পারিবারিক সহিংসতা, সীমান্তে নির্বিচারে মানুষ হত্যা বন্ধ ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে মানুষের বিবেককে জাগিয়ে তুলতে হেঁটে প্রচারণা চালিয়েছেন ৩ তরুণ। ‘হাইকিং ফর লাইফ’ নামক হাঁটার মিশনে তারা বেছে নিয়েছিলেন জামালপুরের লাউচাপড়া থেকে শুরু করে সিলেটের তামাবিল পর্যন্ত ৩০০ কিলোমিটার সীমান্তবর্তী সড়ক। গত ৩১ আগস্ট সকাল ৯টায় জামালপুরের লাউচাপড়া থেকে শুরু হয় তাদের মিশন।
Advertisement
তিন তরুণের এই হাইকিং মিশনে নেতৃত্ব দিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী রায়হান। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী রায়হান জানান, এটাই তার জীবনের প্রথম হাইকিং ছিল। তার জন্য সম্পূর্ণ নতুন রুট৷ খুব কম মানুষের এই অনন্য রুট সম্পর্কে ধারণা আছে৷
এতে যাত্রাপথ ছিল জামালপুরের লাউচাপড়া থেকে শুরু করে শেরপুরের ঝিনাইগাতি ও রাংটিয়া। সেখান থেকে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট হয়ে নেত্রকোনার দুর্গাপুর বিরিশিরি-কমলাকান্দা। পরে কমালাকান্দা থেকে সুনামগঞ্জের নীলাদ্রি লেক-শিমুল বাগান-লাউরেরগড়-মথুরাকান্দি-ডলুরা-খাগেরগাঁও। খাগেরগাঁও থেকে বঙুয়া বাজার-চান্দপুর-বাংলাবাজার-চারগাঁও বাজার-বনগাঁও বাজার হয়ে সিলেটের বিছানাকান্দি–জাফলং। পরে ৯ সেপ্টেম্বর (বুধবার) বিকাল ৪টায় সিলেটের তামাবিল জিরো পয়েন্টে এসে হাইকিং মিশন শেষ হয়েছে তাদের৷
১০ দিনে তারা সর্বমোট ৮০ ঘণ্টা ৩০ মিনিট হেঁটেছেন। যেখানে অতিক্রম করেছেন জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা, সুনামগঞ্জ, সিলেট জেলার সীমান্ত এলাকা।
Advertisement
এ হাইকিংয়ে চলতি পথে তারা গ্রামে-গঞ্জে, মাঠে, সীমান্তবর্তী বাজারে আর পথচারীদের মধ্যে প্রচারণা চালিয়েছেন ৩টি বিষয় সম্পর্কে। সেগুলো হলো- সীমন্তে নির্বিচারে মানুষ হত্যা বন্ধ করা, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করা ও পারিবারিক সহিংসতা বন্ধ করা।
বিভিন্নভাবে রাত কাটিয়েছেন এই তরুণেরা। কখনো অপরিচিত মানুষের বাসায়, কখনো তাবু করে কিংবা ডাক বাংলোতে৷
হাইকিংয়ের রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে রায়হান বলেন, বাংলাদেশের মানচিত্রের উত্তরে, ভারতের মেঘালয়ের তীর ঘেষে বর্ডার রোডে হাইকিং করাটা মোটেই সহজ কাজ ছিল না। অন্যান্য হাইকিং রুটের মতো এই হাইকিং রুট সমতল, পাকা রাস্তা ছিল না৷ কখনো ছোট টিলা, কখনো কাদা রাস্তা, কখনো খাল, কখনো নদী পার হতে হয়েছে। ২৫টির উপর নদী পার হয়েছি যার মধ্যে অনেকগুলোতে নৌকা ছিল না বলে গলা সমান পানিতে ভিজে পার হয়েছি। কখনো বৃষ্টিতে ভিজে, কখনো রোদে পুড়ে, কখনো আহত পা নিয়ে রাত ১১টা পর্যন্ত হাইকিং করেছি৷
রায়হানের সঙ্গী ছিলেন রংপুরের ছেলে আশরাফি আরাফাত। তিনি মূলত একজন সংগঠক। তাদের পরিচয় হয় বন্যাদুর্গত এলাকায় ত্রাণ দিতে গিয়ে।
Advertisement
জনমত গঠনের বিষয়ে রায়হান বলেন, আজ থেকে ২০ বছর আগে বাল্যবিবাহের যে হারটা ছিল এখন কিন্তু সেটা কমে এসেছে। কারণ এর বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করা হয়েছে, জনমত গঠন করা হয়েছে।
হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে জনমত গঠনের তাৎপর্য সেভাবে দেখছেন না রায়হান ও আরাফাতের হাইকিং মিশনের সঙ্গী ঢাকা আলিয়ার শিক্ষার্থী রাফি।
রাফি বলেন , সীমান্তে বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হত্যাকাণ্ড শুধু নয় পারিবারিক যে সহিংসতা সেটা দিনকে দিন বাড়ছে। একেকটা হত্যাকাণ্ড একটা পরিবারে যে বিভীষিকা নামিয়ে আনে সেটা শুধুমাত্র ভুক্তভোগী পরিবারের মানুষজন টের পাবেন। মানুষ যদি সচেতন হয়, জেগে ওঠে তাহলে হত্যাকাণ্ড নামের বর্বরতা একদিন বন্ধ হবে।
এর আগে রায়হান একাত্তরের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবিতে ও রক্তদিন জীবন বাঁচান স্লোগানে মানুষের মধ্যে রক্তদানে সচেতনতা বাড়াতে দেশের ৬৪ জেলা ভ্রমণ করেন। তাদের পরবর্তী মিশন ‘Walk for Climate Change’। এর জন্য এটা প্রাথমিক ট্রায়াল ছিল বলে জানিয়েছেন তিনি।
এফএ/এমএস