আইন-আদালত

আর্টিস্ট বলে তরুণীদের বিদেশে পাচার করতেন ইভান

জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত নৃত্যশিল্পী ও কোরিওগ্রাফার ইভান শাহরিয়ার সোহাগ আন্তর্জাতিক মানবপাচার চক্রের সক্রিয় সদস্য। পারফর্ম করার জন্য বিভিন্ন তরুণীকে ‘আর্টিস্ট’ বলে বিদেশে পাচার করতেন তিনি। ইভানদের মানবপাচারের জাল বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত। এর সঙ্গে আর কারা জড়িত তা জানার জন্য ইভানকে সাত দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেছেন মামলার তদন্ত সংস্থা সিআইডি। আদালত রিমান্ড শুনানির জন্য আগামী ২১ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেছেন।

Advertisement

মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি পুলিশের উপ-পরিদর্শক মানবপাচারের সাথে আন্তজার্তিক দালাল চক্রের কে বা কারা জড়িত তা জানার জন্য ইভানকে সাত দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন। ঢাকা মহানগর হাকিম মাহমুদা বেগম ইভানের উপস্থিতিতে সাত দিনের রিমান্ড শুনানির জন্য ২১ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেন।

আবেদনে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, গত ১১ সেপ্টেম্বর ইভান শাহরিয়ার সোহাগকে গুলশান নিকেতন এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরের দিন আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। আসামিরা ভুক্তভোগীদের নাচ শিখিয়ে ভালো বেতনে বিদেশে পাঠানোর প্রস্তাব করেন। তাদের প্রস্তাবে ভুক্তভোগীরা রাজি হলে তাদের থাকা-খাওয়া নিশ্চিত করাসহ ক্লাবে নাচ-গান করার বিনিময় প্রতিমাসে ৫০ হাজার টাকা বেতন প্রদান করবে বলে মৌখিক চুক্তি করেন।

ভুক্তভোগীরা সরল বিশ্বাসে আসামিদের ওপর ভরসা করে দুবাইসহ অন্যান্য দেশে যেতে সম্মতি প্রদান করেন। আসামি আজম খান, তার ভাই নাজিম ও এরশাদের সহায়তায় ভুক্তভোগী ময়নার পাসপোর্ট ও প্রয়োজনীয় কাজগপত্র প্রস্তুত করে দেয়। তারপর ২০১৯ সালের মে মাসে ময়নাকে দুবাইয়ের সারজা নিয়ে যায়। পরবর্তীতে আজম খান সেখানে নিয়ে ময়নাকে নিজেসহ বিভিন্ন লোক নিয়ে যৌন নির্যাতন চালায়। কিন্তু দুবাই গমনের পর আসামিরা ময়নাকে কোনো বেতন দেয়নি। এভাবে আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে বিবাদী নির্মল দান, আলমগীর, আমান ও শুভসহ অজ্ঞাতনামা এজেন্টের সহায়তায় ভুক্তভোগী আলেয়া ও মনি আক্তারদের ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় ড্যান্স ক্লাব থেকে প্রলোভনের মাধ্যমে নির্বাচন করে। এভাবে বহু বাংলাদেশি নারীর সরলতার সুযোগ নিয়ে আসামিরা দুবাইসহ অন্যান্য দেশে পাচার করে এবং জোরপূর্বক আটক রেখে যৌন নির্যাতন চালায়।

Advertisement

আসামি নির্মল চন্দ্র দাসকে গ্রেফতার করলে গত ১৩ আগস্ট আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দিতে বলেন, ইভান বিদেশে পারফর্ম করার জন্য অধরা ও বিথী নামে দুজন আর্টিস্ট দেন। আসামি ইয়াছিনকে গ্রেফতার করলে ২০ আগস্ট আদালতে স্বীকোরোক্তিমূলক জবানবন্দিতে একই কথা বলেন।

আসামিরা দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশি তরুণীদের দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে পাচার করছে। তাদের বিরুদ্ধে তিনজন ভুক্তভোগী ইতোমধ্যে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। আসামিরা আন্তজাতিক মানবপাচার চক্রের সক্রিয় সদস্য। মামলার মূল রহস্য উদঘাটন, পলাতক আসামিদের গ্রেফতার ও আসামিদের সাথে আন্তজার্তিক দালাল চক্রের অন্যকে বা কারা জড়িত তা বের করার জন্য ইভানকে সাত দিনের পুলিশ রিমান্ডে নেয়া প্রয়োজন বলে আবদনে উল্লেখ করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।

এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কামরুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, বাংলাদেশি তরুণীদের আর্টিস্ট বলে বিদেশে পাচার করেন আসামিরা।আন্তজার্তিক দালাল চক্রের অন্য কে বা কারা জড়িত তা বের করার জন্য ইভানকে সাত দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করা হয়েছে।

বহু বাংলাদেশি নারীর সরলতার সুযোগ নিয়ে দুবাইসহ অন্যান্য দেশে পাচার করে এবং জোরপূর্বক আটক রেখে যৌন নির্যাতন করার অভিযোগে লালবাগ থানায় সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার মৃনাল কান্তি শাহ গত ২ জুলাই মূলহোতা আজম খানসহ নয়জনের বিরুদ্ধে মানবপাচার আইনে একটি মামলা করেন। মামলায় আসামি করা হয়েছে অজ্ঞাতনামা আরো অনেককে।

Advertisement

মামলার আসামিরা হলেন- আলামিন হোসেন ওরফে ডায়মন্ড (২৬), স্বপন হোসেন (২৮), আজম খান (৪৫), নাজিম (৩৬), এরশাদ ও নির্মল দাস (এজেন্ট), আলমগীর, আমান (এজেন্ট) ও শুভ (এজেন্ট)।

জেএ/এমএসএইচ/এমকেএইচ