বিশেষ প্রতিবেদন

‘না’ ভোট ফেরানোর পক্ষে নির্বাচনী কর্মকর্তারা

নির্বাচনে কোনো প্রার্থীকে পছন্দ না হলে ‘না’ ভোট দেয়ার বিধান ফিরিয়ে আনার পক্ষে মত দিয়েছেন নির্বাচনী কর্মকর্তারা। নির্বাচন কমিশন (ইসি) তাদের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছে মতামত চাইলে বেশির ভাগই ‘না’ ভোট ফিরিয়ে আনার পক্ষে মত দেন। ইসি সূত্র জানায়, গত ১০ জুন গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ (আরপিও) সংশোধনের বিষয়ে বিভাগীয় আঞ্চলিক কার্যালয় এবং জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের পাঁচ শতাধিক কর্মকর্তার কাছে মতামত চেয়ে চিঠি দেয় কমিশন। সে অনুযায়ী নির্বাচন কর্মকর্তারা আরপিও’র বিভিন্ন ধারায় সংশোধনের প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। ‘না’ ভোট ছাড়াও আরপিও’র বিভিন্ন ধারা সংশোধনের জন্য মতামত দিয়েছেন তারা। ইসি সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে সবাই মতামত দিয়েছেন। আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব। জানা যায়, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংজ্ঞায় ‘সশস্ত্র বাহিনী’ ফিরিয়ে আনা, একাধিক প্রার্থী সমান ভোট পেলে ‘লটারির নিয়ম’ বাদ দিয়ে নতুন করে ভোটের বিধান করা এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনের তালিকা দেওয়ার বিধান বাদ দেওয়ারও সুপারিশ এসেছে। খুলনার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মজিবুর রহমান তার প্রস্তাবে ‘না’ ভোট চালু করতে বলেছেন। কোনো নির্বাচনী আসনে ৫০ শতাংশ ভোট না পড়লে পুনরায় ভোট গ্রহণের সুপারিশ রেখেছেন তিনি। এছাড়া ‘না’ ভোট চালুর প্রস্তাব দিয়েছেন সিলেটের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা এজহারুল হকও। নির্বাচনী ব্যয়ের রিটার্ন প্রার্থীরা যথাসময়ে না দিলে কঠোর হওয়ার পক্ষেও তার মত।দুই বা ততোধিক প্রার্থী সমান ভোট পেলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান লটারি পদ্ধতি বাদ দিয়ে আবার ভোটের প্রস্তাব করেছেন রাজশাহীর নির্বাচন কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র সরকার। সেই সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কেও অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব তার।ভোলার নির্বাচন কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে বিদ্যমান ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনের বিধান বাদ দেয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। এখন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ হলেও তা বদলে সকাল ৭টা থেকে বিকাল ৩টা করার সুপারিশ করেছেন এই কর্মকর্তা।জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব মইনুদ্দিন খান অনলাইনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা নেওয়ার সুযোগ চান। তার প্রস্তাব, দেশের ভেতরে যে কোনো প্রার্থী যাতে অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেন সেই সুযোগ আরপিওতে রাখা যেতে পারে।খাগড়াছড়ির জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা তার প্রস্তাবে বলেছেন, জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে ইসি কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়ার বিষয়টি সংশোধন করা যেতে পারে। বর্তমানে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিচ্ছে কমিশন।প্রসঙ্গত, ফখরুদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সংশোধিত নির্বাচনী আইনে নবম সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ‘না’ ভোট দেয়ার সুযোগ পান বাংলাদেশের ভোটাররা। ওই নিয়মে প্রার্থী পছন্দ না হলে একজন ভোটার ব্যালট পেপারে ‘উপরের কাহাকেও নহে’ লেখা একটা ঘরে সিল দিতে পারতেন।কোনো আসনে ‘না’ ভোটের সংখ্যা বাক্সে পড়া মোট ভোটের অর্ধেক বা তার বেশি হলে নতুন করে ভোট আয়োজনের বিধানও ছিল। নবম সংসদের পর আরপিও সংশোধন করে ‘না’ ভোটের বিধান বাদ দেয়া হয়।এছাড়া ভোটের নিরাপত্তার দায়িত্বে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংজ্ঞায় সশস্ত্র বাহিনীও ছিল। পরে আইন সংশোধনে তা বাদ পড়ে। আর স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচনে সমান ভোট পাওয়ার ক্ষেত্রে নতুন করে ভোটের বিধান থাকলেও সংসদ নির্বাচনে এখনো লটারি পদ্ধতি বিদ্যমান রয়েছে।১৯৭২ সালে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ প্রণয়নের পর এ পর্যন্ত ১১ বার সংশোধনী এসেছে। এর মধ্য দিয়ে বিভিন্ন অনুচ্ছেদে অন্তত ২০৯টি বিষয়ে সংযোজন-বিয়োজন হয়েছে।এইচএস/এসএইচএস/আরএস/এমএস

Advertisement