নওগাঁর রানীনগরে ফসলে ভেজাল কীটনাশক ব্যবহার করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরা। ধানের পোকা দমনে কৃষক না বুঝে দোকান থেকে কিনে ফসলে ব্যবহার করছেন। এতে উপকারের পরিবর্তে উল্টো ক্ষতি হচ্ছে। একদিকে যেমন ফসলের ক্ষতি হচ্ছে অপরদিকে আর্থিক ক্ষতিরও মুখে পড়ছেন কৃষকরা।
Advertisement
জানা গেছে, ইনতেফা কোম্পানি ‘বাতির’ নামক কীটনাশক কোম্পানির নির্ধারিত দোকানগুলোর মাধ্যমে বাজারে বিক্রি করে থাকে। রানীনগর উপজেলায় গত দুইমাস থেকে ‘বাতির’ নামক কীটনাশক বাজারে নেই। কোম্পানির নির্ধারিত দোকানগুলোতে এ কীটনাশক না থাকলেও বাইরের কিছু দোকানে পাওয়া যাচ্ছে। কৃষকরা ধানের পোকা দমনে এ কীটনাশক স্প্রে করেন। কিন্তু কিছুতেই পোকা দমন সম্ভব হচ্ছে না। উল্টো কোম্পানির বিরুদ্ধে তাদের বিভিন্ন অভিযোগ। কোম্পানির এ ‘বাতির’ কীটনাশক যেতেহু দুইমাস থেকে সরবরাহ নেই সেহেতু বিষয়টি নিয়ে কোম্পানির জেলা প্রতিনিধিরা মাঠে নামেন। পরে দেখেন বাজারে যে ‘বাতির’ নামক কীটনাশক আছে সেটি তাদের না। হুবহু তাদের কীটনাশকের মোড়ক নকল করে বাজারে বিভিন্ন কীটনাশকের দোকানে বিক্রি করা হচ্ছে। আর কৃষকরা না বুঝে ওই নকল কীটনাশক কিনে প্রতারিত হচ্ছেন। নকল কীটনাশক উদ্ধারে দ্রুত প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন কৃষকরা।
কোম্পানির পক্ষ থেকে উপজেলা প্রশাসনকে অবগত করা হয়। গত ১৫ সেপ্টেম্বর উপজেলার আবাদপুকুর বাজারে উপজেলা প্রশাসন অভিযান পরিচালনা করে। এসময় নকল ‘বাতির’ কীটনাশক বিক্রি করার দায়ে কীটনাশক ব্যবসায়ী লুৎফর রহমানকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
উপজেলার যাত্রাপুর গ্রামের কৃষক মুনছুর আলী বলেন, প্রায় আড়াইমাস আগে বাতির কীটনাশক ১০০ গ্রাম ওজনের কিনেছিলাম। গত ১৫-২০ দিন আগে আবারও কেনার জন্য আবাদপুকুর বাজারে গিয়ে অনেক খুঁজে একটা দোকানে পেয়েছি। ১০০ গ্রাম ওজনের দাম ২৮০ টাকা। এছাড়া প্যাকেটের ভেতরে দানা ভাব ছিল। সন্দেহ হওয়ায় সেটি আর নিইনি। যারা ওই দোকান থেকে বাতির কীটনাশক কিনেছে তারা প্রতারিত হয়েছে।
Advertisement
আবাদপুকুর বাজারের কীটনাশক ব্যবসায়ী লুৎফর রহমান বলেন, ‘বাতির’ কীটনাশক আসল না নকল তা জানি না। তবে কোম্পানির লোক পরিচয় দিয়ে দোকানে দিয়েছিল। পরে কোম্পানির আসল লোকজন প্রশাসনের সঙ্গে এসে অভিযান চালিয়ে নকল বলে জব্দ করে। তবে যারা ওই কীটনাশক সরবরাহ করে আসছিল তারা আর আসে না।
ইনতেফা কোম্পানির এরিয়া ম্যানেজার আবু সাঈদ বলেন, গত দুই মাস থেকে কোম্পানির ওই কীটনাশক সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। কিন্তু তারপরও কিছু কিছু কীটনাশক ব্যবসায়ী নকল ‘বাতির’ কীটনাশক বিক্রি করে আসছিলেন। কৃষকরা ওই কীটনাশক ব্যবহার করে অভিযোগ করেন। এরপর আমরা বাজারে গিয়ে কীটনাশক ব্যবসায়ীদের কাছে ‘বাতির’ কীটনাশকটি দেখি। সেটা নকল বলে প্রতিয়মান হয়। আমাদের কোম্পানির মনোগ্রামসহ সবকিছু নকল করা হয়েছে। কোম্পানির লোক পরিচয় দিয়ে যিনি কীটনাশক সরবরাহ করতেন তাদের একজনের নামও আমরা পেয়েছি। বিষয়টি কোম্পানিকে অবগত করা হয়েছে।
রানীনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে অভিযান চালিয়ে ভেজাল কীটনাশকের সত্যতা পাওয়া যায়। তবে কীটনাশক ব্যবসায়ীরা কোথা থেকে কিভাবে সেগুলো কিনেছেন তা বলতে চান না। ভেজাল কীটনাশক বিক্রি বন্ধ এবং কৃষকদের বাঁচাতে এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
আব্বাস আলী/এফএ/এমএস
Advertisement