মতামত

শুভবুদ্ধির উদয় হোক

আগে লেখকদের হত্যা করা হয়েছে। এখন আঘাত আসছে প্রকাশকদের ওপর। একের পর এক ব্লগারদের  (ব্লগে যারা লেখালেখি করেন)  হত্যা করা হলেও খুনিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এখন প্রকাশ্য দিবালোকে ঘরে ঢুকে হত্যা করে নির্বিঘ্নে পালিয়ে যাচ্ছে। সর্বশেষ শনিবার তারা হত্যা করেছে অভিজিতের বইয়ের প্রকাশক জাগৃতি প্রকাশনীর কর্ণধার ফয়সল আরেফিন দীপনকে। একইদিন লালমাটিয়ায় হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করা হয় শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর মালিক আহমেদুর রশীদ চৌধুরী টুটুল, লেখক রণদীপম ও তারেক রহিমের ওপর। অল্পের জন্য তারা প্রাণে বেঁচে গেলেও মারাত্মক আহত অবস্থায় চিকিৎসা নিচ্ছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এরমধ্যে তারেক রহিমের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণেই এ ধরনের  হত্যাকাণ্ড থামানো যাচ্ছে না বলে বিশ্লেষকরা বলছেন। এ নিয়ে ব্লেমগেমও বিচারের জন্য অন্তরায়। কিন্তু দিনের পর দিন এ অবস্থা চলতে পারে না। অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারলে যে এর পুনরাবৃত্তি ঘটতেই থাকবে সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না।গত দুই বছরে দেশে পাঁচজন মুক্তমনা ব্লগার এবং একজন প্রকাশককে হত্যা করা হয়েছে। গত আট মাসের মধ্যেই নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন পাঁচজন।  মূলত ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী ও ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দারকে খুনের মাধ্যমে শুরু হয় ধারাবাহিক ব্লগার হত্যাযজ্ঞ। একই ধারাবাহিকতায় ফেব্রুয়ারিতে বইমেলা থেকে ফেরার পথে টিএসসির কাছে নৃশংসভাবে খুন করা হয় মার্কিন প্রবাসী বাংলাদেশি ও মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ রায়কে। এর এক মাসের মাথায় খুন হন ওয়াশিকুর রহমান। এ ঘটনার দুই মাস পরই মার্চে সিলেটে খুন হন অনন্ত বিজয় দাস নামে আরেক ব্লগার। আগস্টে হত্যা করা হয় নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়কে। ব্লগারদের পর সবর্শেষ আঘাত আসলো প্রকাশকদের ওপর। একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রে মুক্তমনা লেখক ও প্রকাশকদের ওপর এ ধরনের আঘাত কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। এ অবস্থা গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের পথে এক বিরাট বাধা। মানুষের মধ্যে চরম নিরাপত্তাহীনতার বোধ তৈরি করে এসব ঘটনা। ফলে একটি রাষ্ট্র বা সমাজ তার স্বাভাবিক গতি-প্রকৃতি হারায়। হয়ে পড়ে দিকভ্রান্তহীন। অপরাধীরা পার পেয়ে যায় বলেই আরও  অপরাধ করতে উৎসাহিত হয়। হত্যার পর মামলা হয়। নিয়মমাফিক তদন্তও চলে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হত্যার কোনো কিনারা হয় না। এ কারণে বিচার চাওয়ার প্রতিও আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন ভুক্তভোগীরা। সরকারের পক্ষ থেকে হত্যার বিচারের ব্যাপারে আশ্বাস দেওয়া হয়। কিন্তু একটা পর্যায়ে গিয়ে তদন্ত আর এগোয় না। কিংবা তদন্তের গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে কেউ কিছু জানতে পারে না। চরমপন্থার উত্থান ঠেকাতে হলে আইন-আদালতের প্রথাগত শাস্তির বাইরেও বিষয়টির গভীরে প্রবেশ করতে হবে। সমাজে বা রাষ্ট্রে কেন, কোন পরিস্থিতি চরমপন্থার উত্থান ঘটছে এবং তারা অবাধে তাদের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে পারছে সে বিষয়গুলোও ভাবতে হবে। পারস্পরিক দোষারোপে ঘটনার রাজনীতিকরণ যতোটা সহজ হয় ততটাই কঠিন হয়ে যায় অপরাধীদের শনাক্ত করা। তাই এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য শুভবুদ্ধির উদয় হওয়া অত্যন্ত জরুরি। পুত্রহারা পিতা তার সন্তানকে হারিয়ে এ সংক্রান্ত যে অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন তার যথার্থতা খুঁজে দেখতে হবে। এইচআর/এমএস

Advertisement