সকাল ৯ টা থেইকা (থেকে) বইসা আছি। দুই ঘণ্টা পর (১১টায়) ডাক্তার আইলেও কইলো ওষুধ নাই। এমন করলে গরীব মানুষ বাঁচবো ক্যামনে। সরকার না কয় আমাগো বিনামূল্যে ওষুধ দিবো। এইডা কি তার নমুনা। এভাবেই নিজের আক্ষেপ আর ক্ষোভের কথা বলছিলেন পঞ্চাশউর্ধ্ব আলোয়া বেগম। জ্বর ও শরীর ব্যথা নিয়ে তিনি গিয়েছিলেন মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বড়টিয়া ইউনিয়নের করজনা কমিউিনিটি ক্লিনিকে। হেলথ প্রোভাইডারের জন্য ক্লিনিকের সামনে দুই ঘণ্টা অপেক্ষায় থাকেন তিনি। কিন্তু ক্লিনিকে ওষুধ না থাকায় তাকে বাড়ি ফিরতে হয়েছে খালি হাতে। ক্লিনিক সংলগ্ন দোকানদাররা জানান, প্রায় দিনই থেলথ কেয়ার প্রোভাইডার দেরিতে আসেন। আবার যানও তাড়াতাড়ি। মাঝে মধ্যেই ক্লিনিক বন্ধ থাকে। কখন বন্ধ ও কখন চালু থাকবে তার নিশ্চিয়তা না পেয়ে রোগীরা আশেপাশের ওষুধের দোকান থেকে ওষুধ নিয়ে যান।করজনার এ কমিউিনিটি ক্লিনিকের মতো মানিকগঞ্জের প্রায় সবগুলো কমিউনিটি হেলথ কেয়ার সেন্টারের প্রায় একই অবস্থা। নিয়ম অনুযায়ী সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৩ টা পর্যন্ত ক্লিনিকগুলো খোলা থাকার কথা। কিন্তু হেলথ কেয়ার প্রোভাইডাররা অফিস করছেন ইচ্ছে মতো। শুক্রবার ছাড়া সপ্তাহের ৬ দিন কমিউনিটি ক্লিনিক খোলা থাকার নিয়ম থাকলেও তা মানছেন না সংশ্লিষ্টরা। সপ্তাহে তিনদিন করে স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মী কমিউনিটি ক্লিনিকে থাকার নিয়ম থাকলেও তারাও যান না ঠিকমতো। অনেক স্থানে রোগী প্রতি টাকা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।জেলা সিভিল সার্জন অভিস সূত্র জানায়, মানিকগঞ্জের সাত উপজেলায় এ পর্যন্ত ১৬৬টি কমিউনিটি ক্লিনিকের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। বর্তমানে ১৫২টি ক্লিনিক চালু রয়েছে। বাকি ক্লিনিকগুলো নির্মাণাধীন রয়েছে।সরেজমিনে ঘিওর উপজেলার করজনা, শিবালয় উপজেলার অন্বয়পুর ও ছোট আনুলিয়া কমিউনিটি ক্লিনিক ঘুরে দেখা গেছে, ক্লিনিকগুলোতে আগের চেয়ে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু বাড়েনি সেবার মান। চাহিদা মতো ওষুধও মিলছে না সব সময়।ছোট আনুলিয়া কমিউনিটি ক্লিনিকের হেলথ প্রোভাইডার সৈয়দা আফরোজ কল্প জাগো নিউজকে জানান, তার ক্লিনিকে প্রতিদিন গড়ে ৫০ থেকে ৬০ জন রোগী আসেন। কিন্তু তাদের ঠিকমতো ওষুধ দিতে পারেন না। কারণ প্রতিমাসে একটি কার্টুনে নিদিষ্ট পরিমাণ ওষুধ পাঠানো হয় ক্লিনিকে। হঠাৎ করে কোনো রোগের উপদ্রব বেড়ে গেলে ওষুধের চাহিদা বেড়ে যায়। কিন্তু নিদিষ্ট পরিমাণ ওষুধ থাকায় সেই চাহিদা পূরণ সম্ভব হয় না। তবে নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যে সাধ্যমতো রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান তিনি।