দেশজুড়ে

ইউএনও ওয়াহিদার বাবার কোমর থেকে পা পর্যন্ত প্যারালাইজড

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানমের বাবা ওমর আলী শেখের (৬৫) কোমরের নিচের অংশ পুরোটাই অবশ হয়ে গেছে। কথা বলতে ও খেতে পারলেও চলাচল করতে পারছেন না তিনি।

Advertisement

আপাতত অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন না হলেও পুরোপুরি সেরে উঠতে তার দীর্ঘ সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। শনিবার (০৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও ওমর আলীর ছেলে শেখ ফরিদ উদ্দীনের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে ওমর আলীকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি ওয়ার্ড থেকে তিনতলার ভিআইপি কেবিনে নেয়া হয়।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. তোফায়েল হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ওমর আলী শেখের আগে থেকে ডায়াবেটিস ছিল। ঘটনার রাতে তিনি ঘাড়ে আঘাত পান। এতে স্পাইনাল কর্ডে গুরুতর আঘাত লাগে তার। সাধারণত এ ধরনের জটিলতায় চার হাত-পা অবশ হয়ে যায়। এক্ষেত্রে তার দুই হাত কিছুটা সচল থাকলেও নাভির নিচ থেকে পুরো নিচের অংশ অবশ হয়ে গেছে।

ডা. তোফায়েল হোসেন ভূঁইয়া আরও বলেন, সাধারণত এ ধরনের সমস্যা সেরে উঠতে দুই থেকে তিন মাস পর্যন্ত সময় লাগে। আপাতত তার অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন না হলেও দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা প্রয়োজন। একটি চিকিৎসক দলের মাধ্যমে তার চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজনে তার স্বজনরা ঢাকায় নিয়ে যেতে চাইলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান ডা. তোফায়েল হোসেন ভূঁইয়া।

Advertisement

ওমর আলী শেখের ছেলে শেখ ফরিদ উদ্দিন বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে হাসপাতালে ভর্তির পর থেকে আমার বাবার এ সমস্যা দেখা দেয়। বিষয়টি রংপুর জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে। আপাতত ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। এখানকার পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট ঢাকায় পাঠানো হবে। সেখানকার চিকৎসকরা রিপোর্ট দেখে ঢাকায় নিয়ে যেতে বললে তারপর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

এ বিষয়ে রংপুরের জেলা প্রশাসক আসিব আহসান বলেন, ওমর আলী শেখের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত এবং রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক এবং রোগীর স্বজনরা যদি ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার জন্য বলেন তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

গত বুধবার দিবাগত রাত ৩টা-সাড়ে ৩টার দিকে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানম ও তার বাবা ওমর আলীকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে দুর্বৃত্তরা

পরদিন সকালে আহত বাবা-মেয়েকে প্রথমে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে ইউএনও ওয়াহিদাকে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারে ঢাকায় আনা হয়। তিনি এখন ঢাকার আগারগাঁওয়ে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ হামলার ঘটনায় ইউএনও ওয়াহিদার ভাই শেখ ফরিদ বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার রাতে ঘোড়াঘাট থানায় মামলা করেন।

Advertisement

শুক্রবার দিনভর অভিযান চালিয়ে এ ঘটনায় ছয়জনকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তারা হলেন- ঘোড়াঘাট উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক (বহিষ্কৃত) জাহাঙ্গীর আলম (৪২), উপজেলা যুবলীগের সদস্য (বহিষ্কৃত) আসাদুল হক (৩৫), শিংড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি দক্ষিণ দেবীপুর গ্রামের গোলাম মোস্তফা আদুর ছেলে মাসুদ রানা (৪০), নৈশপ্রহরী নাহিদ হোসেন পলাশ (৩৮), চকবামুনিয়া বিশ্বনাথপুর এলাকার মৃত ফারাজ উদ্দিনের ছেলে রংমিস্ত্রি নবিরুল ইসলাম (৩৫) ও একই এলাকার খোকার ছেলে সান্টু চন্দ্র দাস(২৮)। পরে আসাদুল হক, নবিরুল ইসলাম ও সান্টু চন্দ্র দাস র‍্যাবের কাছে ইউএনওর ওপর হামলার দায় স্বাকীর করেন।

র‍্যাব জানায়, প্রাথমিক স্বীকারোক্তিতে তারা চুরির উদ্দেশ্যে ইউএনও ওয়াহিদা খানমের বাসায় যান বলে জানিয়েছেন। এদের মধ্যে নবিরুল ইউএনও ওয়াহিদা খানমের মাথায় আঘাত করেন। আসামিদের বিরুদ্ধে মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধে মামলা রয়েছে।

জিতু কবীর/এএম/এমকেএইচ