ধর্ম

ঈসা আলাইহিস সালামের সঙ্গীরা যে দোয়া করেছিলেন

হজরত ঈসা আলাইহিস সালামের নবুয়তের শুরু থেকে ১২ জনের একটি বিশ্বস্ত দল ছিল। যারা হাওয়ারি হিসেবে পরিচিত। তারা ঈসা আলাইহিস সালামের আহ্বানে সাড়া দিয়েছিলেন। আবার দ্বীনের উপর অটল ও অবিচল থাকতে এবং আল্লাহর অনুগত বান্দা হতে তাঁরই কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেছিলেন।

Advertisement

হজরত ঈসা আলাইহিস সালামের আহ্বান ও তাদের সাড়া দেয়া এবং নিজেদের জন্য দোয়া করার বিষয়টি মহান আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে উল্লেখ করেছেন। হাওয়ারিদের কথপোকথন ও দোয়াটি মুসলিম উম্মাহর জন্য হুবহু এভাবে তুলে ধরেছেন-

فَلَمَّا أَحَسَّ عِيسَى مِنْهُمُ الْكُفْرَ قَالَ مَنْ أَنصَارِي إِلَى اللّهِ قَالَ الْحَوَارِيُّونَ نَحْنُ أَنصَارُ اللّهِ آمَنَّا بِاللّهِ وَاشْهَدْ بِأَنَّا مُسْلِمُونَ - رَبَّنَا آمَنَّا بِمَا أَنزَلَتْ وَاتَّبَعْنَا الرَّسُولَ فَاكْتُبْنَا مَعَ الشَّاهِدِينَ

অতপর ঈসা (আলাইহিস সালাম) যখন বনি ইসরাইলের কুফরি সম্পর্কে উপলব্ধি করতে পারলেন, তখন বললেন- কারা আছে আল্লাহর পথে আমাকে সাহায্য করবে? সঙ্গী-সাথীরা বলল, আমরা রয়েছি আল্লাহর পথে সাহায্যকারী। আমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছি। আর তুমি সাক্ষী থাক যে, আমরা হুকুম কবুল করে নিয়েছি।

Advertisement

হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা সে বিষয়ের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছি যা তুমি নাজিল করেছ, আমরা রাসুলের অনুগত হয়েছি। অতএব, আমাদের মান্যকারীদের দলভুক্ত করে নাও।‘ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ৫২-৫৩)

আয়াতের ব্যাখ্যামূলক অনুবাদযখন ঈসা আলাইহিস সালাম অবিশ্বাস উপলব্দি করে জানতে পারলেন তারা তাঁকে হত্যা করার অভিপ্রায় করল তখন তিনি বললেন, কে আমার সাহায্যকারী হতে প্রস্তুত, আল্লাহর পথে; যাতে আমিও তাঁর দ্বীনের সহযোগিতা করতে পারি। হাওয়ারিগণ- তাঁর শিষ্যগণ বলল, আমরাই আল্লাহর পথে সাহায্যকারী। তাঁর দ্বীনের সাহায্যকারী। এরা (হাওয়ারিরা) হলো হজরত ঈসা আলাইহিস সালামের অন্তরঙ্গ সঙ্গী।(শুরু থেকেই তারা হজরত ঈসা আলাইহিস সালামের উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছিল। এর ছিল সংখ্যায় বারো জন। এরা ছিল দেখতে নির্মল শুভ্র। কেউ কেউ বলেন, এরা ছিল পেশায় ধোপা। যারা কাপড় পরিষ্কার করতো, এ হিসেবে তাদের হাওয়ারি বলা হতো)আমরা আল্লাহর উপর ঈমান এনেছি। তাঁকে সত্য বলে বিশ্বাস করেছি। হে ঈসা! তুমি সাক্ষী থাক আমরা মুসলিম-আত্মসমার্পণকারী। আর তারা এ বলে আল্লাহর কাছে দোয়া করল-رَبَّنَا آمَنَّا بِمَا أَنزَلَتْ وَاتَّبَعْنَا الرَّسُولَ فَاكْتُبْنَا مَعَ الشَّاهِدِينَউচ্চারণ : ’রাব্বানা আমান্না বিমা আংযালতা ওয়াত্তাবানার রাসুলা ফাকতুবনা মাআশ শাহিদিন।’

হে আমাদের প্রভু! (তুমি ইঞ্জিলে) যা কিছু অবতীর্ণ করেছ তাতে আমরা বিশ্বাস স্থাপন করেছি। আর আমরা এই রাসুলের (হজরত ঈসা আলাইহিস সালাম) অনুসরণ করেছি। সুতরাং তুমি আমাদের তোমার একত্ববাদের এবং তোমার রাসুলের সত্যতার সাক্ষ্যবহনকারীদের দলভূক্ত কর।’ (তাফসিরে জালালাইন)

প্রাসঙ্গিক আলোচনাআয়াতে আল্লাহর পথে সাহায্যকারী হিসেবে উল্লেখিত হাওয়ারি করা ছিল? তাদের এ উপাধির কারণই বা কী? এ সম্পর্কে ইসলামিক স্কলার ও তাফসিরবিদদের একাধিক মত রয়েছে।

Advertisement

প্রসিদ্ধ মতে, ‘সর্বপ্রথম হজরত ঈসা আলাইহিস সালামের যে দুই জন অনুসারী হন, তাঁরা ছিলেন পেশায় ধোপা। হজরত ঈসা আলাইহিস সালাম তাদের দেখে বললেন, কী কাপড় পরিষ্কার করছ? এসো আমি তোমাদের আত্মা পরিষ্কার করা শিখিয়ে দেই। সে মুহূর্তেই তারা তাঁর অনুসারী হয়ে যান। তারপর যারাই তার অনুসরণ করেন, তাদের এ উপাধি হয়ে যায়।’ (তাফসিরে ওসমানি)আল্লামা মাজেদি তার গ্রন্থে উল্লেখ করেন, হজরত ঈসা মসিহ আলাইহিস সালামের প্রাথমিক শিষ্যগণ অধিকাংশ নদীর উপকূলবর্তী এলাকায় মৎসজীবী বাসিন্দা ছিলেন। এ জন্যই নদীর পানি তাদের কাপড়কে শুভ্র ও পরিচ্ছন্ন করে তুলত বলে তাদেরকে হাওয়ারি বলে ডাকা হতো।

এ কারণেই তাঁর পরবর্তী শিষ্য ও সঙ্গীরাও এ উপাধিতেই পরিচিত হয়ে পড়েন। হাওয়ারি-এর প্রচলিত অর্থ হলো- নিষ্ঠাবান সহযোগী, একনিষ্ঠ সঙ্গী। এ হাওয়ারিরাই হজরত ঈসা আলাইহিস সালামের আহ্বানে নিজেদের আংছারুল্লাহ বা আল্লাহর সাহায্যকারী হিসেবে সাড়া দিয়েছিলেন। (তাফসিরে মাজেদি)

হাওয়ারিদের প্রার্থনা মহান আল্লাহর কাছে অধিক পছন্দনীয় হওয়ায় তিনি তা উম্মতে মুহাম্মাদির জন্য কুরআনুল কারিমে তুলে ধরেছেন। সুতরাং আল্লাহর অনুগত বান্দা হওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে এ আবেদনের মাধ্যমে প্রার্থনা করলে তিনি তা কবুল করবেন।

আশা করা যায়, এ দোয়ার ফলে পরকালের নাজাত ও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুপারিশ নসিব লাভ করবে মুমিন মুসলমান।

এমএমএস/পিআর