বিশেষ প্রতিবেদন

ওষুধ সংকটে ফরিদপুরের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো

চিকিৎসা প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার। বিভিন্ন সরকার সেই অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করেলেও জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী পূরণ হয়নি গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবা। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন ১৯৯৮-২০০১ সালে গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবাকে মানুষের দৌড় গোড়ায় পৌঁছে দিতে দেশব্যাপি প্রতিটি ইউনিয়নে ৩টি করে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করার পরিকল্পনা গ্রহণসহ বাস্তবায়ন করা হয়। এই ক্লিনিকগুলো দ্বারা গ্রামের মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, স্বাস্থ্য উন্নয়ন, পুষ্টি ও পরিবার পরিকল্পনা সংক্রান্ত তথ্য ও সেবাসহ বিভিন্ন চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করা হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি সরকারের উচ্চতর স্বাস্থ্য সেবার সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের মাধ্যম কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। ফরিদপুর সদর উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে মোট আটত্রিশটি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। সেখানে সপ্তাহে ছয়দিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত একজন সার্ভিস কেয়ার প্রোভাইডার(সিএইচসিপি) চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকেন। বিভিন্ন এলাকার লোকজন অভিযোগ করেন, সময় মতো গিয়ে চিকিৎসা সেবা না পেয়ে ফিরে আসেন তারা। সদর উপজেলার মাচ্চর ইউনিয়নের ধুলদী বাজার কমিউনিটি ক্লিনিকের কমিটির সদস্য চুন্নু মোল্যা বলেন, তাদের এই ক্লিনিকটিতে মাসের প্রথম দু’এক সপ্তাহের মধ্যেই ওষুধ শেষ হয়ে যায়। রোগীরা এসে ফিরে যায়। তাছাড়া সার্ভিস কেয়ার প্রোভাইডারের বিরুদ্ধে অফিস ফাঁকি দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। সরেজমিনে দেখা যায়, ধুলদী বাজার কউিনিটি ক্লিনিকে সিএইচসিপি মামুন সেখ বেলা ১টার আগেই তালা ঝুঁলিয়ে চলেন গেছে। সদর উপজেলার অম্বিকাপুর ইউনিয়নে রঘুনন্দনপুর কমিউনিটি ক্লিনিকে আশা নুরজাহান বেগম বলেন, এখানে প্রেসার মাপার যন্ত্র নেই, ডায়াবেটিস পরিমাপের কোনো ব্যবস্থা নেই। গ্যাসের ওষুধ ও জ্বরের ওষুধই এখানে বেশি পাওয়া যায় বলে তিনি জানান। জেলার অধিকাংশ ক্লিনিকে বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় গরমের সময় ক্লিনিকগুলোতে কাজ করা দুরূহ হয়। জ্বর ও গ্যাসের সমস্যায় আসা হাসিনা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, আমরা গ্রামের মানুষ একটু শারীরিক সমস্যা হলেও বাড়ির পাশের ক্লিনিকে এসে চিকিৎসা পায়। আর যদি এটি না থাকতো তাহলে গ্রামের মানুষের সাধারণ চিকিৎসার জন্য প্রায়ই শহরের যেতে হতো। তাই সরকারের কাছে অনুরোধ এই ক্লিনিকগুলো যাতে আগের মত আবার বন্ধ না হয়ে যায়। রঘুনন্দনপুরের কমিউনিটি ক্লিনিকে জমি দানকারী লতিফ খার ভাই সাবেক ইউপি সদস্য জসিম জাগো নিউজকে বলেন, গ্রামের গরীব অসহায় মানুষের চিকিৎসা সেবার জন্য এই ক্লিনিক সরকার নির্মাণ করে দিয়েছে। সেবা একটু কম হলেও এই ক্লিনিক যাতে বন্ধ না হয়। সরকার যেন আগামীতে আরো বেশি বেশি স্বাস্থ্য সেবার ব্যবস্থা করে আমরা তাই চায়। এই ক্লিনিকটির সিএইচসিপি সুজয় কুমার দাস জাগো নিউজকে জানান, তার ক্লিনিকে প্রতিদিন গড়ে ৪০ থেকে ৪৫ জন পুরুষ, নারী ও শিশুদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকে। জ্বর, ঠান্ডা, গ্যাষ্টিক, ডায়রিয়া, চোখের ড্রপ, চর্মরোগ, পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ছাড়াও বিভিন্ন প্রকারের ভিটামিন ওষুধসহ সরকার কর্তৃক পাওয়া ২৮ পদের ওষুধের মধ্যে রোগীদের প্রয়োজন অনুযায়ী বিনা মূল্যে তিনি তা সরবরাহ করেন। এদিকে নদী ভাঙনের কারণে সদর উপজেলার আলিয়াবাদ, নর্থচ্যানেল, ডিক্রিরচরে বেশ কয়েকটি কমিউনিটি ক্লিনিক নদীতে চলে গেছে। ডিক্রিচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাদেকুজ্জামান মিলন পাল জানান, তার এলাকায় মাত্র একটি কমিউনিটি ক্লিনিক আছে। চরাঞ্চলের মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে শিগগিরই আরো দুটি ক্লিনিক স্থাপনের দাবি জানান তিনি। ফরিদপুর সদর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও ভারপ্রাপ্ত স্টোর কিপার মো. লুৎফর রহমান জাগো নিউজকে জানান, প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিক বছরে তিন পর্বে দুই কার্টুন করে ওষুধ দিয়ে থাকে। এছাড়া কিছু ওষুধ অফিসে মজুদ রাখা হয় যা আপদকালীন সময়ে ব্যবহার করা হয়ে থাকে অথবা কোনো ক্লিনিকে ওষুধের বিশেষ প্রয়োজন হলে বিবেচনার ভিত্তিতে তাদের তা সরবরাহ করে থাকি।ফরিদপুর সদর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনার থানা পরিদর্শন কর্মকর্তা (টিএসও) ডা. আব্দুল আজিজ জাগো নিউজকে জানান, গ্রামের মানুষের কাছে চিকিৎসা সেবা সহজতর করতে প্রত্যেকটি কমিউনিটি ক্লিনিক কাজ করে যাচ্ছে। এটি সচল থাকলে গ্রামের মানুষকে প্রাথমিক চিকিৎসাসহ অনেক রোগের জন্যই আর আগামীতে শহরে চিকিৎসা নিতে আসতে হবে না। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে কোনো ধরনের অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেলে আমারা তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেব বলেও তিনি জানান।  জেলা সিভিল সার্জন ডা. অজিত রঞ্জন দাস জাগো নিউজকে জানান, জেলার ৯টি উপজেলার সর্বমোট ১৮৫টি কমিউনিটি ক্লিনিক আছে এবং ১৯৩ জন পুরুষ ও নারী সিএইচসিপি ক্লিনিকগুলোতে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। বিএনপি সরকারের আমলে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ২০০৮ সাল থেকে আবার সবগুলোতে পর্যায়ক্রমে চিকিৎসা দিয়ে আসছে। সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলার ৪টি পৌরসভা ছাড়া ফরিদপুর সদর উপজেলা এলাকায় ৩৮টি, চরভদ্রাসনে ৮টি, সদরপুরে ১০টি, ভাংগাতে ৩১টি, নগরকান্দা-সালথায় ৩৭টি, বোয়ালমারীতে ২৪টি, আলফাডাঙ্গাায় ১৩টি এবং মধুখালী উপজেলায় ২৪টি সর্বমোট ১৮৫টি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে জনগণকে চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে।এসএস/এমএস

Advertisement