দেশজুড়ে

মঙ্গা এবার অনেক দূরত চলি গেইছে

তিস্তা নদীর চরাঞ্চলে হয়েছে আমনের বাম্পার ফলন। তিস্তাবাসী মঙ্গার অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে যাচ্ছেন। নীলফামারীর ডিমলায় তিস্তা পাড়ের এক সময় হতদরিদ্র শ্রমিকরা চেয়ারম্যান-মেম্বরদের পেছনে ত্রাণের জন্য ছুটলেও এবার ভিন্ন চিত্র চোখে পড়ছে। তিস্তা চরের গ্রামের জমিতে এবার সোনা ফলেছে। চরের জমিতে এ যেন অপ্রত্যাশিত আমনের বাম্পার ফলন। ডিমলার কালিগঞ্জ জিরো পয়েন্ট থেকে খালিশা চাপানির ছাতুনামা ভেণ্ডাবাড়ী পর্যন্ত দীর্ঘ ৫০ কিলোমিটার তিস্তা নদী ডানতীর বাঁধ। এসব চর গ্রামে এবার কোনো জমি পতিত ছিল না। নদী ভাঙন আর বন্যায় নিঃস্ব আর সংগ্রামী তিস্তা পাড়ের মানুষরা এবার যেন সংগ্রামী হয়ে উঠেছেন। তিস্তার পলিমাটির জমিতে এবার আমনের সোনা ফলেছে। সরেজমিনে গত দুই দিনে তিস্তার বিভিন্ন চর ঘুরে দেখা যায় আমনের মৌ মৌ গন্ধে ভরে উঠেছে এলাকা। বইছে আমনের সু-বাতাস। এমন বাতাস তিস্তা চরের সংগ্রামী মানুষজনকে আনন্দে আত্মহারা করে তুলেছেন। এবার তিস্তার বন্যা বা ভাঙন খুব একটা ছিল না। এদিকে বাজারে নতুন আমনের এক বস্তা ধানের মূল্য ১২শ টাকা। প্রতি মণের দাম পড়ছে ৬শ টাকা করে। কৃষকরা এ দাম পেয়েও মহাখুশি। তিস্তার ঝাড়শিঙ্গেরশ্বর চর, চরখড়িবাড়ি, কিসামত ছাতনাই চর, বাইশপুকুর চর, ছাতুনামা চর, উত্তর খড়িবাড়ির চর, ভেণ্ডাবাড়ির চর ঘুরে দেখা গেছে চরের জমিতে ধান আর ধান। জাত ভেদে আবাদ হয়েছে ডাঙ্গা চায়না, স্বর্ণা, ব্রি ৪০, বিনা-৭, ব্রি-৩৩, ব্রি-৩৯, মমতাজ, মামুন স্বর্ণসহ রকমারি জাতের ধান। চরের জমির ধানের আবাদের কোনো পরিসংখ্যান সঠিকভাবে কেউ বলতে না পারলেও ধারণা করা হচ্ছে নীলফামারী, লালমনিরহাট ও রংপুর জেলায় তিস্তার চরের ভেতর প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার হেক্টরে আমন আবাদ হয়েছে। নীলফামারী কৃষি অধিদফতরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা আফতাব হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, চরের বালুতে এবার আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। তিনি আরও জানান, এবার তিস্তার ১২টি চরের ৫৫০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধানের হিসেবে ধরা হয়েছে ২ হাজার ৪৭৫ মেট্রিকটন।পল্লীশ্রী রিকল প্রকল্পের সমন্বয়কারী পুরান চন্দ্র বর্মন জানান, বর্তমানে জিও-এনজিওগুলোর মাধ্যমে ব্যাপক বন্যা সহিঞ্চু বিভিন্ন জাতের পাশাপাশি অত্যন্ত সফলভাবে ব্রি-৫১, ব্রি-৫২ এবং মঙ্গা মোকাবেলার জন্য ব্রি-৩৩ ও বিনা-৭ চাষ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, পল্লীশ্রী রি-কল প্রকল্পটি তিস্তার পাড়ের হতদরিদ্রদের স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে কাজ করছে। এক সময় তিস্তার দুর্গম চরবাসীদের মঙ্গা কুড়ে কুড়ে খেত। খাদ্যের সন্ধানে তাদের ছুটতে হতো দেশের দক্ষিণাঞ্চলে ও ঢাকায় রিকশা-ভ্যান চালনোর জন্য। এবার আর তাদের ছুটতে হয়নি। অভার আর মঙ্গাকে জয় করতেই তাদের যেন শপথ। তারা আর একখণ্ড চরের জমি পতিত রাখতে চান না। এই শপথ নিয়ে তারা নেমে পড়েছিলেন চরের জমিতে। তিস্তার বালুতে হতদরিদ্র কৃষকরা পেয়েছেন সোনার বাংলায় সোনার ফসল। এবার তিস্তা নদীর পাড়ে বালুময় চরের জমিগুলোতে হেমন্তের পাকধরা ধানের মৌ মৌ গন্ধে এলাকায় উড়ছে আনন্দের জোয়ার এবং মনে হচ্ছে এটা চর বা বেলে ভূমি নয় যেন দেশের সমতল ভূমি। পাশাপাশি চরের জমিতে ব্যাপকভাবে আবাদ করা হয়েছে বিভিন্ন শাকসবজি। অভাব আর কষ্টের কথা নয় এবার খাদ্য নিয়ে দুশ্চিন্তা ঘুঁচেছে নদী ভাঙা পাঁচ হাজার মানুষের সংসারে। এখানকার মানুষজন এবার বলছেন, বাহে মঙ্গা এইবার হামার থাকি অনেক দূরত চলি গেইছে। তিস্তা নদীর ঝাড়সিংহেশ্বর, চরখড়িবাড়ি, ছাতুনামা চরের নদী ভাঙা মানুষ বছরের বেশিরভাগ সময় নদীর ওপারে সীমান্ত পেরিয়ে কাশবনের ছন সংগ্রহ করে তা বিক্রী কোনোরকমে জীবিকা নির্বাহ করতেন। বালুমাটি চিরে ফসল ফলানো সংগ্রামী কৃষকদের কয়েকজন নজরুল মণ্ডল, সহিদুল ইসলাম, জসিম উদ্দিন, আবুল কালাম। নজরুল মণ্ডল (৫২) জাগো নিউজকে জানান, বাবগোর আমাগোর জমিতে এবার সোনা ফলিছে। কৃষকরা জানান, বিঘা প্রতি এবার ১২-১৪ মণ পর্যন্ত ধান হয়েছে। চরের জমির তুলনায় এটা অনেকটা অপ্রত্যাশিত। গত বছর আমন চাষে চাষিরা বিঘা প্রতি ৬-৭ মণ করে ধান পেয়েছিলেন।                                                                                                                                                   

Advertisement

জাহেদুল ইসলাম/এমজেড/এমএস