মিলে মোট পাঁচবার নদী ভাঙনের কবলে পড়ে সব হারিয়েছেন। টাকার অভাবে ভাঙা ঘরের চালা ও খুঁটি নদী পাড়ে পড়ে আছে। এখন কোথায় ঘর তুলবেন তাও জানেন না। ঘাঘা পশ্চিমপাড়ার কবির মোল্লার তিন বছর ধরে আস্তে আস্তে মধুমতির কবলে চলে গেছে তিন বিঘা জমি। মাস খানেক আগে নদী ভাঙনে তার সর্বশেষ ভিটেটুকু চলে গেছে মধুমতির পেটে। বাধ্য হয়ে ঘাঘা গ্রামের কবরস্থানের পাশের একটু খালি জায়গায় ভাঙা চাল আর পাটকাঠির বেড়ার ঘরে সংসার পেতেছেন। গত কয়েক দিন পূর্বের মধুমতির ভাঙ্গনে একমাত্র মাথাগোজার ঠাই হারিয়েছেন মহিষাপাড়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা শেখ কিউবার হোসেন। সব হারিয়ে আট সদস্যের পরিবার নিয়ে তিনি নদীপাড়ে ছাপড়া তুলে বসবাস করছেন। শিয়েরবর গ্রামের ৮৫ বছরের জোহরা বেগম। স্বামী হারিয়েছেন বহু আগে। সন্তানরা তার কোনো খোঁজ রাখেন না। এ পর্যন্ত পাঁচবার মধুমতি নদী তার স্বামীর ঘর ভেঙে ফেলেছে। সর্বশেষ গত মাস খানেক আগে এক রাতে তার শেষ সম্বল আশ্রয়টুকু ও ভাঙনে চলে গেছে। এখন এ বাড়ি ও বাড়ি থেকে পরের বাড়ি খেয়ে তার দিন চলছে। কোটাকোল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খান জাহাঙ্গীর আলম জাগো নিউজকে বলেন, এ বছর ঘাঘা বাজারের চান্দি, দোকান, বসত বাড়িসহ তেলকাড়া ও করগাতি গ্রামের ২০টি ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এছাড়া ঘাঘা বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। সামনের বছর এ বাঁধ না ঠিক করলে পানি চারটি ইউনিয়নের বিভিন্ন বিলে প্রবেশ করবে এবং ফসল তলিয়ে যাবে। এ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান বি এম হেমায়েত হোসেন হিমু জাগো নিউজকে বলেন, এবারের ভাঙনে নিজের অর্থ দিয়ে এক হাজার জিও ব্যাগ ফেলেছি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের এদিকে কোনো খেয়ালই নেই।
Advertisement
শালনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. লাবু মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, এ বছর শিয়েরবর, নওখোলা, চাষিপুর, আজমপুর গ্রামে ৮০টি ঘরবাড়ি ভেঙেছে। এসব গ্রামের আরও প্রায় ৫০টি পরিবার ভাঙনের মুখোমুখি রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হলেও তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো সাহায্য পাওয়া যায়নি। ভাঙন কবলিত এসব মানুষ মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।নড়াইল-২ আসনের সাংসদ শেখ হাফিজুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষের সাহায্যের জন্য প্রশাসন বিভিন্ন সাহায্য করতে পারলেও এমপিদের করার কিছুই থাকে না। ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ও পানি সম্পদ মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। তবে তাদের কাছ থেকে ভালো কোনো আশ্বাস পাইনি।নড়াইলের জেলা প্রশাসক মো. হেলার মাহমুদ শরীফ জাগো নিউজকে বলেন, মধুমতি নদীর ভাঙন কবলিত এলাকার ব্যাপারে তথ্য নেয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে যা কিছু করণীয় তার সবই করা হবে।নড়াইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনিরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, আপাতত ঘাঘা-মহিষাপাড়া শিয়েরবর এলাকার মধুমতির ভাঙনের ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তেমন কিছুই করণীয় নেই। তবে মধুমতি নদীর এ অংশে নদী তীর বাঁধের জন্য প্রকল্প প্রণয়ন করা হয়েছে। এটি পাশ হলে আর ভাঙন থাকবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।হাফিজুল নিলু/এমজেড/আরআইপি