অর্থনীতি

আজ থেকে বন্ধ জিল বাংলা সুগারের লেনদেন

নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্দেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য জিল বাংলা সুগার মিলসের শেয়ার লেনদেন বন্ধ করে দিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। আজ (মঙ্গলবার) থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে।

Advertisement

শেয়ারের অস্বাভাবিক দাম বাড়ায় গতকাল সোমবার জিল বাংলা সুগারের শেয়ার লেনদেন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি। এরপর বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে ডিএসইকে জিল বাংলা সুগারের শেয়ার লেনদেন বন্ধ রাখার আদেশ দেয়া হয়।

এ আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে, ডিএসইতে জিল বাংলা সুগার মিলসের শেয়ারের অস্বাভাবিক লেনদেন ও দামের তারতম্য লক্ষ করা গেছে। এ কারণে কমিশন মনে করে, বাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে ডিএসইতে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন স্থগিত করা প্রয়োজন।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ (১৯৬৯-এর ১৭)-এর অধীনে ৯ (৭) ক্ষমতাবলে জিল বাংলা সুগার মিলসের শেয়ার লেনদেন স্থগিত করেছে কমিশন। কমিশনের এই নির্দেশ মেনে আজ থেকে কোম্পানিটির শেয়ার অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দিল ডিএসই।

Advertisement

শেয়ারবাজার ঊর্ধ্বমুখী থাকায় প্রায় দুই মাস ধরে হু হু করে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়েছে। এতেই কিছু কিছু বিনিয়োগকারীর কাছে কোম্পানিটির শেয়ার রূপকথার আলাদিনের চেরাগের মতো হয়ে দাঁড়ায়। এ নিয়ে জাগো নিউজে বিস্তারিত প্রতিবেদনও প্রকাশ করা হয়েছে।

মাত্র দুই মাসেই কোম্পানিটির শেয়ার দাম বেড়েছে প্রায় ৬০০ শতাংশ। চলতি বছরের ৯ জুলাই কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ৩১ টাকা ৬০ পয়সা। সেখান থেকেই টানা বেড়ে সোমবার লেনদেন শেষে দাঁড়িয়েছে ২১৩ টাকা ১০ পয়সায়। অর্থাৎ দুই মাসে কোম্পানিটির শেয়ার দাম বেড়েছে ১৮১ টাকা ৫০ পয়সা বা ৫৭৪ শতাংশ।

হঠাৎ শেয়ারের এমন দাম বাড়লেও জিল বাংলা সুগার মিলস বছরের পর বছর ধরে লোকসানে নিমজ্জিত। লোকসানের ফলে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের কোনো ধরনের লভ্যাংশ দিতে পারছে না। সর্বশেষ প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত নয় মাসের ব্যবসায় শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৪৪ টাকা ৭২ পয়সা।

এদিকে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বাড়ার প্রেক্ষিতে গত দেড় মাসে দুই দফায় বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করে তথ্য প্রকাশ করেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত ২০ আগস্ট ও ১৯ জুলাই এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।

Advertisement

জিল বাংলা সুগার মিলস কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে দুই দফাতেই ডিএসই জানায়, জিল বাংলা সুগার মিলসের শেয়ার দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। এই অস্বাভাবিক দাম বাড়ার পেছনে কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই।

ডিএসইর এই সতর্কবার্তা যে কোনো কাজে আসেনি তা কোম্পানিটির শেয়ার দাম বাড়ার চিত্র দেখলে সহজেই অনুমান করা যায়। সতর্কবার্তা দূরে ঠেলে হু হু করে শেয়ারের দাম বাড়লেও ১৯৮৮ সালে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি কবে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিয়েছে সে সংক্রান্ত কোনো তথ্য ডিএসইর ওয়েবসাইটে নেই।

তবে ডিএসইর ওয়েবসাইটে ২০১৫ সাল থেকে কোম্পানিটির লাভ-লোকসানের তথ্য রয়েছে। সেই তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ থেকে ২০১৯- এই পাঁচ বছরের প্রতিটি বছরেই কোম্পানিটি বড় অঙ্কের লোকসান করেছে।

এর মধ্যে ২০১৯ সালে ১০৩ টাকা ৯০ পয়সা, ২০১৮ সালে ৮০ টাকা ৮২ পয়সা, ২০১৭ সালে ৫৪ টাকা ৯ পয়সা, ২০১৬ সালে ৬২ টাকা ৫৬ পয়সা এবং ২০১৫ সালে ৫৬ টাকা ৮৯ পয়সা শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে।

এমএএস/বিএ/জেআইএম