জাগো জবস

অনলাইন ব্যবসায় বিএসটিআইর সনদ কতটা জরুরি

সম্প্রতি বিএসটিআই’র একটি নোটিশ অনলাইন ব্যবসায়ীদের জন্য চিন্তার কারণ হিসাবে দেখা দিয়েছে। আসলে কি এ বিষয়ে চিন্তার কোনো কারণ আছে? আমরা অনেকেই এ নোটিশ বা সিদ্ধান্তকে অনলাইন ব্যবসার জন্য, বিশেষ করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেখছি।

Advertisement

আমার অভিমত হলো, সিদ্ধান্তটি সময়োপযোগী এবং এটি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন করলেও এর প্রয়োজন ছিল। কারণ এই নোটিশের ফলে অনলাইন ব্যবসায় কোয়ালিটি পণ্য বিক্রি করার বা নিশ্চিত করার একটি তাগিদ অনুভব হবে।

আমার বক্তব্য পড়ে অনেকে একমত পোষণ না-ও করতে পারেন। বক্তব্যটি লেখার পেছনে যে যুক্তিগুলো কাজ করছে, তা হলো-

সিদ্ধান্তটি আগেই ছিল নতুন কিছু নয়: নোটিশটি ভালোভাবে পড়লে দেখতে পাবেন, নোটিশে বলা আছে, ‘১৮১টি পণ্য বিএসটিআই’র মান সনদের আওতাভুক্ত করেছে’। তার মানে এটি একটি লম্বা সময় নিয়ে করেছে। রাতারাতি হয়নি। নোটিশটি ইদানিং দেওয়া হয়েছে। তার প্রেক্ষাপটও নোটিশে বর্ণনা করা আছে।

Advertisement

অফলাইন ও অনলাইন ব্যবসায়ীরা সমতা পেল: একজন অফলাইন ব্যবসায়ীর যদি একটি পণ্য বিক্রি করতে (বিএসটিআই’র বাধ্যতামূলক পণ্য) বিএসটিএআই’র মান সনদ দরকার হয়, তাহলে কেন সেই একই পণ্য বিক্রি করতে অনলাইন ব্যবসায়ীর মান সনদ লাগবে না। এ নোটিশের মাধ্যমে বরং অফলাইন এবং অনলাইন ব্যবসায়ীদের মধ্যে একটি সমতা ফিরে এলো।

আমাদের অভিযোগ: অনেক সময় অভিযোগ করে থাকেন (সোশ্যাল মিডিয়ায়) যে, অনলাইন থেকে পণ্য কিনে কাঙ্ক্ষিত পণ্যটি পানটি, পণ্যের গুনগত মান ঠিক নেই, কালার ঠিক নেই, মূল্য বেশি ইত্যাদি। এখন এ অভিযোগগুলো সমাধান করতে গেলে কিন্তু এরকম একটি নোটিশ দরকার ছিল। যাতে অনলাইন ব্যবসায়ীরা (সবাই নয়, যারা নিম্নমানের পণ্য বিক্রি করেন) তাদের পণ্য বিক্রির সময় গুণগত মান নিয়ন্ত্রণে সচেষ্ট হবেন।

পণ্যের সোর্সিংয়ে ওভারলেপিং বন্ধ হবে: অনেক সময়ই খেয়াল করি যে, অনেক বড় বড় ব্র্যান্ড, একটি বা গুটিকয়েক কোম্পানিকে তাদের সনামধন্য পণ্য বিক্রির জন্য ডিলারশিপ বা দায়িত্ব দিয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে অনেক সময় অনলাইন ব্যবসায়ীরা ভিন্ন সোর্স ব্যবহার করে একই পণ্য বিক্রি করে থাকেন (অফলাইনে যে হয় না তা কিন্তু নয়)। ফলে সেই ডিলার আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। বিএসটিআই’র এ কার্যক্রমে সেসব ডিলারশিপ ব্যবসা বা সুনির্দিষ্ট পণ্য সোর্স করার ক্ষেত্রেও একটি শৃঙ্খলা ফিরে আসবে বলে আমার ধারণা।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যবসা মানেই অনলাইন ব্যবসা নয়: অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীই সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করা শুরু করে দেন প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ছাড়াই, প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি না থাকার কারণে কিন্তু তাদের ব্যবসা দাঁড় করাতেও যথেষ্ট বেগ পেতে হয়। অনেক সময় বা বেশিরভাগ সময় তারা ঝরে পড়েন। অনলাইন ব্যবসা শুরু করার আগে যে যথেষ্ট পরিমাণ প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন, এ বিষয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এবার সচেতন হবেন।

