করোনাকালে রাজধানীসহ দেশব্যাপী নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের ঊর্ধ্বমুখী দামে লাগাম টানা যাচ্ছে না। এটি সাধারণ মানুষের উপর ‘মড়ার উপর খাঁড়ার’ বলছে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম।
Advertisement
২৮ আগস্ট গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এসব জানিয়েছে সংগঠনটি। ক্যাব বলেছে, প্রশাসনের দায়সারা তদারকির কারণে ব্যবসায়ীরা বারবার বিনা কারণে খাদ্য-পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে জনগণের পকেট কাটছে। সরকারের পক্ষ থেকে বাজার তদারকি ও চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য-পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ ও সরবরাহের কথা বলা হলেও বাজারে লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বাড়ছে।
এ অবস্থায় খোলা খাদ্য বিভাগের আওতায় বাজারে ওএমএস চালু, টিসিবির মাধ্যমে খাদ্য-পণ্য বিক্রি বাড়ানো এবং প্রশাসনের সমন্বিত বাজার তদারকি জোরদারের দাবি জানিয়েছেন ক্যাব চট্টগ্রাম।
ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, ক্যাব মহানগরের সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, যুগ্ম সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম ও ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি আলহাজ আবদুল মান্নান দাবি জানিয়েছেন।
Advertisement
ক্যাব নেতারা বলেন, ইতোপূর্বে চাল, ডাল, পেঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের বাজার অস্থির হলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসন ওই সেক্টরের ব্যবসায়ী, ভোক্তা ও সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরকে নিয়ে পরামর্শ সভা আয়োজন করে করণীয় নির্ধারণ করতেন। এখন সে ধারা চলমান নেই। বাজার নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি ব্যবসায়ীদের হাতে।
প্রশাসন দায়সারা দু’একটি অভিযান পরিচালনা করেই ক্ষান্ত এবং সরকারকে অবহিত করছেন ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান রয়েছে। প্রকৃত অর্থে এই খণ্ডকালীন অভিযান বাজারে কোনো প্রভাব ফেলার পরিবর্তে বাজারকে আরও উস্কে দিচ্ছে।
বিবৃতিতে নেতারা আরও বলেন, চালের মূল্য বাড়লে খাদ্য বিভাগ খোলা বাজারে চাল বিক্রি (ওএমএস), ট্রাক সেল, টিসিবি ডিলার ও ট্রাক সেলের মাধ্যমে খাদ্য-ভোগ্যপণ্যের বিক্রি জোরদার করে থাকেন। কিন্তু বিগত বেশ কয়েক মাস ধরেই সে কর্মকাণ্ড অনেকটাই স্তবির। ফলে সাধারণ ও শ্রমজীবী মানুষ একদিকে কর্মহীন, আয়-রোজগার হারিয়ে দিশেহারা।
আর ব্যবসায়ীরা খাদ্য-পণ্যের দাম বাড়িয়ে বাড়তি মুনাফা করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। আবার গণপরিবহন, করোনারোধে জীবাণুনাশক সুরক্ষা সামগ্রী, চিকিৎসা সেবা, টেস্ট ও ওষুধ ক্রয়ে বাড়তি দামে জনগণের এমনিতে জীবনজীবিকা নির্বাহে নাভিশ্বাস। সেখানে নিত্য-প্রয়োজনীয় খাদ্য-ভোগ্যপণ্যের বাড়তি মূল্য এখন ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হিসাবে আর্বিভূত হয়েছে। জনভোগান্তি লাঘবে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও প্রশাসনের নির্লিপ্ততা জনমনে ক্ষোভ সঞ্চার করছে।
Advertisement
