রাজনীতি

করোনা পরীক্ষা কমিয়ে দিয়েছে সরকার : ফখরুল

‘সরকার কোভিড (করোনাভাইরাস) পরীক্ষা কমিয়ে দিয়েছে’ বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

Advertisement

সোমবার (৭ সেপ্টেম্বর) গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকার নির্দেশ দিয়ে কোভিড টেস্টিং কমিয়ে দিয়েছে। এখন টেস্ট বন্ধ। দিনাজপুর থেকে বলছে যে, আপাতত বন্ধ রাখ। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কোন জায়গায় চলে গেছে। আজকে লক্ষ্য করে দেখেন, প্রতিদিনের ব্রিফিং বাদ দিয়েছে। কারণ আর কত মিথ্যা কথা বলবে। এখন একটা প্রেস রিলিজ দিয়ে দেয় অনলাইনে। সংক্রমণ তথ্য লুকিয়ে লাভ কী? সরকারের ব্যর্থতার কারণে, তাদের উদাসীনতার কারণে কোভিড ছড়িয়ে গেছে। এই অবস্থা হলে সরকারের প্রয়োজনটা কী?’

এই অবস্থা থেকে উত্তরণে গণতান্ত্রিক ও জবাবদিহিতামূলক সরকার প্রতিষ্ঠায় জনগণকে ‘ঘুরে দাঁড়ানো’ উচিৎ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মানুষের এখন এই সরকারের কাছে জবাব চাওয়া উচিৎ। সরকারকে বলা উচিৎ- এনাফ ইজ এনাফ। দয়া করে বাংলাদেশের মানুষকে ক্ষমা দাও, তোমরা চলে যাও এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করার ব্যবস্থা কর।’

Advertisement

‘সিনহা হত্যা বিগ রুটেড’ উল্লেখ করে বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘মেজর অবসরপ্রাপ্ত সিনহার হত্যার বিষয়টা অত্যন্ত বিগ রুটেড। এখানে অনেকগুলো বিষয় সামনে চলে এসেছে। একটা হচ্ছে- স্পষ্টে এক্সট্টা জুডিশিয়াল কিলিং। পুলিশকে এই অথরিটি কে দিয়েছে? এখন পর্যন্ত আমাদের জানা নেই যে, পুলিশ মুহূর্তের মধ্যে কাউকে গুলি করে হত্যা করতে পারে। দুই নম্বর হচ্ছে যে, হত্যার ইম্যুনিটি (দায়মুক্তি) দেয়া হয়েছে কি না। আমরা জানি না, এই ধরনের দায়মুক্তি পুলিশের আছে কি না কাউকে গুলিকে হত্যা করতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যমে আপনারাই তুলে ধরেছেন যে, গত কয়েকবছরে পুলিশ কাস্টডিতে, বিচারবহির্ভূত হত্যা কতগুন বেড়েছে এবং কীভাবে বেড়েছে। একইসঙ্গে গুম হয়েছে কতজন? এই বিষয়গুলো শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা বিশ্বের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ জন্য যে, জাতিসংঘের সনদে এগুলো হচ্ছে মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং এই অপরাধের সঙ্গে যারা জড়িত যেমন সার্বিয়া, মিয়ানমারসহ বিভিন্ন দেশে তাদের অনেকেরই কিন্তু বিচার হচ্ছে।’

ফখরুল বলেন, ‘মেজর সিনহার এই ঘটনা চোখ খুলে দিয়েছে, বিষয়টাকে একেবারে সামনে নিয়ে এসেছে। কিন্তু বহু আগে থেকে ২০০৮ সালে এই আওয়ামী লীগ সরকার আসার পর থেকে কিন্তু এসব ঘটনা ঘটছে। অত্যন্ত বেশি ঘটেছে ২০১৩, ২০১৪, ২০১৫ তে। সেগুলো সবই ছিল রাজনৈতিক। এসব নিয়ে কিন্তু সেভাবে সারফেসে আসেনি। আমরা অনেক কথা বলেছি, মানববন্ধন করেছি, ভিকটিম ফ্যামিলিগুলোকে নিয়ে গণমাধ্যমের সামনে, জাতির সামনে আনার চেষ্টা করেছি। আমাদের ভিকটিমরা জাতিসংঘের সদর দফতর জেনেভায় পর্যন্ত গেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার রিপোর্টে প্রত্যেকবছরই এই বিষয়গুলো এসেছে, ইউএন হিউম্যান রাইটস কমিশন, অ্যামিনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, ডেমোক্রেসি ওয়াচ এবং বৃটিশ পার্লামেন্টেও এই বিষয়গুলো উত্থাপিত হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের সরকার সবসময় এগুলোকে এড়িয়ে গেছে। যার ফলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংস্থাগুলো এমন একটা ক্ষমতাশালী, রাষ্ট্রের মধ্যে তারা একটা রাষ্ট্র। যার ফলে যারা পলিটিক্যাল গভর্নমেন্ট দাবি করে তাদেরকে তারা তোয়াক্কা করে না এবং তারা তাদের মতো করে কাজ করতে থাকে।’

