রাজন কুমার সাহা ৩৬তম বিসিএসের পুলিশ ক্যাডারে আছেন। বাবা রামলাল সাহা, মা ঝরনা সাহা ছায়া। তিনি ১৯৯১ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর রাজবাড়ী জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি রতনদিয়া রজনীকান্ত সরকারি মডেল উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি, রাজবাড়ী সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইআইটি বিষয়ে সম্মানসহ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
Advertisement
সম্প্রতি তার বিসিএস জয়, ভবিষ্যৎ স্বপ্ন ও সফলতার গল্প শুনিয়েছেন জাগো নিউজকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মো. সাঈদ মাহাদী সেকেন্দার—
আপনার ছোটবেলা কেমন কেটেছে?রাজন কুমার সাহা: নিজ এলাকা রাজবাড়ী জেলার কালুখালীতে আমার বেড়ে ওঠা। শৈশবে বন্ধুদের সাথে আড্ডা, দুরন্তপনায় অনেকটা প্রাণবন্ত আবহে গ্রামীণ পরিবেশে সময় কেটেছে। পরিবারের শাসন, স্নেহ এবং প্রকৃতির সাথে মিতালীতে আমার শৈশব মধুর স্মৃতিময়।
পড়াশোনায় কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল কি?রাজন কুমার সাহা: পড়াশোনায় কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল না। বাবা-মার অনুপ্রেরণা এবং পরিবারের সহযোগিতা সব সময় আমার শিক্ষাজীবনে সহায়ক ছিল। শিক্ষকদের সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণা সাহস জুগিয়েছে। পরিবারের আর্থিক দৈন্যও তেমন ছিল না। ফলে শিক্ষাজীবনে তেমন কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল না। আমি যখন যে কাজ করেছি সব সময় পরিবারের সহযোগিতা পেয়েছি।
Advertisement
বিসিএসের স্বপ্ন দেখেছিলেন কখন থেকে?রাজন কুমার সাহা: বিসিএসের স্বপ্ন অনেকটা শৈশবেই দেখেছি। ছোটবেলায় বাবা-মা বলতেন, এমন কোনো পেশায় যেতে হবে; যেন মানুষ ভালোবাসে, মানুষের জন্য কাজ করার সুযোগ থাকে। আমার প্রতিবেশী ও বড় ভাই লিটন কুমার সাহা, বর্তমানে পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি আমার অনুপ্রেরণার উৎস। ছোটবেলায় দেখেছি, তিনি বাড়িতে এলে অনেক মানুষ আসতো তার কাছে। বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতেন। মানবিক জায়গায় মানুষের পাশে দাঁড়াতেন। তাকে দেখে একধরনের আগ্রহ তৈরি হয় তার মতো হওয়ার। সেভাবে অনুপ্রেরণা নিয়ে আমার বেড়ে ওঠা। পেশা হিসেবে পুলিশে সরাসরি জনগণের সাথে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। ফলে আগ্রহ তৈরি হয় পেশা হিসেবে গ্রহণ করার। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে চেষ্টা করেছি। বলা যায়, ৩৬তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে যোগদানের মাধ্যমে সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন হয়েছে।
বিসিএস যাত্রার গল্প শুনতে চাই—রাজন কুমার সাহা: বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন একাডেমিক ব্যস্ততা ছিল। তবে বিসিএস সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সেমিনারে অংশগ্রহণ করতাম ও নিয়মিত পত্রিকা পড়তাম। যা আমার বিসিএস প্রস্তুতির জন্য সহায়ক ছিল। বিসিএসের জন্য প্রস্তুতি মূলত অনার্স শেষ হওয়ার পর শুরু করি। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক পড়ালেখা এবং সাধারণ জ্ঞান গুরুত্ব সহকারে নতুন করে রিভিশন দিয়েছি। এভাবে একটি ভালো প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব হয়েছে।
কারো কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছেন কি?রাজন কুমার সাহা: আগেই উল্লেখ করেছি, আমার প্রতিবেশী শ্রদ্ধেয় বড় ভাই লিটন কুমার সাহা, তিনি বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে যোগদান করেন। সামাজিক অবস্থান এবং মানুষের জন্য কাজ করার যে সুযোগ রয়েছে; সেটি আমাকে অনুপ্রাণিত করতো সব সময়। তিনি আমার অনুপ্রেরণার মূল জায়গা। সুতরাং তিনিই আমার মূল অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছেন। এ ছাড়া পরিবারের সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণা ছিল সব সময়।
একজন পুলিশ কর্মকর্তা হিসাবে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?রাজন কুমার সাহা: পেশাগত দ্বায়িত্ব পালনের পাশাপাশি মানবিক জায়গায় মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। বাংলাদেশ পুলিশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া ও নীতিনির্ধারণী জায়গায় সুযোগ পেলে কাজ করার ইচ্ছা আছে। আমার পেশায় থেকে মানুষের জন্য কাজ করার সুযোগ অনেক বেশি। আমি সুযোগটি কাজে লাগাতে চাই। ‘মুজিববর্ষের অঙ্গীকার, পুলিশ হবে জনতার’ সে জায়গাটিকে গুরুত্ব দিতে চাই। এমনকি সৎভাবে জীবন-যাপন করতে চাই।
Advertisement
সাম্প্রতিক করোনা দুর্যোগে আপনার ভূমিকা কী?রাজন কুমার সাহা: করোনাকালীন ডিপ্লোম্যাটিক সিকিউরিটি জোনে পেশাগত দায়িত্বে ব্যস্ত সময় পার করেছি। ডিপ্লোম্যাটিক সিকিউরিটি জোনে কর্মরত পুলিশ সদস্যদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য যোগব্যায়াম নিয়ে কাজ করেছি। যা দেশ ও বিশ্বের গণমাধ্যমে গুরুত্বসহকারে স্থান পেয়েছে। ৩৬তম বিসিএস ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশন ও পুলিশ ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ করেছি। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি।
এসইউ/এএ/জেআইএম