শিক্ষা

বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘টিফিন ফি’ আদায়

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে রাজধানীসহ সারাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও এসব প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে টিউশন ফির সঙ্গে নানা ধরনের ফি আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নানা অজুহাতে এসব অর্থ আদায় করা হচ্ছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা।

Advertisement

রাজধানীর মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাঁচটি শাখা। এসব শাখায় ৪০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে এই স্কুলে প্রতিমাসের টিউশন ফির সঙ্গে ভবন সংস্কার, ল্যাব ফি, গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎ বিল এবং পরীক্ষার ফি আদায় করা হচ্ছে।

এই স্কুলের অভিভাবকরা জানান, স্কুল বন্ধ থাকলেও টিউশন ফির সঙ্গে বিভিন্ন খাত দেখিয়ে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হচ্ছে। অতিরিক্ত অর্থ না দিলে টিউশন ফি গ্রহণ করা হচ্ছে না।

তারা বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও প্রতিমাসে পরীক্ষার ফি আদায় করা হচ্ছে। বাধ্য হয়ে সন্তানদের মাসিক বেতনের সঙ্গে নানা ধরনের ফি বাবদ অর্থ পরিশোধ করতে হচ্ছে। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন অভিভাবকরা।

Advertisement

এ বিষয়ে মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) ফরহাদ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা ফির জন্য অভিভাবকদের চাপ দিচ্ছি না। ২০ শতাংশের মতো অভিভাবক ফি পরিশোধ করছেন। এজন্য আমরা শিক্ষকদের আগস্টের বেতন পর্যন্ত দিতে পারিনি।’ তিনি আরও বলেন, অন্যান্য ফি আদায় করা হচ্ছে না। শুধু ভবন সংস্কার ও ল্যাব ফি আদায় করা হচ্ছে। 

ম্যাপল লিফ স্কুলে নবম শ্রেণিতে টিউশন ফি ৮ হাজার ৫৫০ টাকা। করোনা উপলক্ষে প্রতিষ্ঠানটি ৫০ টাকা (জরিমানা) ছাড় দিয়েছে। টিকাটুলির শেরেবাংলা মহিলা মহাবিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিফিন ফিও আদায় করা হয়েছে। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল ও কলেজে টিউশনের পাশাপাশি অন্যান্য খাতের ফি আদায় করা হয়েছে। উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শুধু বিলম্ব ফি মাফ করে অন্যান্য ফি শতভাগ আদায় করা হচ্ছে।

জানা গেছে, আবাসিক স্কুল-কলেজগুলো শিক্ষার্থীদের থাকা-খাওয়ার ফিও আদায় করছে। অথচ সব শিক্ষার্থী এখন বাসায় অবস্থান করছে।

রাজধানীসহ দেশের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের চিত্র প্রায় একইরকম। ফি আদায়ে অনেকটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

অভিযোগ রয়েছে, এ ক্ষেত্রে নানা কৌশলের আশ্রয় নেয়া হচ্ছে। কোনো প্রতিষ্ঠান ইউটিউবে পাঠ তুলে (আপলোড) দিচ্ছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান মেসেঞ্জারে বা হোয়াটসঅ্যাপে আর কোনোটি জুমে পাঠদানের ব্যবস্থা করেছে। এছাড়া ফেসবুকে শিক্ষকের পাঠদানের ভিডিও তুলে দেয়া হচ্ছে। এখানেই শেষ নয়, কিছু প্রতিষ্ঠান অনলাইনে পরীক্ষাও নিচ্ছে।

অভিভাবকরা বলছেন, করোনায় স্কুল-মাদরাসা ও কলেজ বন্ধ থাকায় পানি, বিদ্যুৎ, আপ্যায়নসহ বিভিন্ন খাতে ব্যয় বন্ধ আছে। শুধু শিক্ষকদের বেতন-ভাতা দেয়া হচ্ছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান আবার টিউশন ফি অনাদায়ী দেখিয়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের আংশিক বেতন-ভাতা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে এভাবে ফি আদায় অনৈতিক এবং অবৈধ।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, ‘অভিভাবক এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান উভয়পক্ষকে এ ব্যাপারে মানবিক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। সেটিকে গুরুত্ব না দিয়ে অনেক প্রতিষ্ঠান ইচ্ছেমতো টিউশন ফির সঙ্গে নানা খাতের নামে অর্থ আদায় করার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও নানা ধরনের ফি আদায় করা হচ্ছে। এটি অনাকাঙ্ক্ষিত। বিষয়গুলো মনিটরিং করতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরকে বলা হবে।’

তবে উচ্চ আদালতে এ নিয়ে মামলা বিচারাধীন থাকায় উদ্যোগ নিয়েও আদেশ জারি করা যায়নি বলে জানান সচিব মো. মাহবুব হোসেন।

এমএইচএম/এসআর/জেআইএম