Advertisement

সিনহা হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ধামাচাপা দেয়া হচ্ছে অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘দেখুন এই সিনহার বিষয়টাকে কিভাবে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে এবং এখনও হচ্ছে। বলা হচ্ছে যে, এটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। কোনোভাবে এটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। আমরা যে রিপোর্ট পড়লাম গণমাধ্যমের মাধ্যমে সেই রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, প্রায় ২০০ লোক কিলিং হয়েছে কক্সবাজারে, সেগুলো বিচারবহির্ভূত হত্যা।’

তিনি বলেন, ‘এরপর দেখা গেলো যে, পুলিশ অফিসার যারা অভিযুক্ত তাদের যে সম্পদের বিবরণ আমরা পেলাম কোটি কোটি টাকার সম্পদ, বিভিন্ন জায়গায় সম্পদ। এর থেকে প্রমাণিত হয়, পুলিশের এই এজেন্সিরা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংস্থারা তারা সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। এই সমস্যা বিএনপির সমস্যা নয়, গোটা জাতির সমস্যা। যখন একটা ছেলেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় এবং তার হদিস পাওয়া যায় না সেটা শুধু আওয়ামী লীগ-বিএনপি বলে নয়, যেকোনো মানুষের জন্য নিরাপত্তার বিষয়, তার পরিবারের ভবিষ্যতের বিষয়।’

অবিলম্বে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও যারা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার দাবিও উল্লেখ করেন ফখরুল।

দিনাজপুরের ইউএনওর ওপর হামলার প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে ইউএনওকে রাতে তাকে হত্যার জন্য এভাবে আহত করা হলো। তিনি এখন জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন। আর দেখা গেল- অল অন এ সাডেন র্যাব একটা প্রেস কনফারেন্স করে বলে দিল যে, চুরির জন্য এই আক্রমণ করা হয়েছে। যেটা আমরা মনে করি যে, একেবারেই দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সার্বিক প্রতিচ্ছবি। দুইটি দিক থেকে। একটা হচ্ছে ল-লেসনেস। বাড়িতে ঢুকে যে কাউকে মেরে দেয়া যায়, কাউকে আঘাত করা যায়। আরেকটা হচ্ছে যে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংস্থাগুলোকে কারও কাছে জবাবদিহি করতে হয় না বলেই চট করে একটা সংবাদ সম্মেলন করে বলে দেয় যে, চুরির জন্য ঘটনা ঘটছে। গোটা বিষয়টা ডাইভার্ট হয়ে গেল।’

তিনি বলেন, ‘আমরা পরে কী দেখতে পারছি? দেখতে পারছি বলা হচ্ছে যে, সরকারি জমি জোর করে দখল করছে অথবা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিচ্ছে সরকারি দলের লোকেরা, এই উপজেলা কর্মকর্তা তিনি বাধা দিয়েছেন বা দেননি যে কারণে তার ওপরে এই আক্রমণ হয়েছে। এই অভিযোগ অনেক এসেছে এবং সরকারি দলের লোকজনকে গ্রেফতার করে ছেড়ে দেয়া হয়েছে- যেটা খুবই বিপদজনক। আজকে এ দেশে আসলেই কোনো সরকার নেই। যে সরকার আছে তারা একমাত্র নিজেদের দলীয়করণ করা, নিজেদের বিত্ত তৈরি করা ছাড়া অন্য কোনো আগ্রহ নেই। তদন্ত এখন আর নিরপেক্ষ থাকছে না। যেকারণে আমরা বলি যে, এই ঘটনার নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞদের দ্বারা তদন্ত হওয়া উচিৎ যাতে করে সঠিক চিত্র বেরিয়ে আসে, প্রকৃত দায়ী ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া যায়।’

কেএইচ/এফআর/এমএস