বিনোদন

সুশান্তকে খুনের কোনো প্রমাণ পাচ্ছে না গোয়েন্দারা

বলিউড অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতকে খুন করা হয়েছে এমন কোনো তথ্য প্রমাণ পায়নি সিবিআই। বেশ কয়েকদিন টানা তদন্ত শেষে মঙ্গলবার (১ সেপ্টেম্বর) তদন্তকারী দলের তিন অফিসার এই কথাই দাবি করেছেন। তারপর থেকেই সুশান্তের মৃত্যু নিয়ে চাপা উত্তেজনা লক্ষ করা যাচ্ছে অভিনেতার পরিবার ও ভক্তদের মধ্যে।

Advertisement

তাদের প্রত্যাশা ছিলো পুলিশের কাছ থেকে সুশান্তের মৃত্যু রহস্য উদঘাটনের ভার সিবিআইয়ের হাতে গেলে সত্যিটা বেরিয়ে আসবে। প্রমাণ হবে যে সুশান্ত খুন হয়েছেন। কিন্তু সন্দেহভাজন সকলকে জিজ্ঞাসাবাদ, বিভিন্ন আলামত বিশ্লেষণ, সুশান্তের লাইফস্টাইল পর্যালোচনা করে এখন পর্যন্ত এটিকে আত্মহত্যা বলেই মনে করছে সিবিআই। তবে তদন্ত এখনো চলছে।

এক খবরের চ্যানেলে অফিসাররা জানান, এখনই খুনের তদন্ত বন্ধ হচ্ছে না। বরং সেটির পাশাপাশি আত্মহত্যায় প্ররোচনার সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ দিনই আবার অন্য একটি সূত্রে খবর মেলে, সুশান্তের পরিবারের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করতে পারেন রিয়া চক্রবর্তী। তাদের বিরুদ্ধে তদন্তকারী সংস্থা ও সুপ্রিম কোর্টে মিথ্যা বয়ান দেওয়ার অভিযোগও শোনা গেছে।

এ দিন রিয়ার মা-বাবা অর্থাৎ সন্ধ্যা ও ইন্দ্রজিৎ চক্রবর্তীকে সান্তাক্রুজের ডিআরডিও গেস্টহাউসে ডেকে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে সিবিআই। প্রয়াত অভিনেতাকে তারা কতটা চিনতেন, তার পরিবারের সঙ্গেই বা কী রকম আলাপ ছিল চক্রবর্তী-দম্পতির, সুশান্তের আর্থিক বিষয়ে তাদের কোনো মতামত থাকত কি না, এ সবই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের সম্ভাব্য প্রশ্নতালিকায় ছিলো বলে জানা গেছে।

Advertisement

সুশান্তের ওষুধের বিষয়টি জানা গুরুত্বপূ্র্ণ। এক দিকে রিয়ার আইনজীবী সোমবার জানিয়েছেন, অভিনেতার চিকিৎসকেরা যে প্রেসক্রিপশন দিয়েছিলেন তার পরিবর্তে দিদি প্রিয়াঙ্কা সিংয়ের পরামর্শমতো ওষুধ খেতে চাইলে তুমুল ঝগড়া হয় রিয়া ও সুশান্তের মধ্যে। সে কারণেই ৮ জুন বাড়ি ছেড়ে চলে যান রিয়া। কিন্তু সে দাবি সত্যি হলে সুশান্তের পরিবার যে তার মানসিক সমস্যার কথা জানত না, এ দাবি ধোঁপে টেকে না।

অন্য দিকে, সুশান্তের বাবার আইনজীবী বিকাশ সিংয়ের বক্তব্য, ‘তারা জানতেন ছেলের অ্যাংজাইটি সংক্রান্ত সমস্যা ছিল। কিন্তু মানসিক অসুস্থতা রয়েছে তা জানতেন না।’

এ দিকে সংবাদমাধ্যমের একাংশের দাবি, প্রয়াত তারকার প্রাক্তন হাউস ম্যানেজার স্যামুয়েল মিরান্ডা জিজ্ঞাসাবাদ চলাকালীন জানিয়েছেন, সুশান্তকে চাঙ্গা করতে ফ্ল্যাটে প্রায়ই পার্টি রাখতেন রিয়া। কিন্তু বহু সময়েই তাতে যোগ দিতেন না অভিনেতা। দিনের পর দিন অঝোরে কান্নাকাটি করতেন।

মঙ্গলবার অভিনেতার গাড়িচালককেও জিজ্ঞাসাবাদ করে সিবিআই। আবার তার আর্থিক হেরাফেরি সংক্রান্ত মামলায় গোয়ার হোটেল ব্যবসায়ী ও মাদক-কাণ্ডে জড়িত সন্দেহভাজন গৌরব আরিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। তাৎপর্যপূর্ণভাবে এ দিনই মাদক-সরবরাহকারী সন্দেহে আরও দু’জনকে গ্রেপ্তার করে নার্কোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরো। সূত্রের খবর, তাদের এক জন বলিউড-যোগের কথা মেনেও নিয়েছেন।

Advertisement

সুশান্তের প্রাক্তন ম্যানেজার শ্রুতি মোদীর আইনজীবী অবশ্য এ ব্যাপারে ইমতিয়াজ খাতরি নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে সন্দেহের আঙুল তোলেন। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি জটিল। আপাতত সুশান্তের অটপ্সি ও ময়নাতদন্ত রিপোর্ট নিয়ে এইমস-এর ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের মতামতদের দিকে তাকিয়ে সিবিআই। কারণ অপরাধের মুহূর্ত পুনর্নির্মাণ, সংগৃহীত বাকি প্রমাণ বিশ্লেষণ ও সন্দেহভাজনদের কড়া জিজ্ঞাসাবাদের পরও এমন কিছু মেলেনি যাতে মনে হয় সুশান্তকে খুন করা হয়েছে।

এদিকে অপরাধ প্রমাণের আগেই রিয়াকে যেভাবে খলনায়িকা বানানো হয়েছে এই ঘটনায় তা নিয়ে সরব হয়েছেন অনেক তারকা। তারা সবাইকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে রিয়া ও তার পরিবারকে অপরাধী প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত শান্ত থাকার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।

এলএ/পিআর