ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে মাস্টার্স করেছেন তানভীর আহমেদ। যেখানে লেখাপড়া করা বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরই স্বপ্ন থাকে বিসিএস ক্যাডার অথবা প্রথম শ্রেণির কোন সরকারি কর্মকর্তা হবেন। কিন্তু প্রচলিত ধারায় গা ভাসাননি তিনি। চাকরি বা গড়পড়তা ব্যবসার পেছনে না ছুটে গড়ে তুলেছেন ব্যতিক্রমী এক ফুলের নার্সারি। তার নার্সারিতে রয়েছে বিদেশি শতাধিক প্রজাতির পদ্ম ও শাপলা ফুল। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন দুর্লভ গাছের সংগ্রহশালাও গড়ে তুলেছেন তানভীর।
Advertisement
মানিকগঞ্জ জেলা সদর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরের একটি প্রত্যন্ত গ্রাম সুলতানপুর। গ্রামটি হরিরামপুর উপজেলায় অবস্থিত। তরুণ উদ্যোক্তা তানভীর মাহমুদের গ্রামের বাড়ি এই সুলতানপুরে। এখানেই তানভীর নিজেদের ২৪ শতাংশ জমির ওপর গড়ে তুলেছেন তার জলজ নার্সারি। নার্সারিতে ঢুকেই নানা প্রজাতির শাপলা আর পদ্মফুল দেখে যে কারো চোখ জুড়িয়ে যাবে। শাপলা আর পদ্মফুল যে বাহারি রঙের হতে পারে তা না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন।
আমেরিকা, চীন, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম ও ভারতসহ বিশ্বের ২৫টি দেশের ৫ শতাধিক পদ্ম, জলজ ফুল ও ফল গাছ রয়েছে এই নার্সারিতে। বন্ধু-বান্ধব ও পরিচিতজনদের মাধ্যমে বিদেশ থেকে এই চারা এবং বীজ সংগ্রহ করেছেন তানভীর।
তার বাগানে আছে এঞ্জেল ট্রাম্পেট, গ্লিরিসিডিয়া, কানাইডিঙ্গা, ক্যানাঙ্গা, বিভিন্ন রঙের দোলনচাঁপা, ডম্বিয়া, স্থল পদ্ম, জল গোলাপ, নীলমনি, শ্বেতমনি, গোলাপি সহস্র বেলি, পার্সিয়ান জুঁই, সরস্বতী চাঁপা, ব্ল্যাক প্রিন্সেস, আফ্রিকান বাওবাব, হলুদ শিমুল, রাজ আশোকসহ ৫০০ প্রজাতির দুর্লভ গাছ।
Advertisement
এসব দেখতে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন অনেক দর্শনার্থী। তানভীর তার অনলাইন গ্রুপের মাধ্যমে সারাদেশে এই ফুল ও গাছ বিক্রি করে থাকেন। মাত্র দুই বছরে বাণিজ্যিকভাবেও সফলতা পেয়েছেন তিনি।
প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া শেষ করে ফুলের নার্সারি করার বিষয়ে উদ্যোক্তা তানভীর আহমেদ বলেন, ‘মা ফুল অনেক ভালোবাসতেন। বাড়িতে অনেক ফুলের গাছ ছিল। ছোটবেলা থেকেই আমি ফুল ও গাছ অনেক ভালোবাসি। বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার সময়ও ক্যাম্পাসে অনেক ফুলের গাছ দেখেছি। অবসর সময় নতুন নতুন গাছ চিনতাম। বিভিন্ন উদ্যানে যেতাম। প্রথমে ফুল বাগান শখের বশেই শুরু করি। পরবর্তীতে ভাবলাম বাণিজ্যিকভাবে শুরু করবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘লেখাপড়া চলাকালেই দেখেছি পরিচিত জন এবং বন্ধু-বান্ধব চাকরির পেছনে অনেক সময় দিচ্ছেন। আবার অনেকে চাকরি পাওয়ার পরও ব্যক্তিগত জীবনে হ্যাপি না। কারণ চাকরির আলাদা একটা প্রেসার থাকে। ওই প্রেসারটা সবাই নিতে পারে না। তবে আমার শুরু থেকেই চিন্তা ছিল নিজে কিছু করবো। এই তাগিদ থেকেই ফুল বাগান করা। এতে আমি অপরিসীম আনন্দ পাই।’
তানভীর শুধু ফুল বাগান করেই থেমে থাকেননি। পরাগায়ণের মাধ্যমে পদ্ম ও শাপলা ফুলের নানা প্রজাতিও উদ্ভাবন করছেন তিনি।
Advertisement
হরিরামপুর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা দিলীপ কুমার মন্ডল জানান, তানভীরের ফুলের নার্সারি এলাকায় ব্যতিক্রম। জেলার কোথাও এমন নার্সারি নেই। তানভীর আহমেদ এলাকায় এখন অনুকরণীয় হয়ে উঠেছেন। তাকে দেখে ভিন্নরকম কাজে উদ্বুদ্ধও হচ্ছে অনেক তরুণ। কৃষি বিভাগও তার পাশে থেকে তানভীরকে নানাভাবে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান এ কর্মকর্তা।
বি.এম খোরশেদ/মিজান/এসইউ/এএ/পিআর