অর্থনীতি

ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের নিঃস্ব করার সুযোগ দেয়া হবে না : শিবলী

# ডিএসইর আইটিতে বড় ধরনের রিফর্ম হবে# দৈনিক লেনদেন হবে ৩-৫ হাজার কোটি টাকা# নভেম্বর-ডিসেম্বর থেকে আইসিবি পুনর্গঠন # স্বতন্ত্র পরিচালকদের ভূমিকায় বিরক্ত বিএসইসি

Advertisement

নিয়মনীতি না মেনে বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত কেউ পুঁজিবাজারের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের আর নিঃস্ব করার সুযোগ পাবে না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম।

শনিবার (১২ সেপ্টেম্বর) পুঁজিবাজার নিয়ে ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরাম (সিএমজেএফ) এবং বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ) আয়োজিত ভার্চুয়াল আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন।

শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম বলেন, আমরা ব্যবসাকে সহজ করে দিতে চাই। এতে কিছু দুর্বৃত্ত বা দুষ্টু লোক যদি আপনাদের ডিস্টাব করে বা যারা নিয়মনীতি না মেনে বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত এবং ২-৫ শতাংশ লোকের জন্য বাকি ৯৫-৯৮ শতাংশ মানুষের ক্ষতি হয়, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা নিঃস্ব হয়, আমরা যতদিন আছি সেই সুযোগ আর তারা পাবে না।

Advertisement

তিনি আরও বলেন, এখন থেকে কেউ যাতে কাউকে ঠকিয়ে, লুট করে, জালিয়াতি করে অর্থ নিয়ে যেতে না পারে সে কাজ সবাই মিলে করতে হবে। আমরা প্রত্যেক কমিশন মিটিংয়ে এ ধরনের কিছু সিদ্ধান্ত নিচ্ছি।

বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, উন্নত দেশে পুঁজিবাজারই দীর্ঘ মেয়াদি অর্থায়নের প্রধান উৎস। যেটা দিয়ে বড়, মাঝারি, ছোট সব ধরনের ব্যবসা হয়। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ থাকে ব্যাপক। তখনই ইকোনমিটা ভাইব্রেন্ট হয়। আমরা সেই স্বপ্নই দেখছি। আমরা চাই ক্যাপিটাল মার্কেট সে রকম হবে।

স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবসার মধ্যে বৈচিত্র্য আনার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আশাকরি স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবসার মধ্যে বৈচিত্র্য আসবে। যারা অংশগ্রহণকারী তাদের ব্যবসার মধ্যে বৈচিত্র্য আসবে। সারাক্ষণ যদি সেকেন্ডারি মার্কেটে কেনা-বেচা নিয়ে থাকি, তাহলে হবে না। কারণ মার্কেটটাকে অনেক বড় করতে হবে। এক হাজার কোটি টাকা কোনো লেনদেনই না। এটাকে ইমিডিয়েট ৩০০০-৫০০০ কোটি টাকায় নিয়ে যেতে হবে।

স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিচালকদের শেয়ার ধারণের তথ্য প্রকাশের আহ্বান জানান বিএসইসির চেয়ারম্যান। বলেন, পরিচালকদের ২ ও ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের তথ্য প্রকাশে কোনো বাধা নেই। ডিএসইকে বলবো, এসব তথ্য ওয়েবসাইটে দেন।

Advertisement

ডিএসইর আইটিতে বড় ধরনের রিফর্ম হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আইটির স্পেশাল একটা টিম ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ইন্সপেকশন করছে। সেখানে অনেক তথ্যই আমাদের কাছে এসেছে। সেই তথ্য থেকে জানতে পেরেছি, এখানে বড় ধরনের রিফর্ম প্রয়োজন

‘আগামী রোববার (১৩ সেপ্টেম্বর) তারা রিপোর্ট জমা দেবেন। এর পরই আমরা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সঙ্গে বসবো। সেখানে ইমিডিয়েটলি কোন রিফর্ম বা কারেকশন প্রয়োজন সেগুলো আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। কারণ স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর কাঠামো ঠিক না থাকলে কোনোভাবে ব্যবসা হবে না’ বলেন শিবলী।

তিনি বলেন, জনগণের টাকা নিয়ে যেসব কোম্পানি পারফমেন্স করতে পারছে না, সেই কোম্পানি থেকে জনগণের টাকা ফেরত দিয়ে আমরা তাদের তালিকাচ্যুত করবো। অনেক পুরোনো যেসব ডিবেঞ্চার ঠিকভাবে টাকা ফেরত দেয়নি, আগামী সপ্তাহ থেকে টাকা ফেরত আসার সংবাদ আপনারা পাবেন। দেখবেন আপনাদের অনেক পুরোনো টাকা ফেরত আসছে।

ব্রোকারেজ হাউসের শাখা প্রসারের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, শুধু ঢাকা বেজ না থেকে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েন। প্রয়োজনে বিদেশে শাখা খোলেন। এ জন্য সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হবে।

বিনিয়োগকারীদের আস্থা ও বিশ্বাস প্রতিষ্ঠায় কোম্পানির তথ্য ভালোভাবে যাচাই করে আইপিও দেয়া হচ্ছে ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, সুশাসন যদি শতভাগ নিশ্চিত করতে না পারি, তাহলে একজন মানুষ কেন তার ঘাম ঝরানো অর্থ বিনিয়োগ করবেন। আমরা যদি টাকা-পয়সা বা বিনিয়োগকে নিরাপত্তা দিতে না পারি, ভালো রিটার্ন দিতে না পারি তাহলে কেন তারা আসবেন?

