বাংলা ভাষার সিনেমায় তিনি উজ্জ্বল এক নক্ষত্রের নাম। পশ্চিমবঙ্গের ইন্ডাস্ট্রিতে তাকে ডাকা হয় মহানায়ক নামে। পর্দা এবং পর্দার বাইরে, সবখানেই তিনি ছিলেন আদর্শ এক পুরুষের প্রতিচ্ছবি। তার অভিনয় যেমন প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে রেখেছে মাদকতা তেমনি তার ব্যক্তিত্ব আজও অনুকরণীয়।
Advertisement
আজ ৩ সেপ্টেম্বর বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি মহানায়ক উত্তমকুমারের ৯৪তম জন্মদিন। দিনটি পালিত হচ্ছে কলকাতাসহ গোটা পশ্চিমবঙ্গে।
মহানায়ক উত্তমকুমারের স্মৃতিবাহী স্টুডিও নিউ থিয়েটার্স ওয়ানের মহানায়কের স্মৃতিকক্ষে বা ব্যক্তিগত সাজসজ্জার ঘরে তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এখানে রয়েছে মহানায়কের ব্যক্তিগত মেকআপ রুম। সেটি আজ সংরক্ষিত। এখানে রয়েছে মহানায়কের ব্যবহার করা চেয়ার, টেবিল, বিশ্রামের খাট, ব্যবহার করা খড়ম, একটি সাদা পাঞ্জাবি, ইজি চেয়ার, আলনা, গ্লাস, ফুলদানি, প্লেট ও চামচ, মেকআপ করার জন্য টেবিল চেয়ার আয়না ইত্যাদি।
মহানায়ক এই রুমে মেকআপ নেওয়ার পর খড়ম পায় দিয়ে শুটিংয়ে যেতেন। মহানায়ক তার সর্বশেষ ছবি ‘ওগো বধূ সুন্দরী’র মেকআপ নিয়েছিলেন এই মেকআপ রুম বা সাজঘরেই।
Advertisement
১৯২৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর উত্তমকুমার কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার প্রকৃত নাম অরুণকুমার চট্টোপাধ্যায়। চলচ্চিত্রে অভিনয় ছাড়াও তিনি সফলভাবে মঞ্চে অভিনয় করেছেন।
সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে এসে চলচ্চিত্রজগতে প্রতিষ্ঠা পেতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে তাকে। উত্তমকুমারের প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ছিল ‘দৃষ্টিদান’। এই ছবির পরিচালক ছিলেন নিতীন বসু। এর আগে উত্তমকুমার ‘মায়াডোর’ নামে একটি চলচ্চিত্রে কাজ করেছিলেন কিন্তু সেটি মুক্তি পায়নি। ‘বসু পরিবার’ চলচ্চিত্রে তিনি প্রথম দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এরপর সুচিত্রা সেনের বিপরীতে ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ মুক্তি পাবার পরে তিনি চলচ্চিত্রজগতে স্থায়ী আসন লাভ করেন।
উত্তমকুমার অভিনীত পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে অনেকগুলো বাংলা চলচ্চিত্র ব্যবসায়িকভাবে সফল ও প্রশংসিত হয়। সেগুলোর মধ্যে প্রধান কয়েকটি হচ্ছে : ‘হারানো সুর’, ‘পথে হল দেরী’, ‘সপ্তপদী’, ‘চাওয়া পাওয়া’, ‘বিপাশা’, ‘জীবন তৃষ্ণা’ ও ‘সাগরিকা’।
উত্তমকুমার বাংলা চলচ্চিত্রের পাশাপাশি কয়েকটি হিন্দি ছবিতেও অভিনয় করেছেন। তার অভিনীত হিন্দি চলচ্চিত্রের মধ্যে ‘ছোটিসি মুলাকাত’ (১৯৬৭), ‘দেশপ্রেমী’ (১৯৮২) ও ‘মেরা করম মেরা ধরম’ (১৯৮৭) অন্যতম।
Advertisement
উত্তমকুমার পরিচালক হিসেবেও সফল। ‘কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী’ (১৯৮১), ‘বনপলাশীর পদাবলী’ (১৯৭৩) ও ‘শুধু একটি বছর’ (১৯৬৬) ছবির সাফল্য তাই প্রমাণ করে।
১৯৮০ সালের ২৪ জুলাই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
এলএ/এমকেএইচ