কুয়েতে মা ও বোনকে নির্মমভাবে হত্যার বিচার দাবি করেছেন ঢাকার ধামরাই পৌর এলাকার দক্ষিণ তালতলার বাসিন্দা মো. এজাজ আহমেদ। এটাকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড উল্লেখ করে দ্রুত তাদের মরদেহগুলো দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন তিনি। এ ঘটনায় কুয়েত পুলিশের পক্ষ থেকে সেখানে একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে।
Advertisement
নিহতরা হলেন- ঢাকার ধামরাইয়ের পৌর এলাকার দক্ষিণ তালতলার বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা মৃত আব্দুল মান্নান শিকদারের স্ত্রী মমতা বেগম (৫৬) ও তার মেয়ে স্বর্ণালতা (৩২)।
নিহত মমতাজ বেগমের একমাত্র ছেলে এজাজ আহমেদ বলেন, প্রতিদিনই মায়ের সাথে আমরা ২-৩ ঘণ্টা কথা বলতাম। আমার মা দেশে আসার জন্য সবার জন্য কেনাকাটা করে প্যাকিং করে রেখেছিলেন। কিন্তু করোনার কারণে আসতে পারেননি। গত মঙ্গলবার দুপুরেও মায়ের সাথে আমার অনেকক্ষণ কথা হয়েছে। সন্ধ্যার পর থেকেই মা ও বোনের মোবাইল বন্ধ পেয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ি। এ সময় আমি কুয়েতে থাকা অন্যান্য স্বজন ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের সাথে কথা বলে আমার মায়ের বিষয়ে খোঁজ নেয়ার চেষ্টা করেন। সর্বশেষ শুক্রবার (২৮) সন্ধ্যায় দুর্গন্ধ বের হলে সেখানকার পুলিশ ঘরের তালা ভেঙে মা ও বোনের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে।
তাদের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে এজাজ বলেন, এখনও মা-বোনের মরদেহ পাইনি। তাদের জানাজাও হয়নি। বর্তমানে আমি নিজের জীবন নিয়েও শঙ্কায় আছি। একে একে বাবা-মা, বড় ভাই এবং ছোট বোনও চলে যাওয়ায় আমি এতিম হয়ে গেলাম। কেউ যদি শত্রুতা করে আমার মা ও বোনকে হত্যা করে থাকে হয়তো পরবর্তীতে আমার কোনো ক্ষতি করতে পারে হত্যাকারীরা। ভয়ে আমি ও আমার পরিবারের সদস্যরা বাজারে পর্যন্ত যেতে পারছি না। সবমিলিয়ে আমরা অনিশ্চয়তা এবং নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি।
Advertisement
তিনি আরও বলেন, আমার মায়ের অনেক স্বর্ণালঙ্কার ছিল। এছাড়া দেশে পাঠানোর জন্য কয়েকদিন আগে ১০ লাখ টাকা উঠিয়েছিলেন। যারা আমার মাকে হত্যা করেছে তারা ব্যাংক থেকে টাকা উঠানোর পর থেকে আমার মায়ের পিছু নিয়েছিল এবং টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুটপাটের জন্য মা ও বোনকে এভাবে খুন হতে হয়েছে।
নিহত মমতা বেগমের বড় ভাই শামসুল হক জানান, হত্যাকারীরা আমার বোন ও ভাগনির মৃত্যু নিশ্চিত করেই ঘরে তালা লাগিয়ে চলে যায়। ঘরের ভেতরে সবকিছু এলোমেলো করা ছিল এবং শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাত ছিল বলে জানিয়েছেন সেখানকার রাষ্ট্রদূত। খুব দ্রুত সেখানকার পুলিশি কার্যক্রম শেষ করে মরদেহ দেশে পাঠানোরও আশ্বাস তিনি দিয়েছেন।
ধামরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, আমরা নিহতের স্বাজনদের সাথে তাদের বাসায় গিয়ে কথা বলেছি। যদি তারা কোনো ধরনের শঙ্কায় থাকে তাহলে বিষয়টি আমাদেরকে অবহিত করলে তাদের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
গত শুক্রবার কুয়েতের আরব টাইমস পত্রিকার এক প্রতিবেদনে দেশটির জেলের আল সুখা এলাকার নিজ বাসা থেকে প্রবাসী মা ও মেয়ের রক্তাক্ত দরদেহ উদ্ধার করে কুয়েত পুলিশ। এ ঘটনায় সেখানকার পুলিশ একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে।
Advertisement
আল-মামুন/এমএসএইচ