Advertisement

এখন নোটিশটি দেখার পর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মধ্যে একধরনের মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। এর যথেষ্ট কারণও আছে। কারণগুলো হতে পারে নিম্নরূপ:

এটা বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে: এ নোটিশ দেওয়ার পর মাসখানেক সময় যদি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের দিতে পারতাম, তাহলে প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য সেটা ভালো হতো। তারা প্রস্তুতি নেওয়ার একটি সুযোগ পেতেন।

কোভিড সিচুয়েশন: কোভিড-১৯ এর কারণে অনেকের আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা ভিন্ন আয়ের পথ হিসাবে ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরু করেছিলেন। যেগুলোর বেশিরভাগই সোশ্যাল মিডিয়া নির্ভর। তারা হয়তো এ নোটিশের কারণে প্রভাবিত হতে পারেন। যেহেতু সময়টি সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলার। তাই বিষয়টি একটু ভেবে দেখা যেতে পারে।

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সক্ষমতা: অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরই হয়তো বিএসটিআই’র মান সনদ নেওয়ার মতো সক্ষমতা নেই। যদিও পণ্য উৎপাদনকারী, আমদানিকারকের মান সনদ ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে। কারণ বিএসটিআই’র যে ধাপসমূহ মেনে বিএসটিআই সার্টিফিকেট নিতে হয় বা বিএসটিআই’র সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে যেসব ডকুমেন্ট সংযুক্ত আকারে দিতে হয়, তার অনেকগুলোই ক্ষুদ্র উদ্যেক্তাদের নেই। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য কিছু সময় প্রয়োজন বা দিলে সত্যিকার অর্থে যারা ব্যবসা করতে চান; তারা বিএসটিআই সনদ সংগ্রহ করবেন বলে আমার বিশ্বাস।

তথ্য জানতে হবে: অনেক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার কাছেই বিএসটিআই’র বিষয়ে যথেষ্ট পরিমাণ তথ্য নেই। যদিও বিএসটিআই’র ওয়েবসাইটে সব তথ্য দেওয়া আছে। তবে তথ্যগুলোর ব্যাখ্যা এবং সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় এবং ব্যাপকভাবে প্রশিক্ষণ, অনলাইন সেমিনার ইত্যাদি আয়োজন করা গেলে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা অনেক বেশি উপকৃত হবেন।

লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড: নোটিশটির মাধ্যমে অফলাইন-অনলাইন, ক্ষুদ্র-কর্পোরেট ব্যবসার জন্য একটি লেভেল তৈরি করেছে। এটি যেমন সত্য; ঠিক তেমনই আরেকটি বিষয় চিন্তা করে দেখতে হবে যে, এ লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডে খেলার জন্য আমাদের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা কতটুকু প্রস্তুত। তারা কি পারবেন কর্পোরেটদের সাথে ব্যবসা করে টিকে থাকতে? না কি তাদের আরও প্রস্তুতি প্রয়োজন? যদি আরও প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়, তাহলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, কর্পোরেট ব্যবসায়ী, অফলাইন ব্যবসায়ী, অনলাইন ব্যবসায়ী- সবাই মিলে কাজ করতে হবে সবার সক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য।

আজ যদি অনলাইন ব্যবসায়ীরা হারিয়ে যায়, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা হারিয়ে যায়, তাহলে এ লেয়ারগুলো পূরণ করবো আমরা কিভাবে? অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে প্রত্যেকটি লেয়ার শক্তিশালী করা সময়ের দাবি।

লেখক: উদ্যোক্তা, শাহিন’স হেল্পলাইন।

এসইউ/এএ/জেআইএম