ছোটবেলা থেকেই রং পেন্সিল নিয়ে আঁকিবুঁকি। মনের ক্যানভাসে ছবি আঁকতে আঁকতে সেটাই নেশায় পরিণত হয়। তবে তা পড়াশোনা ফাঁকি দিয়ে নয়। কেবল অবসর পেলেই রং পেন্সিল নিয়ে বসে যান আতিক। শৈশবের দিনগুলো ক্রিকেট খেলেও কেটেছে তার। তবে সবচেয়ে বেশি উৎসাহ পেয়েছেন ছবি এঁকে। এখন স্মার্টফোন দিয়ে কার্টুন বানিয়ে আয় করছেন তিনি। বিস্তারিত জানাচ্ছেন শেখ নাসির উদ্দিন—
Advertisement
মেডিকেল সহকারী ট্রেনিং স্কুলের (ম্যাটস) প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আতিকুর রহমান রানা। টাঙ্গাইলের কালিহাতী সদরের মো. ইয়াসিন আলীর অভাব-অনটনের সংসারে পড়াশোনা করতে গিয়ে আর্থিক সংকটে পড়েন। তবুও দমে যাননি। সপ্তম শ্রেণি থেকেই ছোটদের প্রাইভেট পড়িয়ে পড়াশোনার খরচ চালিয়েছেন। নিজে কখনো প্রাইভেট না পড়ে পঞ্চম শ্রেণি ও অষ্টম শ্রেণিতে ভালো ফলাফল করে পেয়েছেন উপবৃত্তি। অষ্টম শ্রেণির উপবৃত্তির টাকায় কিনেছেন স্মার্টফোন।
তারপর থেকে স্মার্টফোন দিয়ে ছবি আঁকা-আঁকির চেষ্টা। আস্তে আস্তে স্মার্টফোন দিয়ে তৈরি করে ফেলেন কার্টুন। বিস্ময়কর হলেও সত্য, স্মার্টফোন দিয়ে নিজেই তৈরি করছেন নতুন নতুন চরিত্র। তাতে ভয়েস থেকে শুরু করে ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যানিমেশনের সব কাজ করছেন। অবাক ব্যাপার হলো- কার্টুন বানিয়ে আয়ও করছেন তরুণ এ কার্টুনিস্ট।
আতিকুর রহমান রানা বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকতে ভালো লাগত। গ্রামের দৃশ্য ও বন্ধুদের ছবি এঁকেছি। সেগুলো বন্ধু, ম্যাডাম ও স্যারেরা দেখে প্রশংসা করেছেন। একদিন আমার এক মামা আমার ছবি আঁঁকা দেখে অনেকগুলো রং পেন্সিল কিনে দেন। আগ্রহ আরও বেড়ে যায়। তবে পড়াশোনাও ঠিকমত করতে হয়েছে। কারণ বাবা চান, আমি বড় হয়ে ভালো চাকরি করি। ছবি আঁকতে গিয়ে কখনো পড়াশোনায় ফাঁকি দেইনি। বরং পড়াশোনা করে অবসর সময় বাইরে আড্ডা না দিয়ে ছবি আঁকতে বসে যেতাম। তারপর অষ্টম শ্রেণিতে একটা স্মার্টফোন কিনি।’
Advertisement
আতিক আরও বলেন, ‘যেহেতু ছবি আঁকতে জানি। তাই মোবাইলের মাধ্যমে সেই ছবিগুলোকে কথা বলানোর চেষ্টা করছিলাম দীর্ঘদিন। এরপর আস্তে আস্তে মোবাইলে নিজেই রপ্ত করে ফেলি কার্টুন তৈরির কাজ। পাঁচটি মোবাইল অ্যাপস দিয়ে অনেক সময় নিয়ে কাজ করতে হয়। একটা কন্টেন্ট বানাতে দুই-তিন দিন লেগে যায়। মোবাইলে কাজ করতে গিয়ে অনেক ঝামেলায়ও পড়তে হয়। আমার ভালো মোবাইল দরকার, তবুও এটি দিয়েই কাজ করতে হচ্ছে। অনেকে কার্টুন তৈরির অর্ডার দেয়। তা থেকে আমার হাতখরচের টাকা হয়ে যায়।’
তরুণ কার্টুনিস্ট আতিকের ইউটিউবে ‘এ আর আতিক’ নামে একটি চ্যানেল রয়েছে। সেখানে নিজের তৈরি কার্টুন আপলোড করেন তিনি। ইতোমধ্যে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টিসহ বেশ কিছু কন্টেন্ট তৈরি করে চ্যানেলটিতে আপলোড করেছেন। পড়াশোনার পাশাপাশি স্বপ্ন দেখেন কার্টুনিস্ট হওয়ার। তিনি মনে করেন, সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে তরুণদের যদি প্রশিক্ষণ দেওয়া যায়। তাহলে কম খরচে টেলিভিশনের জন্য ভালোমানের কার্টুন অনুষ্ঠান তৈরি করা সম্ভব।
এসইউ/এএ/জেআইএম
Advertisement