মনিরুল ইসলাম
Advertisement
করোনার প্রথমদিকে, লকডাউনের সময় কাজ হারিয়ে দিশেহারা হয়ে গিয়েছিল অসংখ্য মানুষ। বেশি বিপদে পড়েছিল শারীরিকভাবে সীমাবদ্ধ মানুষ। যারা স্বাভাবিক অবস্থায়ই বেশি দুর্ভোগ পোহায়। এরকম সময়ে রূপগঞ্জ থানার মানুষের কাছে আশীর্বাদ হয়ে এসেছিলেন এমন একজন, যিনি নিজেও ছোটবেলায় হারিয়েছিলেন দৃষ্টিশক্তি। তিনি অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম।
ছোটবেলায় টাইফয়েডে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েও থেমে যাননি জহিরুল। লেখাপড়া করে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন অন্তরে পুষে রেখেছিলেন। বাবা ছিলেন পাটকলের কর্মী। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে দৃষ্টিশক্তি হারানো ছেলেদের পড়ালেখার উপযুক্ত ব্যবস্থা ছিল না। তাই জহিরুলকে পড়তে পাঠিয়েছিলেন জামালপুর জেলার সিংহজানী স্কুলে।
স্কুলে থাকাকালীন বিতর্কসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন। ২০০৩ সালে এসএসসি পাস করে ভর্তি হন নারায়ণগঞ্জের সরকারি আদমজী এম ডব্লিউ কলেজে। সেখান থেকে ২০০৫ সালে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে। সেখান থেকেই এলএলবি ও এলএলএম পাস করে নারায়ণগঞ্জ বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হয়ে আইন ব্যবসা শুরু করেন।
Advertisement
কম সময়েই আইন ব্যবসায় সুনাম অর্জন করেন তিনি। চোখের আলো না থাকা তার এ পর্যন্ত আসায় কোন বাধা তৈরি করতে পারেনি। কিন্তু অন্তরের আলোয় তিনি ঠিকই দেখেছেন অন্য সব শারীরিক সীমাবদ্ধ মানুষের কষ্ট ও সংগ্রাম। তাই স্বার্থপরের মত চুপ করে বসে থাকতে পারেননি। প্রতিষ্ঠা করেছেন রূপগঞ্জ প্রতিবন্ধী উন্নয়ন পরিষদ, যার বর্তমান সভাপতি তিনি।
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সংগঠনটি রূপগঞ্জের প্রতিবন্ধীদের পাশে দাঁড়িয়েছে। বিপদ-আপদে যেমন ত্রাণ দিয়েছে; তেমনই কেউ নির্যাতিত হলে তার প্রতিকার করেছে। বেকারদের স্বাবলম্বী করার ব্যবস্থা করেছে। বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করেছে। বিবাহযোগ্য মেয়েদের বিয়ের খরচ জুগিয়েছে।
সবশেষ করোনা মহামারীর সময়ে জহিরুল ইসলাম ও তার সংগঠনের উদ্যোগে রূপগঞ্জের ৮শ’র বেশি প্রতিবন্ধীর পরিবারকে ত্রাণ দেওয়া হয়েছে। লকডাউনের অনিশ্চিত সময়ে এ কার্যক্রম ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই ত্রাণ সহায়তা এখনো চলমান।
ব্যক্তিজীবনে জহিরুল ইসলাম বিবাহিত এবং দুই সন্তানের জনক। জহিরুল ইসলাম শারীরিক সীমাবদ্ধতাকে জয় করেছেন। একজন পিতা, স্বামী, আইনজীবী ও সমাজসেবক হিসেবে সফলতার সাথে নিজের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তিনি আমাদের সবার জন্য অনুপ্রেরণার উৎস।
Advertisement
এসইউ/এএ/এমকেএইচ