পাঠদান ও পরিবার রেখে এমপিওভুক্তির দাবিতে রাজধানীতে এসে চার দিন ধরে আমরণ অনশন করছেন নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা। রাত-দিন অনশন করতে গিয়ে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাদের পরিবারের সদস্যরাও মানবেতর জীবন যাপন করছেন। কিন্তু সরকারের সাড়া পাচ্ছেন না তারা। তারপরও প্রধানমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে আছেন সুদৃষ্টির আশায়। মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনশনরত শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সারা দেশে প্রায় সাড়ে আট হাজার নন-এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা রয়েছে। এতে কর্মরত রয়েছেন অন্তত এক লাখ ২০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী। এর মধ্যে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ১০ থেকে ১৫ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু নানা দাবির পরেও এমপিওভুক্ত করা হয়নি। তবে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে অসংখ্য শিক্ষার্থীরা পাস করেছেন। বর্তমানে অধ্যয়নরত রয়েছেন লাখো শিক্ষার্থী। কিন্তু বহু বছর ধরে প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত না হওয়ায় বেতন ভাতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। ফলে মানবেতর জীবন যাপন করছে তাদের পরিবার। মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গিয়ে দেখা যায়, শতাধিক শিক্ষক ফুটপাতে শুয়ে আছেন। অনেকের শরীরে স্যালাইন চলছে। অসুস্থ হয়ে পড়েছেন অনেকেই। এরই মধ্যে ২৫ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। তিনজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কিন্তু তারপরেও সরকারের পক্ষ থেকে খোঁজখবর নেয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন শিক্ষকরা।শিক্ষামন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০১০ সালের পর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি বন্ধ রয়েছে। সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী-এমপিরা শিক্ষামন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে তদরিব করেও ব্যর্থ হয়েছেন। এ নিয়ে জাতীয় সংসদও বেশ কয়েক বার উতপ্ত হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রীও এমপিওভুক্তির পক্ষে কথা বলেছেন। কিন্তু অর্থমন্ত্রীর অনড় অবস্থানের কারণে চলতি অর্থ বছরের বাজেটেও এমপিওভুক্তির জন্য অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়নি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ড. আফছারুল আমীন বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত নয় তা দেখেইতো শিক্ষকরা নিয়োগ নিয়েছিলেন। তবে এখন কেন পাঠদান রেখে আন্দোলনে নেমেছেন? পরিচালনা কমিটি বেতন দিতে পারবে না জেনেও শিক্ষক নিয়োগ দেয় কিভাবে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি এমপিওভুক্তির জন্য। তবে সিদ্ধান্ত সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের। নিয়মনীতি ও বিধিমালা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠান হলে এক সময় এমপিওভুক্তি করা হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। নন এমপিও শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ তাপস কুমার কুণ্ডু বলেন, আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। তাই বাড়ি ফিরে যাওয়ার উপায় নেই। আমরা প্রধানমন্ত্রীর দিকেই তাকিয়ে আছি। তিনি একযোগে ২৬ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারি করেছেন। তিনি আমাদের খালি হাতে ফিরিয়ে দিতে পারেন না। আমরা একদিকে অনশন পালন করলেও অন্য শিক্ষকরা জেএসসি পরীক্ষার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন বলে তিনি দাবি করেন।এ প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, অর্থ বরাদ্দ না থাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা যাচ্ছে না। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি ভিন্ন কোনো উপায়ে এগুনো যায় কি না। এ বিষয়ে সংসদেও অনেক কথা বলেছি। এ নিয়ে আমরা কাজ করছি। কারণ নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষকরাও শিক্ষা পরিবারের অংশ।প্রসঙ্গত, ২০১২ সালে একই দাবিতে রাজধানীতে অনশনসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছিলেন শিক্ষকরা। পরে শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাসে তারা আন্দোলন স্থগিত করেন। এরপর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য শিক্ষামন্ত্রণালয়সহ সরকারের বিভিন্ন দফতরে তদবরি করেও ব্যর্থ হন তারা। পরে এমপিওভুক্তির দাবিতে গত বছরের ২৬ ও ২৭ অক্টোবর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এবং ২৮ ও ২৯ অক্টোবর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা। এরপর আবারো গত শুক্রবার থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করছেন তারা।এনএম/এসএইচএস/পিআর
Advertisement