আইসিবি পুনর্গঠনের উদ্যোগের বিষয়ে তিনি বলেন, আইসিবির যে কাজ, সেটা তারা সঠিকভাবে করতে পারছিল না। এ কারণে সরকারের নির্দেশে আইসিবিকে পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তথ্য সংগ্রহের পর আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বর থেকে আইসিবি পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু হবে। তখন সরকার থেকে আইসিবিকে আরও ফান্ড দেয়া হবে। তার মাধ্যমে বাজার স্থিতিশীল রাখতে আইসিবির যে ভূমিকা, সেটা রাখতে পারবে।

স্বতন্ত্র পরিচালকদের ভূমিকা নিয়ে বিএসইসি বিরক্ত উল্লেখ করে তিনি বলেন, যে ভালো উদ্দেশ্য নিয়ে স্বতন্ত্র পরিচালকদের নিয়োগ দেয়া হয়েছিল, তা এখন ভূলণ্ঠিত হওয়ার অবস্থা। আমরা দেখেছি স্বতন্ত্র পরিচালকরা সঠিকভাবে ভূমিকা পালন করেন না। তাই স্বতন্ত্র পরিচালকদের বিষয়ে শিগগিরই কঠিন পদক্ষেপ নিতে হবে। আইনে পারমিট করলে কিছু কিছু পরিচালককে রিমুভ করতে হবে এবং তার জায়গায় সঠিক স্বতন্ত্র পরিচালক বসানোর প্রয়োজন হতে পারে।

বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, জনগণের বিনিয়োগ নেয়ার পরে যেসব কোম্পানিতে ঠিকভাবে ফাংশন হচ্ছে না, যারা হঠাৎ করে বন্ধ করে চলে গেছেন, যাদের তালা মারা অফিস ঢাকায় এবং ফ্যাক্টরি গাজীপুরে, যারা উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে মানুষকে ঠকানোর চেষ্টা করেছেন, সেসব কোম্পানিতে সম্ভবত আমাদের বোর্ডও ভেঙে দিতে হতে পারে। সেখানে আমরা স্বতন্ত্র পরিচালকের সংখ্যা বাড়িয়ে চেষ্টা করবো কোম্পানি ঠিক করতে। আইনের মধ্যে থেকেই এগুলো করা হবে। না হলে অন্য ব্যবস্থা নেব।

সিএমজেএফের সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ তুলে ধরেন বিএমবিএর প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. মনিরুজ্জামান। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ডিএসইর চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান, সিএসইর চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম, অ্যাসোসিয়েশন অব অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির (এএএমসি) সহ-সভাপতি হাসান ইমাম, ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি শরিফ আনোয়ার, ডিএসইর পরিচালক মো. রকিবুর রহমান, মিনহাজ মান্নান ইমন, ডিএসইর সাবেক পরিচালক আহমেদ রশীদ লালী, সিএমজেএফের সভাপতি হাসান ইমাম রুবেল প্রমুখ।

ডিএসইর পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, পুঁজিবাজারে গত ১০ বছরে আস্থার সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছিল। এ কারণে বিনিয়োগকারীরা বার বার প্রতারিত হয়েছেন। বাজারে টাকার কোনো সমস্যা ছিল না, কিন্তু আস্থার সঙ্কট ছিল।

তিনি বলেন, গত ১০ বছরে যে কোম্পানিগুলোর আইপিও এসেছে সেগুলো অত্যন্ত মানহীন। এসব আইপিওর ক্ষেত্রে যেসব ইস্যু ম্যানেজার, আন্ডার রাইটার, অডিটর যারা মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন তাদের পুঁজিবাজার থেকে অন্তত তিন বছর দূরে রাখতে হবে।

বিএসইসির চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে কমিশনের সম্প্রতি পদক্ষেপের কারণে দীর্ঘদিন পর পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, আপনি যে কাজ শুরু করেছেন তার যেন ছন্দপতন না হয়। ছন্দপতন হলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা থাকবে না। বারবার আস্থা হারালে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারী খুঁজে পাওয়া যাবে না।

বিএমবিএ সভাপতি বলেন, বাজারে প্রবাসীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে বিএসইসি উদ্যোগ নিতে পারে। বর্তমানে প্রবাসীরা যেভাবে বিনিয়োগ করে, সেটা জটিল প্রক্রিয়া। শেয়ারবাজার মধ্যস্থতাকারীরা ফরেন কারেন্সি ডিল করতে পারলে প্রবাসীদের বিনিয়োগ সহজলভ্য হবে।

এমএএস/এএইচ/জেআইএম