দেশজুড়ে

ওপারে গুলিবিদ্ধ, এপারে মৃত্যু

শেরপুরের শ্রীবরদী সীমান্তে এবার বন্যহাতির গুলিবিদ্ধ মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ২ নভেম্বর সোমবার সকালে মৃত হাতিটির সুরতহাল তৈরি ও ময়নাতদন্ত শেষে কর্নঝোড়া সীমান্তের আগুপাড়া এলাকায় মাটিচাপা দেয়া হয়েছে। শেরপুর বনবিভাগের কর্ণজোড়া বীট কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জানিয়েছেন, হাতিটির ডান পায়ের উপরের দিকে গুলিবিদ্ধ হওয়ার দুইটি ক্ষত রয়েছে। এটি একটি বাচ্চা হাতি। বন্যহাতিটি সীমান্তের ওপারে আক্রান্ত হয়ে রোববার বিকেলে এপারে আগুপাড়া এলাকায়্এসে মরে যায়। পাহাড়ে গরু চড়ানো রাখালদের কাছ থেকে সংবাদ পেয়ে বন্যহাতিটির মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। সোমবার সকালে মৃত হাতিটির সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করা হয় এবং শ্রীবরদী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ভেটোরিনারি সার্জন ডা. মো. আব্দুর রউফ ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেন। পরে সেখানেই হাতিটিকে মাটিচাপা দেয়া হয়। বন্য হাতি সুরক্ষায় কাজ করা আইইউসিএন এর সাইট ম্যানেজার মিজানুর রহমান জাগো নিউজকে জানান, এটি বাচ্চা হাতি। বয়স আনুমানিক এক থেকে দেড় বছর হবে। শুড় থেকে লেজ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে নয় ফুট লম্বা হাতিটি মর্দা (পুরুষ)। উচ্চতা সাড়ে চার ফুট। কর্ণজোড়া বিট অফিস থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে পাহাড়ের অভ্যন্তরে ভারত সীমান্তের ১০৯৬নং সীমানা পিলার থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার ভেতরে একটি গর্তে হাতির মৃতদেহটি পাওয়া যায়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সীমান্তের ওপারে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পোকাসন্ধি এলাকায় গত শুক্রবার দলছুট হয়ে পড়া বাচ্চা হাতিটিকে ধরার জন্য স্থানীয় অধিবাসীরা চেষ্টা চালায়। ওই সময় ওপারে অনেক চিৎকার চেঁচামেচি এবং কয়েকটি গুলির শব্দও শোনা যায়। একপর্যায়ে তাড়া খেয়ে দলছুট হাতিটি গুলিবিদ্ধ অবস্থায় এপাড়ের বনে প্রবেশ করে বান্দাজোড়া গ্রামের আগুপাড়া এলাকার পাহাড়ে অবস্থায় নেয়। রোববার বিকেলে পাহাড়ে গরু চড়ানো অবস্থায় কয়েকজন রাখাল বন্যহাতিটিকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় দেখতে পান। এসময় হাতিটি খুব বেশি নাড়াচাড়া করতে পারছিলো না। একপর্যায়ে তারা কাছে গিয়ে হাতিটিকে কলাগাছ এবং নানা খাবার দিতে চেষ্টা করেন। পরে বনবিভাগকে খবর দেয়া হয়। কিন্তু সন্ধ্যায় বন্যহাতিটি পাশের একটি গর্তে পড়ে মারা যায়। সংবাদ পেয়ে বনবিভাগের বিট কর্মকর্তা এবং আইইউসিএন কর্মকর্তাসহ লোকজন ঘটনাস্থলে যায়। কিন্তু রাত হয়ে যাওয়ায় এবং কাছাকাছি অন্য একটি পাহাড়ে বন্যহাতির উপস্থিতি থাকায় নিরাপত্তার কারণে মৃত হাতিটির সৎকার করা সম্ভব হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দা আদিবাসী নেতা প্রাঞ্জল এম. সাংমা জাগো নিউজকে জানান, গরু রাখালদের মাধ্যমে রোববার বিকেলে প্রথম হাতিটির অসুস্থতার খবর পাওয়া যায়। কিন্তু সন্ধ্যায় গুলিবিদ্ধ হাতিটি মারা যায়। সীমান্তের ওপারে দুইদিন আগে অনেক চিৎকার শুনি।এরপর গুলির শব্দ পাওয়া যায়। মৃত হাতিটির পায়ে গুলির চিহ্ন দেখে মনে হয়েছে ওপারের লোকজন হাতিটিকে ধরার চেষ্টা করেছিলো। কিন্তু গুলিবিদ্ধ হয়ে ভয়ে হাতির বাচ্চাটি এপারে এসে মারা গেছে। উল্লেখ্য, ঝিনাইগাতী উপজেলার হালচাটি সীমান্তে গত ২৫ আগস্ট পেটে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় সাত-আট বছর বয়সী একটি বন্যহাতির মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। সেটিও সীমান্তের ওপার থেকে গুলিবিদ্ধ হয়ে এপারে এসে মারা গিয়েছিল। হাকিম বাবুল/এমজেড/এমএস

Advertisement