প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে সরকারিভাবে হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার, একজন পরিকল্পনা কর্মী ও স্বাস্থ্য সহকারী ছাড়া আর কোনো পদ নেই। তাই ক্লিনিকের আসবাবপত্র রক্ষণাবেক্ষণসহ সুইপার ও ঝাড়ুদারের কাজও করছেন এরাই। অন্বয়পুর কমিউনিটি ক্লিনিকের হেলথ প্রোভাইডার আলোকি সাহা জাগো নিউজকে বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে সরকার স্বাস্থ্য সেবা মানুষের দৗেড় গোড়ায় পৌঁছে দিয়েছেন। এসব ক্লিনিক থেকে মানুষ স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে উপকৃত হচ্ছেন। কিন্তু জনবল সংকটে অনেক ক্ষেত্রেই কাঙ্খিত সেবা দেয়া সম্বভ হচ্ছে না। তিনি বলেন, ক্লিনিক পরিষ্কার রাখাসহ আসববাবপত্র রক্ষণাবেক্ষণ সব কিছুই তাকে করতে হয়। একজন পিয়ন অথবা সুইপার থাকলে ক্লিনিকের পরিবেশ আরো ভালো থাকতো।এদিকে ক্লিনিক এলাকার বাসিন্দা ও রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে প্রোভাইডাররা সময় মতো উপস্থিত না হওয়ায় রোগীরা চরম ভোগান্তির শিকার হন। বিশেষ করে প্রবীণ নারী-পুরুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় থাকতে গিয়ে অনেক সময় বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন। বেশির ভাগ কমিউনিটি ক্লিনিকেই রোগী প্রতি টাকা আদায়ের অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।সরেজমিনে দেখা যায়, করজনা কমিউনিটি ক্লিনিকে ডায়াবেটিকস পরীক্ষার জন্য ২০ টাকা এবং সাধারণ রোগী প্রতি ২ টাকা আদায় করা হচ্ছে। রোগীরা এ বিষয়ে প্রতিবাদ জানালেও কোনো কর্ণপাত করেনি ক্লিনিক পরিচালনা কমিটি।এ ক্লিনিকের হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার মো. হাজ্জাজ খোকন জাগো নিউজকে বলেন, ক্লিনিকের উন্নয়নের জন্যই কমিটি উল্লেখিত পরিমাণ টাকা আদায়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।তার ক্লিনিকে ওষুধ না থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, অক্টোবর মাস থেকে ওষুধ নেই। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বারবার জানিয়েও ওষুধ পাচ্ছি না।হেলথ প্রেভাইডাররা নিয়মিত ক্লিনিকে উপস্থিত না থাকা, রোগীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় ও ওষুধ না থাকার বিষয়ে কথা হয় মানিকগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. ইমরান আলীর সঙ্গে।জাগো নিউজকে তিনি বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রতি মানুষের আস্থা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। এ কারণেই প্রতিদিন রোগীর ভিড় দেখা যায়। তবে হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারা নিয়মিত ক্লিনিকে উপস্থিত না থাকার বিষয়টি তার জানা নেই। এ বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন তিনি। রোগীদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের বিষয়ে বলেন,পরিচালনা কমিটি ক্লিনিকের আসববাবপত্র রক্ষণাবেক্ষণ,পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার খরচের জন্য এ ধরণের উদ্যোগ নিতে পারেন। তবে সেটা জোর করে আদায় করা যাবে না।চাহিদা মতো ওষুধ না পাওয়ার বিষয়ে সিভিল সার্জন বলেন, সব ক্লিনিকে একই পরিমাণ ওষুধ পাঠানো হয়। অনেকেই স্থানীয় প্রভাবশালীদের চাপে কোনো কোনো রোগীকে বেশি ওষুধ দিয়ে দেন। এ জন্যই নিদিষ্ট সময়ের আগেই ওষুধ শেষ হয়ে যায়। তবে জরুরি প্রয়োজনে বিশেষ ব্যবস্থায় ওষুধ দেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।এসএস/পিআর
Advertisement