ক্যাম্পাস

থাকার ঘরেই অধ্যাপকের গবেষণাগার

দেশীয় মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে গবেষণা চালাচ্ছেন ১ যুগেরও বেশি। তার দিনরাত পরিশ্রমের ফল কম মিষ্টি হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান গবেষকদের মধ্যে প্রথম স্থানটি তার। এমনকি গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশে ছাড়িয়ে গেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণ গবেষক ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. অরুণ কুমার বসাককেও।

Advertisement

সম্প্রতি স্কপাসের করা জরিপে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান গবেষণায় প্রথম হওয়া অধ্যাপকের নাম অধ্যাপক ড. ইয়ামিন হোসেন। বিশ্ববিদ্যালয়টির ফিশারিজ বিভাগের গুণী এ গবেষকের ৮৬টি নিবন্ধ প্রকাশ পেয়েছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন গবেষণা পত্রিকায়। আর পৌঁছে গেছেন প্রতিষ্ঠাকাল থেকে এখন পর্যন্ত সেরা ৫০ জন গবেষকের তালিকায়।

এর আগে, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স এবং মাস্টার্স শেষ করার পর জাপানের কগোশিমা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রি লাভের পর ২০০৬ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগে অধ্যাপনা শুরু করেন তিনি। সেই থেকে সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ সমৃদ্ধ করা এবং দেশের বাওরগুলোতে পুরোনো দেশি মাছ ফিরিয়ে নিয়ে আসা নিয়ে গবেষণা করেন।

আলাপকালে অধ্যাপক জানান, ২০১৫ সাল থেকে বঙ্গোপসাগরে মাছের প্রজনন মৌসুমের সুরক্ষায় প্রতিবছর ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন মাছ শিকার নিষিদ্ধ। মাছের প্রজনন মৌসুমের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এ নিষিদ্ধ সময়কালে প্রয়োজনীয় পুনর্বিন্যাস নিয়ে আসা এবং জীববৈচিত্র ক্ষতিগ্রস্ত না করে মাছ ধরার পরিমাণ নির্ধারণ নিয়েও কাজ করছেন তিনি।

Advertisement

বর্তমানে চারটি প্রকল্প তত্ত্বাবধায়ন করছেন। একটি প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বঙ্গোপসাগরে সামুদ্রিক সম্পদের সমৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করছেন। বর্তমানে দেশের ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে গবেষণা কার্যক্রম চলছে অধ্যাপক ইয়ামিন হোসেনের। এছাড়াও গবেষণা চালিয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড, নেপাল, পাকিস্তান ও ভারতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে।

তার গবেষণার পেছনের গল্পটাও অনন্য। বিভাগের গবেষণাগার রাতে ব্যবহারের সুযোগ নেই। তাই অধ্যাপক ইয়ামিন গবেষণার প্রয়োজনে নিজ বাসায়ই স্থাপন করেছেন গবেষণাগার।

থাকার ঘরে গবেষণাগার স্থাপনের কারণ জানতে চাইলে ড. ইয়ামিন হোসেন বলেন, বেশকিছু প্রকল্পে গবেষণার কাজটা রাতেও চালাতে হয়। রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগার ব্যবহারের সুযোগ না থাকায় খুব অসুবিধায় পড়তে হত। এ সমস্যা কাটাতে দেড় বছর আগে শিক্ষার্থীদের পরামর্শে বাড়িতেই গবেষণাগার খুলে ফেলি। তিনি জানান, করোনার সময়টাতে এটি বেশ কাজে দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও গবেষণায় প্রয়োজনীয় সব যন্ত্রপাতি এখানে থাকায় ছাত্রছাত্রীরা গবেষণার কাজটা এখানে চালিয়ে নিতে পারছে। এদিকে রাতে কোনো শিক্ষার্থীর থেকে যাওয়ার প্রয়োজন হলে গেস্টরুমেই থেকে যান। এখন মোট ২৮ জন শিক্ষার্থী গবেষক তার অধীনে গবেষণা করছেন।

ইয়ামিন হোসেনের অধীনে গবেষণা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী ওবাইদুর রহমান। ইয়ামিন হোসেনকে নিয়ে তিনি বলেন, ‘স্যারকে সবসময় গবেষণার কাজেই নিমগ্ন থাকতে দেখেছি। ক্লাস শেষ করে বাসায় না ফিরে স্যার ল্যাবে ঢুকে যান। আমরা শিক্ষার্থীরা যে কোনো প্রয়োজনে স্যারকে সবসময় পাশে পেয়েছি’।

Advertisement

তবে গবেষণার কৃতিত্ব সবটুকু শিক্ষার্থীদের দিতে চান অধ্যাপক ইয়ামিন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, এটি আমার একার অর্জন নয়, সকলের সম্মিল্লিত প্রচেষ্টার ফসল। মূলতঃ গবেষণার কাজগুলো ছাত্রছাত্রীরাই করে থাকে। সে হিসেবে এ অর্জনটির পুরো কৃতিত্ব আমার শিক্ষার্থীদেরই প্রাপ্য।

এমআরএম