সম্প্রতি ইতালি ও জাপানের নাগরিক হত্যা, পীর হত্যা, হোসনি দালানে বোমা হামলা, এএসআই খুন, একজন প্রকাশককে হত্যা ও অপর প্রকাশকসহ দুই ব্লগারকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় প্রশাসনের কর্মকাণ্ড প্রশ্নের সম্মুখীন এ ধরনের ঘটনার জন্য সরকারকেও বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়েছে। আর তাই শিগগিরই পুলিশের বিভিন্ন পদে বড় ধরনের রদবদল নিয়ে আসছে সরকার। পুলিশের একটি দায়িত্বশীল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, গত ১ বছরে পুলিশে তেমন বড় কোনো রদবদল হয়নি। তবে সম্প্রতি ঢাকাসহ সারাদেশে নানা ধরনের অপরাধ ও হত্যাকাণ্ড বেড়ে যাওয়ায় পুলিশের শীর্ষ ও মাঠ পর্যায়ের (অপারেশন্স) কর্মকর্তাদের রদবদলের কথা ভাবছে সরকার। সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন স্থানে দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। যারা ইচ্ছাকৃতভাবে দায়িত্ব পালনে অবহেলা বা গাফিলতি করছেন, তাদের তালিকাও করা হচ্ছে। এ ধরনের কর্মকর্তাদের মাঠপর্যায় থেকে সদর দফতর এবং বিভাগীয় পুলিশ সদর দফতরে ফিরিয়ে আনা হবে। রদবলের তালিকায় থাকতে পারেন মেট্রোপলিটন এলাকার উপ-কমিশনার (ডিসি) ও বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপার সমপর্যায়ের কর্মকর্তারা। দ্রুত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করা হবে বলে জানা গেছে। শনিবার রাজধানীর লালমাটিয়া এবং শাহবাগে একই সময়ে দুই প্রকাশককে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এদের মধ্যে জাগৃতি প্রকাশনীর ফয়সাল আরেফিন মারা গেলেও প্রাণে বেঁচে গেছেন শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর প্রকাশক আহমেদুর রশিদ টুটুল। ৮ মাস আগে পুলিশের কাছে নিরাপত্তা চেয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করলেও টুটুলকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয় পুলিশ। চলতি বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর গুলশানের হাই সিকিউরিটি ডিপ্লোম্যাটিক জোনে ইতালির নাগরিক তাবেলা সিজারকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। সে সময় সড়কে পুলিশ সদস্যরা থাকলেও হত্যাকারীদের ধরতে ব্যর্থ হয় তারা। যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস এ বিষয়ে আগাম সতর্কবাণী দিলেও তা প্রতিরোধ গড়তে পারেনি তারা। ২০১৩ সালে গোপীবাগে ফারুক নামে পীরকে এবং ২০১৪ সালে ইসলামি অনুষ্ঠানের উপস্থাপক মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকীকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। একের পর এক মাজারের অনুসারী পীরদের উপর হামলা চালানোর পরও তাদের নিরাপত্তায় তেমন কোন ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। এরই ফলশ্রুতিতে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ও রাহমানিয়া খানকা শরীফের পীর খিজির খানকেও হত্যা করা হয় বলে ধারণা করছেন সাধারণ মানুষ। এর কয়েকদিন পরেই গাবতলীতে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে নিহত হন পুলিশের এএসআই ইব্রাহীম। ঘটনাস্থল থেকে গ্রেফতার হওয়া মাসুদ জানান বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা নিয়ে তারা ঢাকায় আসে। বিষয়টিও আগে থেকে জানা ছিল না পুলিশ কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সংস্থার! এ ঘটনার পর নিরাপত্তা বাড়ানো হয় রাজধানীর পূজা মণ্ডপগুলোর। তবে দুর্গাপূজার প্রতিমা বিসর্জনের দিন রাতেই অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে বোমা হামলা চালানো হয় শিয়া সম্প্রদায়ের অন্যতম মিলনাস্থল পুরান ঢাকার হোসনি দালানে। দালানের প্রবেশ পথ এবং ভেতরে অসংখ্য পোশাকধারী ও সাদা পোশাকের র্যাব-পুলিশ থাকলেও তারা বোমা হামলা ঠেকাতে ব্যর্থ হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশ সদর দফতরের এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে জানান, রাজধানীতে একের পর হত্যাকাণ্ডের কারণে সরকার বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে। সাম্প্রতিক এই সংকট মোকাবেলায় তারা প্রধানত অপারেসন্সের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পদসমূহে রদবদলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এআর/জেডএইচ/এসএইচএস/এমএস
Advertisement