জাতীয়

ছয় মাসে এক টাকাও আয় নাই, মাস ঘুরলেই লাখ লাখ ব্যয়!

রাজধানী বিজয়নগরের একটি বহুতল ভবনে হজ ও ওমরাহ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত মধ্যবয়সী আশিকুর রহমান (ছদ্মনাম)। ঢাকার পাশাপাশি সৌদি আরবেও অফিস নিয়ে বেশ ভালোভাবে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলেন। দেশে ও প্রবাসের দুটি অফিসে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাসিক বেতনসহ অন্যান্য খরচ সাড়ে তিন লাখ টাকা। কিন্তু গায়ে লাগতো না। সততার সঙ্গে হজ ও ওমরায় যাত্রী পাঠানোর কারণে বেশ সুনাম কুড়িয়েছেন। সব খরচ বাদে মোটা অঙ্কের টাকা মুনাফা করতেন।

Advertisement

কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে ছয় মাস ধরে ব্যবসা সম্পূর্ণ বন্ধ। ব্যবসা বন্ধ থাকলেও খরচ আগের মতো রয়ে গেছে। করোনা মহামারি কেটে আবারও ব্যবসা শুরু হবে— এমনটা ভেবে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরিতে বহাল রাখেন। ব্যবসা থেকে সঞ্চয় করা মুনাফার টাকা ভেঙে এতদিন চলেছেন। পাঁচ মাসে বিপুল অঙ্কের টাকা খরচ হওয়ায় গত মাস থেকে অফিস বন্ধ করে দিয়েছেন। ব্যবসা শুরু হলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আসতে বলেছেন।

এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে ওই ব্যবসায়ী বলেন, মাসের পর মাস লাখ লাখ টাকা লোকসান গুণে আর পেরে উঠতে পারছিলাম না। ছয় মাস ধরে একটা টাকা ইনকাম নাই অথচ মাস ঘুরলেই লাখ লাখ টাকা খরচ। আপাতত অফিস বন্ধ রেখেছি। শুনছি দু-এক মাসের মধ্যে সীমিত পরিসরে ওমরাহ হজের কার্যক্রম শুরু হতে পারে। এখন সে আশায় বুক বেঁধে আছি।

শুধু আশিকুর রহমান নন, হজ ও ওমরাহ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশের কয়েকশ হজ ও ওমরাহ এজেন্সির লোকজনের মুখে হতাশার করুণ সুর শোনা যাচ্ছে। চলতি বছরের মার্চ মাসের আগে মতিঝিল, গুলিস্তান ও গুলশানসহ বিভিন্ন এলাকার হজ এবং ওমরাহ এজেন্সির ব্যবসায়ীদের অফিসগুলো সারাক্ষণ অসংখ্য হজ ও ওমরাহ যাত্রীদের পদচারণায় সরব থাকলেও এখন খাঁ খাঁ করছে। কেউ আপাতত অফিস বন্ধ করে দিয়েছেন, আবার কেউ নামকাওয়াস্তে অফিস খোলা রাখছেন। সবাই এখন আশায় বুক বাঁধছেন, সৌদি সরকার কখন আবার ওমরাহ কার্যক্রম শুরু করবে।

Advertisement

দেশের কয়েকশ হজ ও ওমরাহ এজেন্সির মূল ব্যবসাই হলো পবিত্র হজ ও ওমরাহ পালনে আগ্রহীদের সৌদি পাঠানো। চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ৩৮ হাজার ১৪৭ জনের হজে যাওয়ার কথা ছিল। প্রায় ৬৩ হাজার যাত্রী চূড়ান্ত নিবন্ধন করেছিলেন। সৌদি আরবসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মহামারি করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে এ বছর সৌদি সরকার শুধু সে দেশে অবস্থানকারী বিভিন্ন মুসলিম দেশের হাজারখানেক মানুষকে হজ করার সুযোগ দেয়।

ইতোমধ্যে আগামী বছরে পবিত্র হজ পালনে ইচ্ছুকদের প্রাক-নিবন্ধনের জন্য ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা বেধে দিয়েছে। গতকাল ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে এক লাখ ৬২ হাজার ৩২০ জন প্রাক-নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন। এ অবস্থায় বিভিন্ন হজ ও ওমরাহ এজেন্সিগুলো বর্তমানে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি এবং সৌদি সরকারের ফের ওমরাহ কার্যক্রম শুরুর অপেক্ষায় রয়েছেন।

‘এস কে এয়ার’ নামে একটি হজ ও ওমরাহ এজেন্সির স্বত্বাধিকারী বলেন, কবে থেকে ওমরাহ কার্যক্রম শুরু হবে সে সম্পর্কে নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছে না। শুনেছি, আগামী নভেম্বর থেকে সীমিত পর্যায়ে ওমরাহ কার্যক্রম শুরুর চিন্তাভাবনা করছে সৌদি সরকার। তিনি আরও বলেন, মাসের পর মাস লোকসান গুণতে গুণতে পাগলপ্রায় অবস্থা। এ অবস্থা আরও কয়েক মাস চললে ব্যবসাই গুটিয়ে ফেলতে হবে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসেন তছলিম জাগো নিউজকে বলেন, গত ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে এজেন্সিগুলো দুর্বিষহ দিন কাটাচ্ছে। ইনকাম না থাকলেও লাখ লাখ টাকা খরচের ফলে দেউলিয়া হওয়ার দশা।

Advertisement

তিনি বলেন, এমন অবস্থা শুধু এ দেশের নয়, গোটা বিশ্বের। করোনার কারণে সর্বত্র বেহাল দশা বিরাজ করছে। ‘আগামী ১০০ বছরে এমন ঘটনা ইতিহাসে লেখা থাকবে’ মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, কবে নাগাদ সৌদি সরকার ওমরাহ কিংবা হজ কার্যক্রম শুরুর অনুমতি দেবে তা অফিসিয়ালি কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছে না। বিভিন্ন অসমর্থিত সূত্র থেকে কেউ অক্টোবরে, আবার কেউ নভেম্বরে সীমিত পর্যায়ে ওমরাহ কার্য়ক্রম শুরু হওয়ার কথা বলছেন। কিন্তু এসব খবরের কোনো সত্যতা পাওয়া যাচ্ছে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।

এমইউ/এমএআর/এমএস