দেশজুড়ে

চোর সন্দেহে দুই কিশোরকে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন

মোবাইল চোর সন্দেহে দুই কিশোরকে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে পেটানোর ঘটনা ঘটেছে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চর ভবানিপুর এলাকায়। গত বৃহস্পতিবারের স্থানীয় প্রভাবশালী গোলাম মোস্তফার নেতৃত্বে চলে এ নির্যাতন।

Advertisement

জানা যায়, গত বুধবার গোলাম মোস্তফার মেয়ের মোবাইল চুরি হয়। চোর সন্দেহে পরদিন ভোরে ধরে আনা হয় পার্শ্ববর্তী চর গোবিন্দপুর গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে রাকিব (১২) ও একই গ্রামের জাহির মিয়ার ছেলে ফয়সালকে (১৭)। এরপর তাদের বেঁধে চালানো হয় নির্যাতন।

নির্যাতনের সময় স্থানীয় অনেকে উপস্থিত থাকলেও প্রতিবাদ করেননি কেউ। পরে চুরির অভিযোগে কিশোর ফয়সালকে পুলিশের হাতে তুলে দেয় নির্যাতনকারীরা এবং রাকিবকে ছেড়ে দেয়।

পুলিশ বৃহস্পতিবার কিশোর ফয়সালকে চুরি মামলায় আদালতে পাঠিয়েছে। ঘটনার দুদিন পর কিশোরদের মারধরের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শনিবার গভীর রাতে নির্যাতনকারী দুজনকে আটক করেছে কোতোয়ালি থানা পুলিশ।

Advertisement

আটকরা হলেন- চর ভবানীপুর এলাকার গোলাম মোস্তফা (৪৫) ও সফির উদ্দিন (৫০)।

কোতোয়ালি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফিরোজ তালুকদার বলেন, বৃহস্পতিবার ৯৯৯ এ কল করে জানানো হয় চোর আটক করা হয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে কিশোর ফয়সালকে থানায় এনে মামলা দিয়ে আদালতে পাঠানো হয়।

তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় দুই কিশোর ফয়সাল ও রাকিবকে রশি দিয়ে বেঁধে পেটানোর বিষয়টি জানতাম না। পরে বিষয়টি শুনে রোববার (৬ সেপ্টেম্বর) গভীর রাতে মোস্তফা ও সফির উদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়।

এ বিষয়ে মামলা নেয়ার জন্য ফয়সাল ও রাকিবের অভিভাবককে থানায় আনা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। ফয়সালের বিরুদ্ধে আগেও চুরির অভিযোগে থানায় মামলা রয়েছে বলেও জানান তিনি।

Advertisement

এ বিষয়ে ফয়সালের মা ফাতেমা বেগম বলেন, আমার ছেলে চুরি করেনি। তারপরও আমার ছেলেকে রশি দিয়ে বেঁধে বাঁশ দিয়ে পিটিয়েছে। তিনি তার ছেলেকে মারধরের বিচার চেয়েছেন।

নির্যাতিত কিশোর ফয়সালের দাদি কমলা খাতুন বলেন, চোখের সামনে আমার নাতিকে মারধর করেছে। আমি তাদের পায়ে ধরেছি তবুও তারা মানেনি। আমার নাতি কোনো অপরাধ করলে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়ার কথা বলেছি। মানুষকে এমনভাবে কেউ মারে না। কষ্টে আমার বুকটা ফেটে গেছে, আমি অজ্ঞান হয়ে গেছি।

মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম চুন্নু বলেন, কোনো ব্যক্তি যদি ফৌজদারি অপরাধ করে তবে দেশে প্রচলিত আইনে তার বিচার হবে। কেউ যদি আইন নিজের হাতে তুলে নেয় তবে সেটিও অপরাধ। চুরির অপবাদে কিশোর নির্যাতন সেটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। নিশ্চই নির্যাতনকারীদের বিচার হবে।

এমএএস/এমএস