অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির (ইজিপিপি) আওতায় শ্রমিকদের দিয়ে কাজ না করিয়ে চেয়ারম্যানরা ভৌতিক নামে ব্যাংক হিসাব খুলে টাকা উঠিয়ে নেন বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ বি তাজুল ইসলাম।
Advertisement
বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) ‘উত্তর-পশ্চিম জেলাসমূহে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়নের কার্যকারিতা’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এবং অক্সফাম ইন বাংলাদেশ যৌথভাবে এই আলোচনার আয়োজন করে।
এ বি তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের যে ইজিপিপি কর্মসূচি আছে, সেখানে ২০০ টাকা একটা শ্রমিকের বেতন। আজকাল ২০০ টাকায় বাংলাদেশে কোনো শ্রমিক পাওয়া যায় না। সেটা আমরা সংসদীয় কমিটি থেকে সুপারিশ করেছিলাম ৫০০ টাকা।’
তিনি বলেন, ‘২০০ টাকায় সমস্যাটা কী হচ্ছে? ২০০ টাকা দেয়ার কারণে আমাদের জনপ্রতিনিধি এবং সরকারি কর্মকর্তাকে অবৈধ পথ বেছে নেয়ার সুযোগ করে দিচ্ছি। কারণ যখন ২০০ টাকায় শ্রমিক পাচ্ছে না, লোকাল চেয়ারম্যান…লোকের নাম দিয়ে ব্যাংকে হিসাব খোলে। এটা আসলে ভৌতিক লোক। যখন টাকাটা আসে, তখন সে টাকাটা উঠিয়ে নিয়ে যায়। ওই নামে কোনো শ্রমিক কাজ করে না।’
Advertisement
তাজুল ইসলাম বলেন, ‘২০০ টাকায় শ্রমিক পাচ্ছে না, সে কারণে সে এই পথ বেছে নেয়। সে ভ্যাকু মেশিন দিয়ে কাজ করে। এতে তার অনেক লাভ হয়। এতে সরকারের যে উদ্দেশ্য ছিল জনগণের কাছে কিছু রিসোর্স পৌঁছে দেয়া, সেটা কিন্তু ব্যাহত হচ্ছে।’
‘মজুরি ৫০০ টাকা করা হলে শ্রমিকরা হয়তো আগ্রহী হবেন। ৫০০ টাকাও যথেষ্ট না। তারপরও আমাদের মনে হয় ৫০০ টাকা করা হলে চেয়ারম্যানরা শ্রমিকদের ব্যবহার করবেন এবং তৃণমূল জনগোষ্ঠীর আর্থিক সচ্ছলতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে’, বলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি।
তিনি বলেন, ‘গরিব, হতদরিদ্র, বয়স্ক ভাতার তালিকা স্থানীয়ভাবে তৈরি করা হয়। তখন মেম্বার, চেয়ারম্যানরা দেশপ্রেমে প্রবাহিত না হলে সঠিক তালিকা হয় না। সেজন্য এটার অনেক দুর্বলতা আছে। এটাকে আমাদের আরও অ্যাড্রেস করতে হবে, যাতে করে আমরা একটি পারফেক্ট ডাটাবেজ তৈরি করতে পারি। তাহলে মানুষ ন্যায়বিচার পাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের মেম্বার, চেয়ারম্যানরা যে তালিকা তৈরি করেন, সেটি অত্যন্ত কঠিন কাজ। এখানে মেম্বার, চেয়ারম্যানরা তাদের স্বজনদের ক্লাস থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না। ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে এটা করা অত্যন্ত কঠিন হয়।’
Advertisement
সামাজিক সুরক্ষার আওতায় সরকার থেকে ব্যাংকের মাধ্যমে দেয়া আর্থিক সুবিধার বিষয়ে তিনি তাজুল ইসলাম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন সময়ে বলেছেন, ব্যাংকিং সিস্টেমের চার্জটা কীভাবে মওকুফ করা যায়। আর যদি মওকুফ করা না যায়, তাহলে সরকার সেই চার্জটা দিয়ে দেবে। যাতে করে যিনি সুবিধাভোগী তার কাজ থেকে চার্জটা কাটা না যায়।’
মাতৃত্বকালীন ভাতা একবার না দিয়ে চারবার দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয় সিপিডির পক্ষ থেকে। এর প্রেক্ষিতে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘মাতৃত্বকালীন ভাতা বছরে একবার না দিয়ে চারবার দেয়ার সুপারিশ এসেছে। এটা খুব একটা কঠিন কাজ না। যে টাকা আমরা দেব, সেই টাকা তিনবার বা চারবারে ভাগ করে দেয়ার বিষয়ে আমি আমার মন্ত্রণালয়কে সাজেশন দেব।’
স্কুলের পরিবেশ ভালো করার পরামর্শ দিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বলেন, ‘বাচ্চা যখন স্কুলে যায়, তখন স্কুলের পরিবেশ বাসার পরিবেশ থেকে ভালো না হলে সে বাসায় ফিরে আসতে চাইবে। সে কারণে স্কুলের পরিবেশ আরও বেশি মনোমুগ্ধ করতে হবে।’
এমএএস/এসআর/জেআইএম