রাজনৈতিক পরিবেশ স্থিতিশীল থাকলেও দেশে ব্যবসার পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা কাটেনি ব্যবসায়ীদের। এ কারণে বিনিয়োগকারীরা ব্যাংক ঋণ নিতে আগ্রহী হচ্ছেন না। ফলে ব্যাংকগুলোর যাচ্ছে দূরদিন। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো এমন তথ্য জানিয়েছে। সূত্রের সত্যতা মিলেছে, সবশেষ বিশ্ব ব্যাংকের ডুয়িং বিজনেস জরিপেও। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র বলছে, গত বছরের অাগস্ট থেকে এ বছরের একই সময় পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে কমেছে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ। সামগ্রিক ঋণ চাহিদায় চলছে খড়া। বিশ্ব ব্যাংকের সর্বশেষ প্রকাশিত ডুয়িং বিজনেস সংক্রান্ত এক প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশে ব্যবসার পরিবেশ আগের তুলনায় খারাপ হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ১২ দশমিক ৬৯ শতাংশ। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থ বছরের প্রথমার্ধের জন্য ঋণ প্রবাহের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সাড়ে ১৫ শতাংশ। তবে জুন ও জুলাইয়ে ঋণ প্রবৃদ্ধি বেশি ছিল। জুন মাসে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ আর জুলাইয়ে ছিল ১২ দশমিক ৯৬ শতাংশ।অাগস্টের শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৭৮ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬৫ হাজার ৯৩ কোটি টাকা বেশি।ঋণ চাহিদায় এমন অবস্থার জন্য ব্যাংকার ও ব্যবসায়ীরা নানা বাঁধার কথা বললেও নতুন কারখানায় গ্যাস, বিদ্যুৎ সংযোগ না পাওয়া এবং ঋণের চড়া সুদ হারকেই প্রধান বাঁধা হিসেবে দেখাচ্ছেন। এর মধ্যে সামনে প্রকটভাবে এসেছে, সরকারের গ্যাস পরিস্থিতি নিয়ে দেয়া বক্তব্য। সরকারের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলছেন, আগামী ১৫ বছর পর দেশে গ্যাসের মজুদ কমতে থাকবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ জাগো নিউজকে বলেন, ব্যবসায়ীরা কেন দেশে বিনিয়োগ করবে? গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট কাটছে না।সরকার বলছে ১৫ বছর পর দেশে গ্যাসের মজুদ কমতে থাকবে, এমন পরিস্থিতিতে আমরা কিভাবে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে যাবো -প্রশ্ন রাখেন তিনি। অবশ্য বিদেশ থেকে ঋণ নেওয়ার প্রবণতা বাড়ার পাশাপাশি বড় বড় আর্থিক কেলেঙ্কারির কারণে ঋণ বিতরণে ব্যাংকগুলো এখন আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় বেশি সতর্ক।জানতে চাইলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি)’র সভাপতি আলী রেজা ইফতেখার জাগো নিউজকে বলেন, বর্তমানে মোট ঋণের চাহিদা কম। যা চাহিদা আছে সেগুলো চলমান শিল্প কারখানার সম্প্রসারণের জন্য। নতুন শিল্প কারখানা স্থাপনের জন্য ঋণের চাহিদা নেই বললেই চলে। তিনি আরও বলেন, কারণ হচ্ছে কারখানাগুলো গ্যাস সংযোগ না পাওয়ায় চালু হচ্ছে না। যে কারণে অন্যরাও নতুন প্রকল্পে যেতে পারছেন না। আবার ডিমান্ড নোট ইস্যু হয়েছে এমন অনেক কারখানায় ব্যাংক ঋণ দিয়েছে, কিন্তু সংযোগ না পাওয়ায় ঋণের টাকা আটকে আছে।তথ্য মতে, বর্তমানে বেসরকারি খাতে সাড়ে চার বিলিয়ন ডলারের বিদেশি ঋণ স্থিতি আছে।এদিকে, এফবিসিসিআই সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেন, উচ্চ সুদহারের কারণে ব্যাংক থেকে ঋণ বিতরণ কমে যাচ্ছে। কারণ ব্যবসায়ী ঋণ নিয়ে ব্যবসা করা কঠিন হয়ে পড়েছে।বিশ্ব ব্যাংকের সর্বশেষ জরিপ বলছে, ব্যবসার পরিদেশে দু’ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ। ব্যবসার পরিবেশে ১০ সূচকে এই পতন ঘটেছে। এসএ/এসএইচএস/আরএস/এমএস
Advertisement