হাসপাতালগুলোতে বেড খালি নেই, করোনা রোগীদের ভিড় বাড়ছে প্রতিনিয়ত, দৈনিক মৃত্যুহারও প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় অনেক বেশি; এরপরও সেই দেশের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ মনে করেন, করোনাভাইরাসের খবর পুরোটাই গুজব। এমন কোনও ভাইরাসের অস্তিত্বই নেই! এ ধরনের পরিস্থিতির কথা মনে হলে অনেকেই হয়তো এশিয়া বা আফ্রিকার কোনও দেশের কথা ভাববেন। তবে প্রকৃতপক্ষে সেই দেশটি হচ্ছে ইউরোপের, নাম কসোভো।
Advertisement
দক্ষিণ ইউরোপের গরিব দেশটিতে বসবাস করেন প্রায় ১৮ লাখ মানুষ। সাম্প্রতিক সময়ে কসোভোয় করোনায় মৃত্যুহার ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম সর্বোচ্চ। দেশটির গ্রামাঞ্চল থেকে রাজধানী শহর প্রিস্টিনায় আসা অনেকেই বলেছেন, অসুস্থ স্বজনদের হাসপাতালে ভর্তি করতে এবং ওষুধ কিনতে তাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। শহরটির হাসপাতালগুলোর বেড খালি নেই বললেই চলে।
এরপরও কসোভোর বহু মানুষ বৈশ্বিক মহামারিকে বিশ্বাস করেন না। কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিলেও তাদের ভুলভাল তথ্যের ভিডিওগুলোও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে।
পাইপার পোল নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সাম্প্রতিক জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, কসোভোর তিন ভাগের এক ভাগ মানুষ মনে করেন, ভাইরাসের কথা সত্য নয়। ৬১ শতাংশ মানুষ বলেছেন, করোনাভাইরাসকে যতটা ভয়াবহ বলা হয় আসলে ততটা নয়!
Advertisement
জরিপের এমন অবিশ্বাস্য ফলাফলকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে মন্তব্য করেছেন কসোভোর প্রধানমন্ত্রী আব্দুল্লাহ হোতি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শহরের হটস্পটগুলো চিহ্নিতকরণ, দ্রুত বার-রেস্টুরেন্ট বন্ধ, জনসমাবেশ নিষিদ্ধ, মাস্ক না পরলে জরিমানার মতো কড়া ব্যবস্থা নিয়ে দেশটি। এমনকি জনগণকে করোনায় আক্রান্তদের দুর্ভোগ দেখাতে হাসপাতালের ভেতরে সাংবাদিকদের প্রবেশের অনুমতিও দিয়েছে কসোভো সরকার।
এরপরও বিশ্বাস ফেরেনি অনেকের। তেমনই একজন মেন্দিম হোক্সহা। নিজের অফিসের সামনে ‘এখানে মাস্ক দরকার নেই’ লেখা কাগজ সেঁটে রেখেছেন তিনি।
২৫ বছর বয়সী এ যুবক বার্তা সংস্থা এএফপি’কে বলেন, ‘আমি মহামারির কোনও হুমকি দেখছি না। মানুষের মৃত্যু ভাইরাসের কারণে নয়, অন্য স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে হচ্ছে।’
লিওনার্ড প্রিশিভা নামে প্রিস্টিনার আরেক বাসিন্দা দাবি করেন, করোনাভাইরাস সাধারণ ফ্লুর চেয়ে বেশি কিছু নয়। তিনি বলেন, ‘শুরুতে তারা (সরকার) বলল দূরত্ব রাখতে হবে, মাস্ক আর গ্লোভস পরতে হবে। এখন কেউই দূরত্ব বা গ্লোভসের ধার ধারে না। অথচ তারা আমাদের মাস্ক পরাতে চায়, যেন ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় আমাদের দম বন্ধ করতে পারে।’
Advertisement
এমন উদ্ভট পরিস্থিতির জন্য বিশেষজ্ঞরা কসোভোয় বছরের পর বছর ধরে চলা দুর্নীতি ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সরকারের ওপর থেকে জনগণের বিশ্বাস চলে যাওয়াকেই দায়ী করেছেন।
প্রিস্টিনা ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ও সমাজবিজ্ঞানী শেমসি ক্রাস্নিকি বলেন, ‘জনগণের একটি উল্লেখযোগ্য অংশই বিশ্বাস করে, এগুলো (বিধি-নিষেধ) শুধু সরকার, বৃহৎ শক্তি বা নির্দিষ্ট রাজনৈতিক শক্তির স্বার্থের কারণে।’
করোনা সংক্রান্ত জরিমানা চালুর প্রথম সপ্তাহেই কসোভোর পুলিশ অন্তত পাঁচ হাজার জনকে মাস্ক না পরা বা সামাজিক দূরত্ব বজায় না রাখার কারণে দণ্ড দিয়েছে।
তবে করোনাভাইরাস যে কোনও গুজব নয় বা এসব বিধি-নিষেধও কোনও ব্যক্তি-গোষ্ঠীর স্বার্থে নয়, তা হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছেন আক্রান্তরা।
কয়েক সপ্তাহ অক্সিজেন থেরাপি নিয়ে সদ্য সুস্থ হয়ে ওঠা এক বৃদ্ধা বলেন, ‘সত্যি বলতে, আমিও বিশ্বাস করিনি এর (করোনা) অস্তিত্ব আছে। এত কিছুর মধ্য দিয়ে যাওয়ার পর এখন আমি নিশ্চিত (করোনাভাইরাস আছে) আর আমি গোটা জাতিকে তা জানাতে চাই।’
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান
কেএএ/পিআর