বিনিয়োগ, বাণিজ্য ও বাংলাদেশি কর্মীদের কর্মসংস্থানের বড় অংশীদার মালয়েশিয়া। দেশটিতে করোনা-উত্তর বিনিয়োগ, বাণিজ্য এবং কৌশল নির্ধারণ করছে মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন।
Advertisement
১৯৭২ সালের ৩১ জানুয়ারি থেকে উভয় দেশের মধ্যে স্থাপিত কূটনৈতিক সম্পর্ক অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ করে শ্রম, শিক্ষা, সামরিক, সাংস্কৃতিক এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সম্পর্কের ভিত্তি শক্তিশালী হয়েছে। আসিয়ানের প্রাণকেন্দ্র মালয়েশিয়া বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পণ্য উৎপাদনকারী ও রফতানিকারক দেশ মালয়েশিয়া।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বছরব্যাপী বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ হাইকমিশন।
২০১৮-১৯ সালে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় আমদানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭৭.২৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যা ২০১১-১২ সালে ছিল মাত্র ৫৬.১১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্রধান আমদানি পণ্য হলো তৈরি পোশাক, শাক-সবজি, সিরিয়াল, জুস, মাছ, চামড়ার পণ্য, ওষুধ, প্লাস্টিকস, চা, মসলা ইত্যাদি।
Advertisement
মালয়েশিয়া বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম বিনিয়োগ অংশীদার যার পরিমাণ ৮১৫.৯৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশে শ্রম সস্তা হওয়ায় মালয়েশিয়ান উৎপাদক ও বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। বাংলাদেশে থাকা পুরাতন কর্মীদের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশেই পণ্য উৎপাদনের সুযোগ রয়েছে। অপরদিকে বাণিজ্যিক বিশেষ সুবিধা যেমন- বাংলাদেশে উৎপাদিত পণ্য ইউরোপসহ বিভিন্ন বাজারে ডিউটি ফ্রি এবং কোটা ফ্রি রফতানির সুবিধা আছে।
এ বিষয়ে হাইকমিশনার মহ শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘বিনিয়োগ এবং বাণিজ্যের ক্ষেত্রে মালয়েশিয়া বাংলাদেশের বড় অংশীদার হয়েছে এবং ক্রমশঃ বৃদ্ধি পেয়েছে। শেখ হাসিনা সরকার বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের জন্য নানা সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে, যেমন- স্পেশাল ইকোনমিক জোনে বিনিয়োগ, বিদ্যুতের ঘাটতি পূরণ, তথ্যপ্রযুক্তির প্রাপ্যতা, শ্রমিকের প্রাপ্যতা, অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের উন্নয়ন, বন্দরের সক্ষমতা উন্নয়ন ও নতুন বন্দর নির্মাণ ইত্যাদি।
প্রধানমন্ত্রীর বুদ্ধিদীপ্ত দৃঢ় নেতৃত্ব বিশ্বে বাংলাদেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে- যা বিশ্বের বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জন করেছে। প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় আমাদের কূটনৈতিক সামর্থের ফলে বাণিজ্য ক্ষেত্রে অনেক অর্জন হয়েছে।
হাইকমিশনার বলেন, ‘আমি দায়িত্ব গ্রহণকালে মালয়েশিয়ায় ১৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাণিজ্য ছিল, যা এখন ২৭৭.২৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে এবং বাংলাদেশে মালয়েশিয়ান বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতেও সক্ষম হয়েছি। রিহায়ারিং এবং নবনিয়োগ মিলে ৬ লক্ষাধীক লোকের কর্মসংস্থান করতে পেরেছি এবং করোনা মহামারির সময়েও চাকরি হারিয়ে কোনো কর্মী দেশে ফেরত যায়নি, যা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ’।
Advertisement
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীরা বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানে উচ্চতর পদেও বাংলাদেশি নাগরিক নিয়োজিত আছেন। মালয়েশিয়া প্রবাসী কর্মীরা আয়ের অধিকাংশই দেশে পরিবারের কাছে পাঠায় যা দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে যোগ হচ্ছে এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তথা রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২০০৫-০৬ সাল থেকে দীর্ঘ সময় মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ থেকে লোক নিয়োগ বন্ধ থাকায় বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এই সেক্টরের অবদান কমে গিয়েছিল। ২০১০-১১ সালে জি টু জি পদ্ধতিতে একটিমাত্র সেক্টরে অল্প সংখ্যক লোক নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয়েছিল। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মালয়েশিয়া সফর করলে এবং নিরলস কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফলে মালয়েশিয়া বাংলাদেশকে লেবার সোর্স কান্ট্রির স্বীকৃতি দেয়।
জি টু জি প্লাস পদ্ধতিতে সকল সেক্টরে লোক নিয়োগ শুরু করে। এ পদ্ধতিতে মাত্র ১ বছরে মালয়েশিয়ায় তিন লক্ষাধিক লোকের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা হয়েছে। পাশাপাশি রিহায়ারিং প্রক্রিয়ায় তিন লক্ষাধিক লোক বৈধতাসহ নিয়োগ লাভ করে, অন্যথায় এ সকল কর্মীদের দেশে ফিরে বেকার হয়ে যেত। এভাবে ছয় লক্ষাধিক লোকের নবনিয়োগ লাভ বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য সুফল বয়ে এনেছে।
অপরদিকে কনস্যুলার সেবা ও পাসপোর্ট নবায়নের মাধ্যমেও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে আয় যুক্ত হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতিতে লোক সমাগমের কঠোর নিয়ম-কানুনের মধ্যে বিশেষ ব্যবস্থায় পাসপোর্ট ও কনস্যুলার সেবা চালু করে এ পর্যন্ত ২৭ হাজারের অধিক সেবা প্রদান করা হয়েছে।
করোনা পরবর্তী কর্মী নিয়োগ এবং বাংলাদেশের বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে কঠোর পরিশ্রম করতে হাইকমিশন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ জানান মিশনের সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি নাগরিকদের কাছে দেশি পণ্য অত্যন্ত আকর্ষণীয় হওয়ায় বিভিন্ন প্যাকেটজাত খাদ্য পণ্য, কাপড়, মাছ এবং সবজির আমদানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ মালয়েশিয়া থেকে বিভিন্ন পণ্যের পাশাপাশি জ্বালানি তেল ও ভোজ্য তেল আমদানি করায় বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে।
এ বিষয়ে হাইকমিশনের কমার্সিয়াল কাউন্সেলর মো. রাজিবুল আহসান জানিয়েছেন, ‘মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালামপুরসহ বিভিন্ন প্রাদেশিক রাজধানীতে ‘শোকেস বাংলাদেশ’ এবং ‘ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশ’ প্রোগ্রাম করে বাংলাদেশে বিনিয়োগ এবং বাংলাদেশে উৎপাদিত পণ্যের গুণ, মান এবং মূল্য সম্পর্কে তুলে ধরা হয়েছে, ফলে মালয়েশিয়ান বিনিয়োগকারীরা যেমন আকৃষ্ট হয়েছেন তেমনি মানসম্মত পণ্য আমদানির পরিমাণ বেড়ে গেছে’।এ ছাড়া দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য উভয় দেশের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
এমআরএম/এমকেএইচ