খেলতে খেলতে অনেকে ঠিক বুঝতে পারেন না কখন অবসর নিতে হবে। মাঠ থেকে অবসর নেয়ার ভাগ্যও অনেকের হয় না। অবসর নিতে না পারার আক্ষেপও কারো কারো জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়ায়। অবসরোত্তর আক্ষেপ কারো কারো কণ্ঠে দীর্ঘশ্বাস হয়ে ঝরে। তার সাম্প্রতিকতম উদাহরণ ভারতের সাবেক ক্রিকেটার বীরেন্দ্র শেবাগ।শেবাগের আক্ষেপ মাঠ থেকে ক্রিকেটকে বিদায় বলতে পারলেন না! বিদায় নেয়ার সুযোগ তাঁকে দিলেন না ক্রিকেট কর্তারা। ভারতীয় নির্বাচকরা। আক্ষেপ এখন তাই শেবাগের ক্ষোভ হয়েই ঝরছে! ক্ষোভটা বেশি ভারতীয় নির্বাচকদের ওপর। অন্তত তারা বাদ দেয়ার আগে বলতে পারতেন, `আমরা তোমাকে নিয়ে আর খুব বেশি ভাবতে রাজি নই।` বলেননি। বললে নাকি তিনি আগেই অবসরের ঘোষণাটা দিয়ে দিতেন। অবসর নিয়ে আক্ষেপ, হতাশা শুধু শেবাগের নয়, তার আগে ভিভের মতো ক্রিকেটারের আছে। `৯২ এর বিশ্বকাপটা খেলে অবসরে যেতে চেয়েছিলেন ভিভ। কিন্তু পারেননি। আর সেই বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক ইমরান খান চেয়েছিলেন বিশ্বকাপ জয়ের পর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজটা খেলে টেস্টকে বিদায় জানাতে। পারেননি। নিজেদের অজান্তেই অবসরোত্তর জীবন শুরু হয়ে যায় ভিভ-ইমরানের মতো দুই মহাতারকার! একই পথের পথিক হতে হলো শেবাগকে। পার্থক্য শুধুই একটা জায়গায়। কিছু মাইক্রোফোন আর টেপ রেকর্ডারের সামনে তিনি বলে দিলেন,` আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিচ্ছি আমি।`শেবাগের ব্যাটিং দেখে তাঁর মতো ব্যাটসম্যান হওয়ার চেষ্টা না করাই ভাল। কারণ, ওটা আলাদা ব্র্যান্ড। ওটার কপি রাইট শুধুই শেবাগের। তবে শেবাগের অবসর ঘোষণা থেকে বাংলাদেশের অনেকে একটা বার্তা পেতে পারেন। সময় থাকতে সরে না পড়লে ক্রিকেটকে বিদায় বলার সুযোগও হাতছাড়া হতে পারে। টেস্ট ক্রিকেটে পনের বছরের বেশি পার করেছে বাংলাদেশ। আশির বেশি ক্রিকেটার টেস্ট খেলেছেন। কিন্তু ক`জন মাঠ থেকে ক্রিকেটকে বিদায় বলতে পেরেছেন? মিনহাজুল আবেদীন নান্নুর মতো ক্রিকেটার মাথায় টেস্ট ক্যাপ পরার সুযোগ পাননি! আকরাম-বুলবুল মাঠ থেকে ক্রিকেটকে বিদায় জানাতে পারেননি! বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক নাঈমুর রহমানকে টেস্ট দল থেকে ছেঁটে ফেলা হয়েছিল চট্টগ্রামে টেস্ট চলাকালীন! সোজা সাপটা বললে বলতে হবে; বাংলাদেশ ক্রিকেটে `অবসর` কালচার গড়ে ওঠেনি এখনো! খুব দ্রুত গড়ে উঠবে তেমন আভাসও মিলছে না। কারণ, না ক্রিকেটার না কর্মকর্তা, কেউ-ই এই সংস্কৃতিতে আস্থা রাখতে চান না!লম্বা একটা সময় জাতীয় দলে খেলার পরও মাঠ থেকে অবসর নিতে না পারার আক্ষেপ নিয়ে অনেক ক্রিকেটার বোর্ড কর্মকর্তা হয়েছেন। কেউ নির্বাচক হয়েছেন। কিন্তু নিজেদের পরের প্রজন্মকে যাতে একই আক্ষেপ বয়ে বেড়াতে না হয় সে বিষয়কে মাথায় রাখতে চাচ্ছেন না কেউ! চাইলে মাঠ থেকে দু`একজন অন্তত অবসর নিতে পারতেন। ঐ তালিকায় জায়গা পেতে পারেন এমন দু`একটা নাম বলেই ফেলা যায়। লম্বা একটা সময় বাংলাদেশকে সার্ভিস দিয়েছেন বাঁহাতি স্পিনার আব্দুর রাজ্জাক। শেষ টেস্ট খেলেছেন ২০১৪-তে চট্টগ্রামে। আবার জাতীয় দলে ফেরার সম্ভাবনা তাঁর প্রায় নেই বললেই চলে। কারণ, নির্বাচকদের চিন্তা ভাবনায় তিনি আছেন তা মনে হয় না। আরেকজন ওপেনার শাহরিয়ার নাফিস। ডলারের কাছে নিজের ক্রিকেট ভবিষৎ-কে একপ্রকার বিক্রি করে দিয়ে চলে গিয়েছিলেন ভারতের বিদ্রোহী লিগ- আইসিএলে। তারপর ফিরলেন। তাঁকে জাতীয় দলেও ফেরানো হলো। কিন্তু ততোদিনে প্রতিভাবান শাহরিয়ার নাফিসের প্রতিভায় মরিচা ধরে গেছে। তবে বাঁচিয়ে রেখেছেন শুধু আবারও জাতীয় দলে ফেরার আশাটা। কিন্তু এখন ফেরার সম্ভাবনা ঠিক ততোটা, যতোটা সম্ভাবনা বাংলাদেশের পরবর্তী বিশ্বকাপটা জেতার। তারপরও জাতীয় দলের একজন ক্রিকেটারকে মাঠ থেকে অবসর নেয়ার কথাটা জানাতেই পারে ক্রিকেট বোর্ড। কথা বলা যেতে পারে তাঁর সঙ্গে। হতে পারে জিম্বাবুয়ে কিংবা অন্য দলের বিপক্ষে কোনো প্রস্তুতি ম্যাচে খেলার সুযোগ দিয়ে। তবু অন্তত মাঠ থেকে ক্রিকেটকে বিদায় বলতে না পারার আক্ষেপ অবসরোত্তর জীবনে পোড়াবে না তাঁদের।লেখক : স্পোর্টস এডিটর, দীপ্ত টিভিএইচআর/এমএস
Advertisement