আন্তর্জাতিক

পর্যটন কেন্দ্র খুলে দেয়াতেই ইউরোপে দ্বিতীয় দফা সংক্রমণ?

কোভিড-১৯ থেকে সুস্থ হয়ে উঠলেই যে বিপদ কেটে গেছে, এমনটা ভাবার কিছু নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এ নিয়ে বারবার সতর্ক করছে। কিন্তু এমন আহ্বানকে গুরুত্ব না দেয়ার অন্যতম উদাহরণ ইউরোপ। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এ কারণেই আসছে শীতে আরও বড় মাসুল দিতে হতে পারে ইউরোপকে।

Advertisement

সংক্রমণ কমতে শুরুর পরই ব্যবসা-বাণিজ্য কেন্দ্রগুলো পুরোদমে সচল করেছিল ইউরোপ। খুলে দেয়া হয়েছিল স্কুল। এমনকি পর্যটনকে চাঙ্গা করতে ইউরোপের মধ্যে সফরে নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি তুলে দেয়া হয়। বিভিন্ন ধরনের ছাড় দেয়া শুরু করেছিল হোটেল-রেস্তোরাঁগুলো।

এ বিষয়ে সাহায্য করেছে সরকারও। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে এ সংক্রান্ত প্রচারও করেছে তারা। যেমন, নির্দিষ্ট কোনও একটি হোটেলে উঠলে মাথাপিছু ৫০ ইউরো ছাড়। দীর্ঘ চার-পাঁচ মাস ঘরবন্দি থাকার পরে তাই গরমের ছুটিতে বেরিয়ে পড়েছিলেন অনেকেই। বিশেষজ্ঞদের দাবি, এতেই সংক্রমণ বেড়েছে দ্রুত।

প্রশাসন নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতেই সপ্তাহান্তে সমুদ্র সৈকতে পার্টির আমেজ পড়ে যায় ব্রিটেনে। পাবগুলোতে উপচে পড়া ভিড়। এ ধরনের বেপরোয়া কাজকর্মকেই কাঠগড়ায় তুলেছে ব্রিটিশ সরকারকে। ইংল্যান্ডে ২০ লাখ মানুষকে ফের লকডাউন করে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া দেশজুড়ে ফের লকডাউনের পরিকল্পনা করছে সরকার।

Advertisement

এ পরিস্থিতিতে সরকার ঘোষণা করেছে, কেউ আক্রান্ত হলে তাকে ও তার সংস্পর্শে থাকা ব্যক্তিদের নজরদারি করা হবে। আইসোলেশনে থাকতে হবে তাদের। আর তা করলে এক থেকে ১০ হাজার পাউন্ড জরিমানা করা হবে। কোনও দরিদ্র ব্যক্তি ঘরবন্দি হয়ে পড়লে তাকে ৫০০ পাউন্ড অর্থসাহায্য করা হবে সরকারের পক্ষ থেকে।

ফ্রান্সেও সব পর্যটনস্থল খুলে দেয়া হয়েছিল। সেন নদীর তীরে উপচে পড়ছিল ভিড়, প্যারিসের রাস্তায় অসংখ্য মানুষ। এ ভাবেই দেশটিতে ফের দৈনিক সংক্রমণ বেড়ে ১৩ হাজার ছাড়িয়েছে। ইউরোপ যখন প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্র তখনও দেশটিতে একদিনে এত সংক্রমণ ঘটেনি।

নেদারল্যান্ডস প্রশাসন বলছে, এভাবে চলতে থাকলে সেখানেও দৈনিক সংক্রমণ ১০ হাজার ছাড়াবে। ডব্লিউএইচও ইউরোপ শাখার প্রধান হান্স ক্লুগ বলেন, মার্চেও ইউরোপ এমনটা ছিল না। তার কথায় এর অন্যতম কারণ, ‘সংক্রমণ ঠেকাতে জারি বিধিনিষেধ পরিস্থিতি একটু ভালো হতেই তুলে নিয়েছিল ইউরোপ।’

এ ছাড়া স্কুল খুললে শিশুদের মধ্যে সংক্রমণ বেড়ে যায়। কোয়ারেন্টাইনে যেতে হয়েছে স্পেনের রাজকন্যাকেও। স্কুলে তার সহপাঠী করোনায় আক্রান্ত হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ব্রিটেনে দৈনিক সংক্রমণ বেড়ে ৫০ হাজার ছুঁয়েছে। মৃত্যুও বাড়ছে। ফলে নতুন করে কিছু এলাকা লকডাউন। দেশজুড়ে তার চালুর কথাও ভাবা হচ্ছে।

Advertisement

ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর ডিজ়িজ় প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোলের (ইসিডিসি) দেয়া তথ্য অনুযায়ী ভারত কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা অনেকটা কম হলেও জনসংখ্যার বিচারে ইউরোপে করোনায় মৃত্যুহার ভারতের তুলনায় অনেক বেশি।

ইউরোপের জনসংখ্যা ৭৫ কোটি; যুক্তরাষ্ট্রে ৩৩। যে সময়ে ইউরোপে সংক্রমণ ঘটেছে ৪৪ লাখ এবং মৃত্যু ২ লাখ ১৭ হাজারের বেশি, সেই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে মোট সংক্রমণ ৬৭ লাখ; এর মধ্যে মৃত্যু ১ লাখ ৯৮ হাজার। ভারতে প্রতি ১০ লাখে ৬৩ জন জলে স্পেনে এই সংখ্যাটা ৬৫২, ফ্রান্সে ৪৭৯, ব্রিটেনে ৬১৪ এবং ইতালিতে ৫৯১ জন।

এসএ/জেআইএম