ক্ষোভ প্রকাশ করে ক্যাব নেতারা বলেন, বিগত এক মাস ধরে খুচরা বাজারে চাল, ডাল, ভোজ্যতেল (সয়াবিন ও পাম অয়েল), পেঁয়াজ, আলু, আটা, ময়দা, চিনি, ডিম, আঁদা, জিরা, হলুদ, এলাচ, দারুচিনি, মুরগির মাংস (দেশি ও ব্রয়লার), খাসির মাংস ও শিশুখাদ্যের মধ্যে গুঁড়োদুধের দাম বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। এর পাশাপাশি সবধরনের শাকসবজির দামও চড়া।
বাড়তি দামে পণ্য কিনতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ভোক্তারা। ব্যবসায়ীরা বারবার বলছেন সারাদেশে চালসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ ও সরবরাহ আছে। আর প্রশাসন বলছেন চালের মূল্য নিয়ে কারসাজি করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। যে কোনো পণ্যের দাম নিয়ে অনিয়ম করলে কঠোর শাস্তির আওতায় আনবে। বক্তব্যগুলির পক্ষে বাজারে সত্যতা পাওয়া যাচ্ছে না।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, স্বর্ণজাতের চাল বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৪৮ টাকা। যা এক মাস আগে ছিল ৪৪-৪৫ টাকা। পাইজাম চাল বিক্রি হয়েছে ৪৮-৫৪ টাকা। যা এক মাস আগে ছিল ৪৪-৫১ টাকা। মিনিকেট ও নাজিরশাইল মানভেদে বিক্রি হয়েছে ৫৪-৬৪ টাকা। যা এক মাস আগে ছিল ৫০-৬০ টাকা। একটু ভালো মানের নাজিরশাইল বিক্রি হয়েছে ৬২ টাকা।
মাসের ব্যবধানে কেজিপ্রতি প্যাকেটজাত আটায় ৩টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছে ৩৩-৩৮। প্যাকেটজাত ময়দায় কেজিতে ৩ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছে ৪৪-৪৮ টাকা কেজি। বোতলজাত প্রতিলিটার সয়াবিন বিক্রি হয়েছে ১১০ টাকা। যা এক মাস আগে ছিল ১০৫ টাকা। খোলা সয়াবিন লিটারে ৩ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছে ৮২-৮৬ টাকা। লিটারে ৫ টাকা বেড়ে পাম অয়েল (খোলা) বিক্রি হয়েছে ৭০-৭৩ টাকা। পেঁয়াজ (আমদানি) বিক্রি হয়েছে ৩০-৩৫ টাকা। যা এক মাস আগে ছিল ২৫-৩০ টাকা।
চিনি বিক্রি হয়েছে ৫৮ টাকা। যা এক মাস আগে ছিল ৫৫ টাকা। আলু বিক্রি হয়েছে ৩৪-৩৬ টাকা। যা এক মাস আগে ছিল ৩০-৩৪ টাকা। হলুদ মাসের ব্যবধানে ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছে ১৭০-২২০ টাকা। কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে দেশি আদা বিক্রি হয়েছে ১২০-১৫০ টাকা। মাসের ব্যবধানে প্রতি কেজি জিরা সর্বোচ্চ ৪০ টাকা বেড়ে মানভেদে বিক্রি হয়েছে ৩৪০-৪১০ টাকা।
প্রতিকেজি মুগডাল ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছে ১১০-১৩০ টাকা। আর মসুরের ডালের দাম কমলেও এখনও চড়া মূল্যে ১০০-১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দারুচিনি ২০ টাকা বেড়ে মানভেদে বিক্রি হয়েছে ৩৮০-৪৮০ টাকা। এলাচ কেজি ২০০ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৩৫০০ টাকা। ফার্মের ডিম প্রতি হালি বিক্রি হয়েছে ৩৫-৩৭ টাকা। যা এক মাস আগে ছিল ৩৪-৩৫ টাকা।
মাসের ব্যবধানে কেজিতে ৫০ টাকা বেড়ে দেশি মুরগি বিক্রি হয়েছে ৪৫০-৫০০ টাকা। কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকা। আর কেজিতে মাসের ব্যবধানে ১০০ টাকা বেড়ে খাসির মাংস বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৯০০ টাকা।
এসআই/এমআরএম/জেআইএম