বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার ইলুহার ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মন্টু মিয়া। বয়স তার ৫৫ বছর। মন্টু মিয়া জন্মের পর তার বাবা নুর মোহাম্মদ নামটি রেখেছিলেন। ২০১৮ সাল পর্যন্ত সবাই তাকে মন্টু মিয়া নামেই চিনতেন। এরপর তার নাম বদলে যায়। এখন এলাকায় রড খেকো মন্টু নামেই তিনি বেশি পরিচিত।
Advertisement
অবশ্য রড খেকো উপাধি দেয়ার পেছনে একটা কারণও আছে। গত কয়েক বছর ধরে তিনি রড চুরি করে আসছেন। রড ও লোহা লক্কড় চুরির টাকায় গ্রামে বাড়িও করেছেন তিনি। অনেক ধন সম্পদ গড়েছেন। এ কারণে তার নামের আগে এলাকার কিছু মানুষ রড খেকো উপাধি জুড়ে দিয়েছেন। একজন থেকে আরেকজন, এভাবে আস্তে আস্তে এলাকায় তার এ নাম ছড়িয়ে পড়েছে। মন্টু মিয়া উপজেলার ইলুহার ইউনিয়নের মলুহার গ্রামের বাসিন্দা।
মলুহার গ্রামের একাধিক বাসিন্দা জানান, গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মন্টু মিয়া ৮ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর তার ভাগ্য বদলাতে শুরু করে। আগে থাকতেন জরাজীর্ণ ছনের ছাউনির ঘরে। এখন থাকেন পাকা দালানে। অর্ধকোটি টাকার সম্পদের মালিক এখন মন্টু মিয়া। কিছু দিন আগে ১০ লাখ টাকা খরচ করে তার এক ছেলেকে সরকারি চাকরিতে ঢুকিয়েছেন মন্টু মিয়া।
স্থানীয়রা আরও জানান, জাপানের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা জাইকার অর্থায়নে ২০১৮ সালে উপজেলার বাইশারী থেকে বিশরকান্দি পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু হয়। সড়কে মন্টু মিয়ার ঘরের পাশ দিয়ে ওই সড়ক গেছে। ওই ১০ কিলোমিটারে বেশকিছু জায়গায় খাল থাকায় গার্ডার ব্রিজ ও কালভার্ট নির্মাণ করতে হয়। এর মধ্যে কয়েকটি ছিল তার ওয়ার্ডে। এতেই মন্টু মিয়ার ভাগ্য খুলে যায়। নির্মাণ কাজ চলার সময় মন্টু মিয়া রাতের আঁধারে রড চুরি করতেন। পরে ওই রড বিক্রি করে দিতেন। একাজে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দু’একজন কর্মচারী সহায়তা করতেন মন্টু মিয়াকে। এভাবে রড চুরি করে লাখ লাখ টাকার সম্পদ গড়েন মন্টু মিয়া। এলাকার অনেকেই বিষয়টি জানলেও ক্ষমতাসীন দলের লোক হওয়ায় মুখ বুজে থাকতেন। তবে এলাকার কিছু লোক পেছনে পেছনে রড খেকো মন্টু বলে ডাকতে শুরু করেন। এভাবে আস্তে আস্তে এলাকায় তার এই নাম ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়রা জানান, রড ও লোহা লক্কড় চুরির অভ্যাস মন্টু মিয়ার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায় বছরখানেক আগে ইলুহার ইউনিয়নের পবনের হাট সংলগ্ন মহিষকাটাখালী খালের ওপর আয়রন ব্রিজটি ধ্বসে পড়ে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) সরকারের গ্রামীণ অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৩ যুগ আগে ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়েছিল। সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কার না করায় ব্রিজটি ধসে পড়েছিল। পরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) উপজেলা প্রকৌশলী হুমায়ুন কবির ঘটনাস্থলে গিয়ে খালে পড়ে থাকা ব্রিজটি ইলুহার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলামকে শ্রমিক দিয়ে সরিয়ে নিয়ে পরিষদ কার্যালয় রাখতে বলেন। চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম ব্রিজ সরিয়ে নেয়ার দায়িত্ব দেন ৮ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মন্টু মিয়াকে। মন্টু মিয়া দীর্ঘদিন ধরে ওই আয়রন ব্রিজের লোহার বিমসহ নানা অংশ ওয়ার্কশপে বিক্রি করে আসছিলেন।
Advertisement
স্থানীয়রা জানান, সোমবার লোহার কয়েকটি বিম বিক্রির জন্য মন্টু মিয়া পবনের হাটের শাহীনের ওয়ার্কশপে নিয়ে যান। এলাকাবাসী জানতে পেরে ওই দোকান ঘেরাও করেন। পরে এলজিইডি উপজেলা কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা গিয়ে ওয়ার্কশপ থেকে ব্রিজের ১০/১২টি লোহার বিম ও নানা অংশ উদ্ধার করেন।
অভিযোগ প্রসঙ্গে ইলুহার ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মন্টু মিয়া বলেন, ব্রিজের বড় একটি ও ছোট ১০/১২ টি লোহার বিম শাহীনের ওয়ার্কসপে সোজা করতে নিয়ে ছিলাম। সেগুলো বাঁকা ছিল। তবে আমার বিরুদ্ধে এখন চুরির অভিযোগ আনা হচ্ছে। আমার চুরির উদ্দেশ্য ছিল না। তবে কাউকে না জানিয়ে ওয়ার্কশপে নেয়া আমার ভুল হয়েছিল।
এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী হুমায়ুন কবির জানান, সরকারি মালামাল এভাবে কেউ বিক্রি করতে পারেন না। এ ঘটনায় মন্টু মিয়ার বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ পাাঠোনো হয়েছে।
ইলুহার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম জানান, ৮ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মন্টু মিয়াকে ব্রিজের মালামাল দেখাশোনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। খাল থেকে ব্রিজের মালামাল উঠিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে রাখার কথা। কিন্তু মন্টু মিয়া কাউকে কিছু না জানিয়ে তা ওয়ার্কশপে নিয়ে গিয়ে ভুল করেছেন।
Advertisement
বানারীপাড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক জানান, বিশেষ কাজে আমাকে ঢাকায় অবস্থান করতে হচ্ছে। দুপুরে ব্রিজের মালামাল চুরির ঘটনা আমার কানে এসেছে। আমি সঙ্গে সঙ্গে ফোন দিয়ে উপজেলা প্রকৌশলী হুমায়ুন কবিরকে মামলা করতে বলেছি।
সাইফ আমীন/এমএএস/এমকেএইচ