দেশজুড়ে

স্ত্রীর মর্যাদা না পেয়ে ছাত্রলীগ নেতার নামে ধর্ষণ মামলা

স্ত্রীর মর্যাদা না দেয়ায় রংপুর জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মেহেদী হাসান সিদ্দিকী রনির বিরুদ্ধে মামলা করেছেন স্কুল শিক্ষিকা। এ ঘটনায় ধর্ষণসহ বিভিন্ন অভিযোগে ওই স্কুল শিক্ষিকা রনিসহ আরও চারজনের নামে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি থানায় মামলা করেছেন।

Advertisement

এদিকে মামালা প্রত্যাহারের দাবিতে থানায় গিয়ে বিক্ষোভ করেছেন রনির সমর্থকরা। এমনকি ওই শিক্ষিকাকে থানার ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখা হলে সেখানে গিয়েও জেলা আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেত্রী তাকে মামলা প্রত্যাহারে চাপ সৃষ্টি ও শাসিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

মামলা সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী রংপুরে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। ২০১৭ সালে রংপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান সিদ্দিকী রনির সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এরপর তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরইমধ্যে রনি তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করলে তিনি বিয়ের প্রস্তাব দেন। পরে ২০১৯ সালের ১৮ এপ্রিল বিয়ের কথা বলে তাকে নীলফামারীতে নিয়ে যান রনি। সেখানে নীলফামারী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সজল কুমারের বাসায় নিয়ে গিয়ে ভুয়া কাজী এনে তাকে বিয়ে করেন।

এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ওই স্কুল শিক্ষিকাকে স্ত্রীর মর্যাদা দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন সময় রনি তার কাছ থেকে ১৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। গত ৫ জুন রনি নগরীর কেরানীপাড়ায় তার ভাড়াবাসায় যান এবং সেখানে তার সঙ্গে রাত্রীযাপন করেন। এ সময় স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে তাকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য চাপ দিলে রনি তাকে জানান, সামনে রংপুর জেলা যুবলীগের কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে হলে টাকার প্রয়োজন। এজন্য রনি তার কাছ থেকে আরও ২০ লাখ টাকা দাবি করেন। ওই টাকা দিতে অস্বীকার করলে রনি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার হুমকি দেন।

Advertisement

এ সময় বিয়ে হয়েছে এবং স্ত্রীর অধিকার দাবি করলে রনি জানান, ভুয়া কাবিননামা দিয়ে বিয়ে করা হয়েছে এবং ওই কাবিননামা ও কাজীকে কোনোদিন খুঁজে পাওয়া যাবে না। পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে গত ১২ জুলাই রনির ফুপুর বাসা নগরীর গণেশপুর ক্লাবমোড়ের বাড়িতে গিয়ে অবস্থান করলে রনি অপর আসামিদের সহযোগিতায় তাকে ওই বাসা থেকে বের করে সেনপাড়ার একটি মোটরসাইকেল শোরুমে নিয়ে যান। সেখানে আপোষনামায় স্বাক্ষরের জন্য মারধর করে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নেন। পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে মিমাংসায় ব্যর্থ হওয়ায় থানায় মামলা দায়ের করা হয় বলে এজাহারে উল্লেখ করেন ওই শিক্ষিকা। গত শনিবার (৫ সেপ্টম্বর) বিকেলে মামলাটি রেকর্ড করা হয়।

অভিযুক্ত রনির বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাজিতপুর ফতেহপুর গ্রামে। তার বাবার নাম আবু বক্কর।

এদিকে রনির বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়ের হলে তার সমর্থকরা রোববার দুই দফা থানায় গিয়ে মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ করেন। দু’বারই এক-দেড়ঘণ্টা অবস্থান করে চলে যান তারা। তবে গতকাল সোমবার থানায় তাদের কোনো তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি।

অন্যদিকে সোমবার দুপুরে থানার ভেতরে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে প্রবেশ করে জেলা আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেত্রী ওই শিক্ষিকাকে মামলা প্রত্যাহারে চাপ দেন। এ সময় তাকে হুমকি ও দেখে নেয়ার কথা বলে শাসিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় স্কুল শিক্ষিকা জ্ঞান হারিয়ে পড়ে গেলে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায় পুলিশ।

Advertisement

বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার (৮ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় রংপুর জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মেহেদী হাসান সিদ্দিকী রনির মুঠোফোনে কল দিলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

রংপুর মেট্রোপলিটান পুলিশের কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রশিদ মামলা দায়েরের বিষিয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।

জিতু কবীর/এফএ/পিআর