কৃষি ও প্রকৃতি

হাওরাঞ্চলের জন্য নতুন জাতের ধান উদ্ভাবনে ইরি-ব্রির যৌথ গবেষণা

বাংলাদেশে উৎপাদিত মোট ধানের এক-পঞ্চমাংশ আসে হাওরাঞ্চল থেকে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এ অঞ্চলের ধান-চাষ চরম বিপর্যয়ের সম্মুখীন। এ অবস্থায় হাওরাঞ্চলের জন্য স্বল্পজীবনকাল সম্পন্ন, ঠান্ডাসহিষ্ণু ও উচ্চফলনশীল জাতের ধান প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (গবেষণা) কমলারঞ্জন দাস।

Advertisement

সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) ও আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ইরি) আয়োজিত এক ভার্চুয়াল কর্মশালায় এ মন্তব্য করেন তিনি। কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের (কেজিএফ) অর্থায়নে ‘ডেভেলপমেন্ট অব শর্ট-ডিউরেশন কোল্ড-টলারেন্ট রাইস ভ্যারাইটিজ ফর হাওর এরিয়াস অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক পাঁচ বছর মেয়াদি গবেষণা প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয় এ কর্মশালায়। এ গবেষণায় ইরির অংশীদার ব্রি।

প্রকল্পের সাফল্য কামনা করে অতিরিক্ত কৃষি সচিব কমলারঞ্জন দাস বলেন, ইরির সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। বাংলাদেশের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে ইরির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে ইরি এবং ব্রি’র যৌথ এই গবেষণার ফলে হাওরাঞ্চলের মানুষের জীবিকার পরিবর্তন আসবে, সেই সঙ্গে খাদ্য ও পুষ্টিনিরাপত্তায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রখবে।

কর্মশালায় জানানো হয়, হাওর এলাকার প্রধান ফসল বোরো ধান। কিন্তু অনেকসময় এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে পাহাড়ি ঢলে আগাম বন্যার সৃষ্টি হয়। এতে ক্ষেতের আধাপাকা ধান প্রায় পুরোটাই তলিয়ে যায়। বোরো মৌসুম শুরু হয় মধ্য নভম্বরে। তবে অনেক কৃষক বন্যা থেকে রক্ষা পেতে অক্টোবরের শেষেই বীজ বপন শুরু করেন। কিন্তু জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির শীতে ধানের প্রজনন ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং চিটার পরিমাণ বেড়ে যায়। তাই এই এলাকার কৃষকদের প্রয়োজন স্বল্পজীবনকাল সম্পন্ন (১২০-১৪০ দিন), শীতসহিষ্ণু ও উচ্চফলনশীল ধান যার ফসল আগাম বন্যা আসার আগেই ঘরে তোলা যায়। কেজিএফের অর্থায়নে ইরি এবং ব্রি’র এই যৌথ গবেষণার মূল লক্ষ্য এ ধরনের জলবায়ুসহিষ্ণু স্বল্পজীবনকালীন ধানের জাত উদ্ভাবন করা।

Advertisement

ব্রি মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর বলেন, আমাদের আবাদি জমির পরিমাণ প্রতিবছর ০.৪% হারে কমছে, কিন্তু জনসংখ্যা বাড়ছে ১.৩৭% হারে। তদুপরি জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত আমাদের খাদ্যনিরাপত্তাকে বারবার চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করাচ্ছে। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের হাওর এলাকায় সাড়ে ১২ লক্ষ হেক্টর জমিতে বছরে কেবল একটিই ফসল হয়, সেটা হলো বোরো। কিন্তু পাহাড়ি ঢলের কারণে অনেকসময় সেই ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তখন খাদ্যনিরাপত্তা হুমকির মখে পড়ে। এ জন্যই আমরা স্বল্পজীবনকালীন ঠান্ডাসহিষ্ণু জাতের ধান উদ্ভাবনের চেষ্টা করছি। এ লক্ষ্যে ব্রি ইতোমধ্যেই দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান এবং নেপাল থেকে ঠান্ডাসহিষ্ণু জাতের জার্মপ্লাজম সংগ্রহ করেছে যেগুলোর বৈশিষ্ট্যায়ন সম্পন্ন হয়েছে।

কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক জীবন কৃষ্ণ বিশ্বাস বলেন, হাওরাঞ্চলের ধানচাষীরা বোরো মৌসুমে দুবার প্রতিকূল অবস্থায় পড়ে- একবার শুরুতে, একবার শেষে। আবহাওয়ার নিয়মে একটু এদিক-ওদিক হলেই ফসলের বড় ধরনের ক্ষতি হয়। নতুন এই গবেষণা প্রকল্পের লক্ষ্য হলো এই দুই প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলায় কৃষকদের জন্য কার্যকর সমাধানের উপার বের করা। বহুবছর ধরেই শীতসহিষ্ণু জাতের ধান নিয়ে গবেষণা করে আসছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট। আমরা এই কাজে সহযোগিতা করছি মাত্র।

ইরির মহাপরিচালক ম্যাথিউ মোরেল বলেন, বাংলাদেশের হাওরাঞ্চলের কৃষকরা যেসব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সেসব চ্যালেঞ্জ ভবিষ্যতে আরও বড় হয়ে দেখা দেবে। সুতরাং সেই পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে নতুন নতুন ধানের জাত উদ্ভাবন করা জরুরি।

অনলাইন কর্মশালায় আরও উপস্থিত ছিলেন- ইরির প্ল্যান্ট ব্রিডিং ডিভিশনের প্রধান ড. হানসরাজ ভারদওয়াজ, দক্ষিণ এশিয়া প্রতিনিধি ড. নাফিস মিয়া এবং বাংলাদেশ প্রতিনিধি ড. হামনাথ ভান্ডারি।

Advertisement

বিএ/পিআর