চিত্রনায়ক চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার (ইমন) ওরফে সালমান শাহের ২৪তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ (৬ সেপ্টেম্বর)। ১৯৯৬ সালের এইদিনে সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে যান ক্ষণজন্মা এই চিত্রনায়ক। তবে দুই যুগেও উদঘাটিত হয়নি তার মৃত্যুর রহস্য।
Advertisement
সালমান শাহ ‘আত্মহত্যা’ করেছেন বলে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই)। পিবিআইয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে সালমান শাহের আত্মহত্যার পাঁচটি কারণ উল্লেখ করা হয়। তবে পিবিআইয়ের এই প্রতিবেদন মানতে নারাজ সালমান শাহের মা নীলা চৌধুরী। প্রতিবেদনের ওপর নারাজি দেবেন বলে সময়ের আবেদন করেন সালমান শাহের মায়ের আইনজীবী। সালমান শাহ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) দেয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনটি গ্রহণ ও নারাজি দেয়ার বিষয়ে শুনানির জন্য ১১ অক্টোবর দিন ধার্য করেছেন আদালত।
সোমবার (৩১ আগস্ট) ঢাকা মহানগর হাকিম মোর্শেদ আল মামুন ভূঁইয়ার আদালতে মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদনটি গ্রহণের জন্য দিন ধার্য ছিল। মামলার বাদী প্রতিবেদনের ওপর নারাজি দেবেন বলে সময়ের আবেদন করেন আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ। আদালত সময়ের আবেদন মঞ্জুর করে নতুন এ দিন ধার্য করেন।
আবেদনে উল্লেখ করা হয়, মামলার বাদী সালমান শাহের মা লন্ডনে অবস্থান করছেন। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে তিনি দেশে আসতে পারছেন না। তাই নারাজি দেয়ার জন্য সময়ের আবেদন মঞ্জুর করা হোক।
Advertisement
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মহানগর হাকিম শাহিনুর রহমান প্রতিবেদন ‘দেখিলাম’ বলে স্বাক্ষর করেন। ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে ৬০০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনটি জমা দেন পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম। ২৪ ফেব্রুয়ারি আলোচিত এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন তুলে ধরেন পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার।
পিবিআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলা চলচ্চিত্রের তুমুল জনপ্রিয় অভিনেতা সালমান শাহ হত্যাকাণ্ডের শিকার হননি, তিনি পারিবারিক কলহের জেরে আত্মহত্যা করেছিলেন।
প্রতিবেদন তুলে ধরে পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বলেন, ‘পিবিআইয়ের তদন্তকালে ঘটনার সময় উপস্থিত ও ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ৪৪ সাক্ষীর জবানবন্দি ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬১ ধারায় লিপিবদ্ধ করা হয়। ১০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় লিপিবদ্ধ করা হয়। পাশাপাশি ঘটনা সংশ্লিষ্ট আলামত জব্দ করা হয়। এসব বিষয় পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, চিত্রনায়ক সালমান শাহ পারিবারিক কলহের জেরে আত্মহত্যা করেছেন। হত্যার অভিযোগের কোনো প্রমাণ মেলেনি।’
পিবিআইয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে সালমান শাহের আত্মহত্যার পাঁচটি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। সেগুলো হলো-চিত্রনায়িকা শাবনূরের সঙ্গে সালমানের অতিরিক্ত অন্তরঙ্গতা, স্ত্রী সামিরার সঙ্গে দাম্পত্য কলহ, মাত্রাধিক আবেগপ্রবণতার কারণে একাধিকবার আত্মঘাতী হওয়ার বা আত্মহত্যার চেষ্টা, মায়ের প্রতি অসীম ভালোবাসা জটিল সম্পর্কের বেড়াজালে পড়ে পুঞ্জীভূত অভিমানে রূপ নেয়া এবং সন্তান না হওয়ায় দাম্পত্য জীবনে অপূর্ণতা।
Advertisement
চলচ্চিত্রে জনপ্রিয়তার সর্বোচ্চ শিখরে থাকাকালে ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মারা যান চিত্রনায়ক চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার (ইমন) ওরফে সালমান শাহ। নিজ ঘরে তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনায় তখন অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেন তার বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী (প্রয়াত)। পরে ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ করে মামলাটিকে হত্যা মামলায় রূপান্তরিত করার আবেদন জানান তিনি। অপমৃত্যু মামলার সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগের বিষয়টি একসঙ্গে তদন্ত করতে অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) নির্দেশ দেন আদালত।
১৯৯৭ সালের ৩ নভেম্বর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় সিআইডি। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে সালমান শাহের মৃত্যুকে ‘আত্মহত্যা’ বলে উল্লেখ করা হয়। ২৫ নভেম্বর ঢাকার সিএমএম আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন গৃহীত হয়। সিআইডির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে তার বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী রিভিশন মামলা দায়ের করেন।
২০০৩ সালের ১৯ মে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে পাঠান আদালত। এরপর প্রায় ১৫ বছর মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে ছিল। ২০১৪ সালের ৩ আগস্ট ঢাকার সিএমএম আদালতের বিচারক বিকাশ কুমার সাহার কাছে বিচার বিভাগীয় তদন্তের প্রতিবেদন দাখিল করেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইমদাদুল হক। এ প্রতিবেদনে সালমান শাহের মৃত্যুকে ‘অপমৃত্যু’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
২০১৪ সালের ২১ ডিসেম্বর সালমান শাহের মা নীলা চৌধুরী ছেলের মৃত্যুতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান এবং ওই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি দেবেন বলে আবেদন করেন। ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি নীলা চৌধুরী ঢাকা মহানগর হাকিম জাহাঙ্গীর হোসেনের আদালতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে নারাজির আবেদন দাখিল করেন। নারাজি আবেদনে উল্লেখ করা হয়, আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ ১১ জন তার ছেলে সালমান শাহের হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকতে পারেন।
মামলাটি এরপর তদন্ত করে র্যাব। তবে র্যাবের দ্বারা তদন্তের আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ গত বছরের ১৯ এপ্রিল মহানগর দায়রা জজ আদালতে একটি রিভিশন মামলা করে। ২০১৬ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বিশেষ জজ-৬-এর বিচারক ইমরুল কায়েশ রাষ্ট্রপক্ষের রিভিশনটি মঞ্জুর করেন এবং র্যাবকে মামলাটি আর তদন্ত না করার আদেশ দেন। তখন থেকে মামলাটি তদন্তের দায়িত্বে আছে পিবিআই।
জেএ/এসআর/পিআর