বিনোদন

নিজেকে ৪০ বছরের তরুণী ভাবেন আশা ভোঁসলে

উপমহাদেশের কিংবদন্তী সংগীতশিল্পী আশা ভোঁসলে। বাংলা, হিন্দি, তামিল, কান্নাড়াসহ বহু ভাষায় তিনি গান করেছেন হাজার হাজার। কয়েকটি যুগ ধরেই তার গানে বুঁদ হয়ে আছেন শ্রোতারা। তবে বলিউডের সিনেমায় আশা ভোঁসলের কণ্ঠ সবচেয়ে বেশি বিকশিত হয়েছে বলে মনে করা হয়।

Advertisement

সেই গানের পাখি ৮৮ বছরে পা রাখলেন। গতকাল ৮ সেপ্টেম্বর ছিলো তার জন্মদিন। এদিনে বড়বোন লতা মুঙ্গেশকরসহ অনেক গুণী ব্যক্তিদের শুভেচ্ছা পেয়েছেন তিনি। ভেসেছেন ভক্ত অনুরাগীদে ভালোবাসায়।

বয়স তাকে কাবু করতে পারেনি। এতটুকু চিড় ধরাতে পারেনি তার জীবনীশক্তিতে। তার চিরনবীন হয়ে থাকার মন্ত্র, ‘সামনের দিকে এগিয়ে চলা।’ জন্মদিনে এমন বার্তাই দিলেন টুইটারে। সেখানে নিজেকে তিনি ৪০ বছরের তরুণী হিসেবেই আখ্যা দিলেন।

টুইটারে আশা লিখেছেন, ‘আমি আমার ৮৭ বছর শেষ করেছি জীবনের। ৮৮তম বছরে পা রেখেছি। তবে আমি অনুভব করি আমার বয়সটা ৪০! আমার মতো আমি আশা করি আপনারা সবাই জীবন সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা রাখবেন। হাসতে থাকুন এবং আমার পরামর্শটি হল আপনার চারপাশের জন্য একজন ইতিবাচক ব্যক্তি হয়ে উঠুন, সুখ ছড়িয়ে দিন।’

Advertisement

আশা ভোঁসলে জন্মদিনে নিজের জীবন সম্পর্কে সাংবাদিকদের বলেন, ‘জীবনে কোনো অনুশোচনা নেই। বেঁচে আছি, সবার ভালোবাসা পেয়েছি, এতেই খুশি। আমি সত্ জীবন যাপন করতে পেরেছি বলে মনে করি। ১০ বছর বয়সে প্রথম গান গাওয়ার পর নিজের পায়ে দাঁড়াতে পেরেছি। এই ৮৭ বছরেও আমি গান গাইতে পারি। নিজের পায়েই দাঁড়িয়ে আছি। আর আমার পরিবারও খুব ভালো। ভক্তদের পরিবার আরও বড়। আর কী চাওয়ার আছে এক জীবনে।’

এখনও নিজের ঘরের রান্নাঘরের প্রধান শেফ তিনিই। লকডাউনের সময় ভেজ-নন ভেজ নানা খাবার রেঁধেছেন পরিবারের জন্য। জনপ্রিয় গান ‘ইয়ে মেরা দিল’ যার গলায় জীবন্ত হয়ে উঠেছিল, সেই আশার ভাষ্য, ‘আমি যা-ই করি খুব তাড়াতাড়ি করে ফেলতে পারি। তা সে গানই হোক বা রান্নাবান্না। তাই যখন কোনো রেসিপি তৈরি করি, রান্নাঘরের অন্যরা তখন আমার গতির সঙ্গে পেরে ওঠে না। এটাই আমি আর আমার জীবন।’

তার পছন্দের ফ্রেশ ক্রিম ফ্রুট কেক কেটে ৮৭তম জন্মদিন সেলিব্রেট করেছেন আশা ভোঁসলে। রকমারি ফল ও ড্রাই ফ্রুটে সাজানো ছিল সেই কেক। তার জন্য অর্ডার দিয়ে মুম্বাই থেকে সেই কেক তার লোনাভলার বাড়িতে আনা হয়েছিল। যেখানে ছেলে আনন্দ, পুত্রবধূ অনুজা ও নাতি-নাতনি জনাই ও রানজাইয়ের সঙ্গে থাকেন প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী।

প্রসঙ্গত, ১৯৩৩ সালের ৮ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ ভারতের সঙ্গিল রাজ্যের (বর্তমান মুম্বাইয়ে অবস্থিত) সঙ্গিল জেলার গৌড়ে এক সংগীত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন কালজয়ী গায়িকা আশা ভোঁসলে। তার বাবা দীনানাথ মঙ্গেশকর ছিলেন মারাঠি ভাষী গোমন্থক মারাঠা সমাজের সদস্য এবং মারাঠি সংগীত মঞ্চের একজন অভিনেতা ও শাস্ত্রীয় সংগীতশিল্পী। ভোঁসলের যখন নয় বছর বয়স, তখন তার পিতা মৃত্যুবরণ করেন। তার পরিবার তখন পুনে থেকে কোহলাপুর এবং পরে মুম্বাইয়ে চলে আসে।

Advertisement

আশা ও তার বড় বোন লতা মঙ্গেশকর তাদের পরিবারের ভরণপোষণের জন্য চলচ্চিত্রে গান গাওয়া ও অভিনয় শুরু করেন। তার গাওয়া প্রথম গান হল মারাঠি ভাষার ‘মাঝা বল’ (১৯৪৩) চলচ্চিত্রে ‘চল চল নব বল’। গানটির সুরায়োজন করেছিলেন দত্ত দবজেকর। তার হিন্দি চলচ্চিত্রের গানে অভিষেক হয় হংসরাজ বেহলের ‘চুনারিয়া’ (১৯৪৮) ছবিতে ‘সাবন আয়া’ গানে কণ্ঠ দেয়ার মধ্য দিয়ে।

আশা তার দীর্ঘ ক্যারিয়ারে মোট ৯২৫টিরও বেশি সিনেমায় গান গেয়েছেন বলে মনে করা হয়। যেখানে গানের সংখ্যাটি প্রায় ১২ হাজারেরও বেশি। ২০১১ সালে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস তাকে সর্বাধিক সংখ্যক গান রেকর্ডকারী হিসেবে ঘোষণা করেছে।

১৯৭৭ সাল পর্যন্ত আশা ভোঁসলে সাতবার ফিল্মফেয়ার সেরা নেপথ্য গায়িকার পুরস্কার পেয়েছেন। ১৯৭৭ সালের পর তিনি জানান যে তার নাম যেন আর ফিল্মফেয়ার পুরস্কারের জন্য গণ্য করা না হয়। ২০০১ সালে তিনি ‘ফিল্মফেয়ার আজীবন সম্মাননা পুরস্কার’ পান।

এছাড়া ভারত সরকার তাকে ২০০৮ সালে পদ্মভূষণ উপাধিতে ভূষিত করেছে।

এলএ/জেআইএম